হাওড়া, 10 অক্টোবর : BJP যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়ে উত্তাল রাজ্য । দলীয় নেতা প্রিয়াংগু পাণ্ডের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বলবিন্দর সিংয়ের থেকে উদ্ধার করা হয় ওই আগ্নেয়াস্ত্র । পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে এই ঘটনায় । ধারাগুলি হল 147, 148, 149, 153, 186, 188, 307, 332, 333, 436, 427 ও 506 । এছাড়াও অস্ত্র আইনের 25 ও 27 নং ধারাতেও মামলা রুজু হয়েছে বলবিন্দরের বিরুদ্ধে । মামলা হয়েছে ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার অ্যাক্ট ও ওয়েস্ট বেঙ্গল মেনইন্টেনেন্স অফ পাবলিক অর্ডার, 2001 অনুযায়ীও ।
বলবিন্দর সিং একজন প্রাক্তন সেনাকর্মী । শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত । গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে খুলে যায় তাঁর মাথার পাগড়ি । আর এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে । ক্রিকেট তারকা হরভজন সিং থেকে শুরু করে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং-সহ শিখ সম্প্রদায়ের একাধিক মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন । প্রাক্তন সেনাকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের দাবি, ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স থাকলেও তা একটি নির্দিষ্ট জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা । সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে তিনি প্রিয়াংগু পাণ্ডের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছিলেন । পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন, এই কাজের জন্য তিনি 30 হাজার টাকা করে মাসমাহিনা পেতেন । সবে দু'মাস এই কাজে যোগদান করেছিলেন ।
আরও পড়ুন : বন্দুকধারী বলবিন্দর একজন ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো, ছিলেন কার্গিল যুদ্ধেও
বলবিন্দর সিংয়ের থেকে যে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে সেটি 0.32 বোর পিস্তল । এই আগ্নেয়াস্ত্র কি আদৌ কারও দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা যায় ? নাকি সেই বন্দুক ছিল তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । যদিও এবিষয়ে পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি ।
প্রসঙ্গত, যে পিস্তলটি বলবিন্দর সিংয়ের কাছ থেকে মিলেছে তা কেবলমাত্র রাজৌরি জেলায় ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল । একটি সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র রাজৌরি ডিস্ট্রিক্ট-এর জন্য। ফলে একটি জেলার মধ্যে ব্যবহার সীমিত থাকা লাইসেন্সের বন্দুক কীভাবে তিনি সম্পূর্ণ অন্য রাজ্যে এনে কাছে রাখছিলেন, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন ।
এই ঘটনায় BJP-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, "একজন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের পাগড়ি খুলে তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা নিন্দনীয় । তিনি একজনের দেহরক্ষী । পুলিশ চাইলে তাঁর বন্দুক আটক করে লাইসেন্স বাতিল করতে পারত বা আইনি পদক্ষেপ করতে পারত । কারও দেহরক্ষীকে এভাবে রাস্তায় ফেলে মারধর করা পুলিশের কাজ নয় । কী জন্য সেই বন্দুক আনা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে পারত পুলিশ ।"
আরও পড়ুন : পাগড়ি-বিতর্কে মমতাকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর
নবান্ন অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বলবিন্দর সিং ও তিনি যাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সেই প্রিয়াংগু পাণ্ডেকে গ্রেপ্তার করেছে হাওড়া পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয় আরও 6 BJP সমর্থককে । গতকাল তাঁদের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক বলবিন্দর সিং, প্রিয়াংগু পাণ্ডে ও আনন্দ সনকার নামে এক BJP কর্মীকে তিনদিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন । 12 অক্টোবর ফের তাঁদের আদালতে পেশ করা হবে । এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া জিতেন্দ্র শাহ, ললিত নারায়ণ মেহেতা, জয়ন্ত বসু, ববি তিওয়ারি ও ডলি সাউকে 14 দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় ।