হাওড়া, 12 অগাস্ট : এবার হাওড়ার টি এল জয়সওয়াল COVID হাসপাতালে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ তুললেন রোগীরা । সোমবার এক কোরোনা আক্রান্ত রোগী সোশাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো বার্তায় অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না । ভিডিয়োতে তিনি বলেন, "সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে । ডাক্তার, নার্স কারও দেখা পাচ্ছি না । নিশ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা হচ্ছে । কোনও সাহায্য না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভিডিয়ো করছি ।" এরপর ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ওই হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ।
এছাড়াও হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগও তোলেন ওই রোগী । তাঁর অভিযোগ, "হাসপাতালে পচে যাওয়া ডিম খেতে দেওয়া হচ্ছে । খাবার ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না । গত চার দিন অপেক্ষার পরে আজ এই ভিডিয়ো বার্তায় হাসপাতালের ভেতরের চিত্র তুলে ধরলাম ।" পাশাপাশি টি এল হাসপাতালে COVID চিকিৎসার জন্য ভরতি বেশ কয়েকজন রোগী ইতিমধ্যেই হাসপাতালের ভিতরে অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভিডিয়ো বার্তায় সরব হন । তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা COVID পরীক্ষার জন্য ভরতি হলেও কোনও চিকিৎসা পাচ্ছেন না । তাঁদের আরও অভিযোগ, বাথরুমে জল আসছে না । সারাদিনে একবার ডাক্তার আসেন দূর থেকে দেখে চলে যান । নার্সদের ব্যবহারে মনে হয় যেন তাঁরা দয়া করছেন । একটা ঘরের মধ্যে অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে । সেখানে দুটি বেডের মধ্যে দূরত্ব খুবই কম । তারপরও নতুন রোগীকে ওই ঘরেই আবার আনা হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা । একটা রুমে 20 থেকে 25 জন রোগী রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা কেউ COVID পজ়িটিভ না থাকলেও এখানে থেকে সেও আক্রান্ত হয়ে যাবেন । তাঁরা এই বিষয়ে সুপারকে জানানো হলে রোগীদের দাবি, তিনি সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যান ও তাঁদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নিতে বলেন । একজন হৃদরোগে আক্রান্ত বৃদ্ধাকেও ওই ঘরেই রাখার অভিযোগ উঠেছে । ওখানে ভরতি হওয়া রোগীদের দাবি, এভাবে চলতে থাকলে তাঁরা এই অব্যবস্থার দরুন মারা যাবেন ।
যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাসপাতালের সুপার দাবি করেন, তাঁর হাসপাতালে কোনও অব্যবস্থা নেই । চিকিৎসা সঠিক ভাবেই হচ্ছে । খাবারের মান যথেষ্ট ভালো । তাঁর আরও দাবি, এখানে ভরতি হওয়া রোগীরা উদেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে । সরকারি COVID গাইডলাইন মেনেই চিকিৎসা চলছে ।
পাশাপাশি হাসপাতালের অব্যবস্থার খবর পেয়ে ওই হাসপাতালে মঙ্গলবার যান রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও হাওড়া সদর তৃণমূলের সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্লা । তিনি রোগীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভরতি হওয়া রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলেই জানিয়েছেন ।
টি এল জয়সওয়াল হাসপাতলে অব্যবস্থা নিয়ে রোগীর ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস । পাশাপাশি তিনি হাসপাতালের সুপারের কাছে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছেন । ভবানী দাসের দাবি, ওই ভিডিয়োটি ঠিক নয় । কোভিড হাসপাতালে রোগী, ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে মোবাইল রাখার উপর বিধিনিষেধ আছে । কারণ মোবাইল সেট থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে ।
প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগে জয়সওয়াল হাসপাতালের থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত সত্যবালা আই ডি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে । সেখানে একজন রোগী COVID আক্রান্ত জেনেও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় । কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি শ্বাসকষ্টে মারা যান ।