হাওড়া, 14 এপ্রিল: নববর্ষের প্রথম দিন লক্ষ্মী-গণেশের পুজো দিয়ে খোলা হয় সারাবছরের বিকিকিনির হিসেবের নতুন খাতা ৷ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রথা ৷ কিন্তু আধুনিকতার প্রভাব পড়েছে এই লাল রঙের মলাট দেওয়া খাতাতেও (Halkhata Ceremony Crisis) ৷ কম্পিউটারের যুগে এখন খাতায় নয়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এখন হিসেব নিকেশ গচ্ছিত রাখছেন হার্ডডিস্কে ৷ তাই বিক্রি কমেছে হালখাতার ৷
নববর্ষ মানেই হালখাতা, পঞ্জিকা, মিষ্টিমুখ আর নতুন জামার গন্ধ। বঙ্গের ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি আর্থিক বছরের সূূচনা বটে । কম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা ৷ কাল পয়লা বৈশাখ ৷ অথচ আগের দিনেও মন্দা হালখাতার বাজারে । আগে একেকজন ব্যবসায়ী যেখানে লেজার, খতিয়ান, সপ্তাহের খাতা, মাসের খাতা, জাবদা মোটা খাতা ও কর্মচারীদের মাস মাহিনার হিসাব রাখার খাতা কিনত। এখন সেখানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পাতলা খাতা কিনে হালখাতা সেরে ফেলছেন বলেই আক্ষেপ হালখাতা বিক্রির দোকানিদের। সেই চিত্রই দেখা গেল হাওড়ার কালিবাবুর বাজারের সামনের হালখাতার দোকানে। জাবদা বিভিন্ন ধরণের খাতা দোকানে থাকলেও ক্রেতারা কিনছেন একদম পাতলা খাতা । ওই দিয়েই হালখাতার নিয়মরক্ষা করে ব্যবসা চালাবেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন: Bengali Nababarsha : নববর্ষের সেকাল এবং একাল, কেমন ছিল ইতিহাসের পাতায় লেখা দিনগুলি
হালখাতা বিক্রেতা অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এখন হালখাতার হাল খারাপ হয়ে গিয়েছে। আগে একজন ক্রেতাকে কম করে 6 থেকে 7টি খাতা কিনতে হত । একটাতে সে তাঁর সাপ্তাহিক লেনদেনের হিসাব রাখত । আর একটাতে মাসিক লেনদেন করার হিসাব থাকত । দোকানে ও ব্যবসার কর্মচারীদের উপস্থিতি ও পারিশ্রমিকের হিসাব রাখার জন্য বড় মোটা জাবদা খাতা লাগত। এখনতো দোকানে এসে পাতলা একটা খাতা কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছে । আগে লেজার খতিয়ান-সহ অনেক খাতা বিক্রি হত । এখন শুধু পুজো করার জন্যই পাতলা খাতা হলেই কাজ চলে যাচ্ছে তাঁদের। আগে সব কাজ কম্পিউটারে হয়ে খাতার চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন : New Song Poila Sobar Thak : নববর্ষে নতুন গান নিয়ে হাজির রূপঙ্কর-লোপামুদ্রা-শ্রীকান্তরা
পাশাপাশি হালখাতার জন্য খাতা কিনতে হাওড়ার মাজু এলাকা থেকে আসা দীপঙ্কর গুছাইত জানান, আজকে দুটি খাতা কিনেছেন তিনি। আগে প্রয়োজন থাকলেও এখন একটা খাতাতেই কাজ মিটে যায়। এখন মোবাইল কম্পিউটারে হিসাব রাখার কাজ চলছে তাই খাতার চল কমে যাচ্ছে । অপর এক ক্রেতা নীলমণি চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, এখন শুধু হালখাতা পুজোর জন্যই খাতা কেনেন। আগে লেজার-সহ অনেক খাতা লাগতো। পুজো করতেই হবে তাই একটা খাতাতেই হয়ে যায়। সমস্ত হিসাব কম্পিউটারে করে নেন। তবু কিছু খুচরো হিসাবের জন্য একটা খাতা রাখা থাকে ৷ এভাবে চাহিদা কমতে থাকার ফলে অস্তিত্ব সংকটে হালখাতা । ফলত খাতা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত । বাঙালি ব্যবসায়ীদের পয়লা বৈশাখ মানেই হালখাতা । বর্তমানে পুজোতে নিয়মরক্ষার জন্য হালখাতা কেনা হচ্ছে । স্বভাবতই ডিজিটাল লেনদেনের দাপটে তাহলে কি আসতে আসতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ? সেই কথাই ভাবাচ্ছে এখন হালখাতা বিক্রির ব্যবসায়ীদের ।