হাওড়া, 1 ডিসেম্বর : আরতি কটন মিল সম্পূর্ণরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ হাওড়ায় ৷ আগামী দিনে একাধিক কর্মসূচি নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি ৷ এদিকে এই কারখানা পুরোপুরি চালু করার ব্যাপারে তদ্বির করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী ৷
দেশে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত এনটিসি-র কটন মিলগুলি বর্তমানে ধুঁকছে ৷ কিছু মিল চালু থাকলেও শ্রমিকরা পুরো বেতন পান না ৷ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ৷ তেমন একটি জুটমিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় অবস্থিত 'আরতি কটন মিল' (Arati Cotton Mills ) ৷ অবিলম্বে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরুর পাশাপাশি প্রাপ্য বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার কটন মিলের গেটের সামনে হাওড়া জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি শ্রাবন্তী সিংয়ের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয় ৷ উপস্থিত ছিলেন আইএনটিইউসি-র হাওড়া জেলার শ্রমিক নেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় (Howah Arati Cotton Mill labour demonstration) ৷
পশ্চিমবঙ্গের আরতি কটন মিল সমেত ন্যাশনাল টেক্সটাইল কর্পোরেশনের (National Textile Corporation, NTC) অধীনে দেশে মোট 23টি কটন মিল আছে । এর মধ্যে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের 22 টি কটন মিল দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে । হাওড়ার দাসনগরে আরতি কটন মিল বন্ধ না হলেও কার্যত মৃতপ্রায় । বর্তমানে 448 জন শ্রমিক কাজ করেন, হাতেগোনা কিছু শ্রমিক স্থায়ী ৷ আর বেশিরভাগ শ্রমিক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন ।
আরও পড়ুন : হাওড়ার কটন মিল খোলার দাবিতে স্মৃতি ইরানিকে চিঠি অধীরের
শ্রমিক নেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগেও তাঁরা এ নিয়ে বেশকিছু কর্মসূচি করেছেন, আগামী দিনেও তা চলবে ৷ তিনি বলেন, "2020-তে একমাত্র অধীর চৌধুরীর কৃতিত্বেই আরতি কটন মিল খুলেছিল ৷ সেই সময় কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani) ৷ তাঁকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা ৷" তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আইএনটিইউসি নেতা জানান মিল খুললেও উৎপাদন চালু হয়নি ৷ তখন মাত্র 3টি মেশিন চালু হলেও এখন মাত্র 1টি মেশিন চলছে ৷ এমনকি অন্য রাজ্য়গুলিতেও প্রতিটি মিল বন্ধ, তাই কোথাও উৎপাদন হচ্ছে না ৷
মিলের এই সমস্যা নিয়ে ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর শরাণপন্ন হন তাঁরা ৷ এই প্রসঙ্গে মানস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আগে শুধু আরতি মিল ছিল ৷ এখন এর সঙ্গে আরও 22টি মিল একসঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ৷" তিনি জানান কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বিষয়টি শুনে 25 অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আরতি কটন মিল-সহ আরও 22 টি মিল অবিলম্বে চালুর আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কংগ্রেস নেতা 27 নভেম্বর কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকেও চিঠি দেন ।
প্রধানমন্ত্রী লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে আশ্বস্ত করেছেন, চলতি শীতকালীন সংসদীয় অধিবেশনের মধ্যে কোনও একটি দিনে একটি বিশেষ বৈঠকে আরতি কটন মিল-সহ বাকি মিলগুলি খোলার ব্যবস্থা নেবেন, জানান আইএনটিইউসি নেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : আরতি কটন মিল অবিলম্বে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ
জানা গিয়েছে, আন্দোলন জোরদার করতে 'সেভ এনটিসি' (Save NTC) শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে 6 ডিসেম্বর দিল্লি পৌঁছে সব শ্রমিক সংগঠনগুলি একসঙ্গে বৈঠক করবে ৷ সেখানে কেরালা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পণ্ডিচেরি, কর্নাটক-সহ মোট 9টি রাজ্যের মিলের শ্রমিক সংগঠন অংশ নেবে ৷ এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা মানস বলেন, "দিল্লিতে প্রত্যেক শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে একটি সর্বভারতীয় স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে ৷ 7 তারিখ প্রতিটি সাংসদ, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা, কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে ৷"
কটন মিল খোলায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর অবদান নিয়ে হাওড়ার মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি শ্রাবন্তী সিং বলেন, "অধীর চৌধুরী বরাবরই শ্রমিক দরদী ৷ তাই আমরা ওনার কাছে বারে বারে গিয়েছি ৷ উনি ব্যক্তিগত ভাবে সব দিক দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷" তবে এই 'সেভ এনটিসি' (Save NTC) আন্দোলন নিয়ে যতদূর যেতে হয়, তাঁরা যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন ৷ "শ্রমিকের অধিকার আমাদের অঙ্গীকার", বলেন মহিলা কংগ্রেস সভাপতি ৷
আরও পড়ুন : Rishra Jute Mill Chaos : কাজ না পেয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, রিষড়ার জুট মিলে ভাঙচুর