হাওড়া, 11 অক্টোবর: ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রশাসনের অব্যবস্থার অভিযোগে অভিনব প্রতিবাদ হাওড়ায় (Dengue in Howrah)৷ হাওড়া পৌর নিগমের মুখ্য প্রশাসকের ডেঙ্গি যাতে না হয়, সেই কামনা করে মশা মারার মেশিন নিয়ে প্রধান কার্যালয়ে হাজির বিজেপি । বিজেপি নিজের বুদ্ধির গোড়াতে ধোঁয়া দিক, কটাক্ষে করে বললেন মুখ্য প্রশাসক (BJP Protest over Dengue Situation)।
হাওড়া পৌর নিগমের (Howrah Municipal Corporation) প্রধান কার্যালয়ের সংযোগকারী রাস্তায় হাতে মশা মারার কামান ও তেল নিয়ে নামল বিজেপি রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাইয়ের নেতৃত্বে হাওড়া সদর বিজেপি যুব মোর্চা । পৌর নিগমের প্রধান ভবনের চারপাশে মশার তেল ছড়ানোর পরে মূল ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় তারা । পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিগমের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয় । সেখানেই হাওড়া শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ দেখান যুব মোর্চার সদস্যরা । তাঁদের অভিযোগ, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পৌর নিগম সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে । হাওড়ার পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে নিগমের উচ্চ পদমর্যাদার আধিকারিকরাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা । তাই যাতে মুখ্য প্রশাসক ডেঙ্গি আক্রান্ত না হন, তার জন্য এই পরিস্থিতিতে পৌর নিগমের ভিতরে ঢুকে মশার স্প্রে করতে চান তাঁরা । তবে তাঁরা মূল ভবনের ভিতর ঢুকতে বাধা পেলেও হুমকি দিয়েছেন যে, খুব শীঘ্রই তাঁরা ফের আসবেন । ভেতরে মশার তেল দেবেন । পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষের থেকে জবাদিহিও চাইবেন । আগামী দিনে পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে তাহলে তাঁরা আরও বড় আন্দোলন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
মূল ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে হাওড়া পৌর নিগমকে মঙ্গলবার একহাত নেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই । তিনি বলেন, আজ তাঁরা এসেছিলেন পৌর নিগমের মুখ্য প্রশাসকের শারীরিক সুস্থ্যতার কামনা নিয়ে । তাই পৌর নিগমের ভিতরে তাঁরা মশা মারার স্প্রে ছড়াতে চেয়েছিলেন । এই পৌর নিগম দিশেহারা হয়ে গিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন । তাঁর অভিযোগ, 60-65 বছরের বেশি বয়সের লোকেদের হাতে তেল দিয়ে মশা মারতে পাঠানো হচ্ছে । অথচ কর্তৃপক্ষ এটাও জানে না যে, ওই তেলে মশার লার্ভা মারা যায়, পরিণত মশা নয় । আর মশা মারার স্প্রের পরিকাঠামো পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নেই ।
আরও পড়ুন: পুজোর সময়ে টেস্ট কমায় বাড়ছে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা, বলছেন চিকিৎসকরা
পাশাপাশি তিনি আজ হাওড়া পৌর নিগমের ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করার পদ্ধতি নিয়েও অভিযোগ তোলেন । তিনি জানান, ইতিমধ্যে তিনি অভিযোগ লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন । শাসক দল যে যে ওয়ার্ডে নির্বাচনে হেরে যায়, সেখানেই এই পুনর্বিন্যাস করতে চাইছে । তাই সব দল থেকেই এর বিরোধিতা করা হয়েছে বলেই তিনি দাবি করেন । তিনি আজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এরপর দিনে অনেক বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়ে এসে প্রয়োজনে গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে হাওড়া শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্য পৌর প্রশাসকের থেকে জবাবদিহি চাইবেন ।
যদিও আজ বিজেপির করা গোটা ঘটনাকে নাটক বলে তোপ দেগে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন হাওড়া পৌর নিগমের মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী । তিনি জানান, আজ যাঁরা ধোঁয়া দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা নিজেরা বুদ্ধির গোড়াতে ধোঁয়া দিন । ধোঁয়া দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ এতে বহু মানুষের শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় । আর বিরোধীরা যদি সত্যি কাজ করতে চায়, তাহলে পৌর নিগমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুক । তাঁরা প্রস্তুত আছেন । পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন, দুর্গাপুজোতেও পৌর নিগমের কর্মীরা কাজ করেছেন । সকলের মিলিত প্রচেষ্টাতে এখন নতুন ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম ।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 382 জনের বেশি । যার মধ্যে গত মাসে শতাধিকের বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন । হাওড়া পৌর নিগমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা জেলার ভিত্তিতে 36% বলে সূত্রের খবর । যদিও 2019 সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট 2500 মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন ।