ETV Bharat / state

3 লাখে রফা, মহিলা ডন শকুন্তলার সঙ্গে জমি বিবাদেই খুন ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা - bandel murder

ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনে মূল অভিযুক্ত এক মহিলা । পুলিশের দাবি, শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি এই খুনের মূল চক্রী । ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয় দিলীপকে । রফা হয় তিন লাখ টাকার । প্রাথমিকভাবেই জমি বিবাদের গল্প উঠে আসছে এই খুনে । তবে স্ত্রী রীতু সিং অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই খুনের তত্ত্ব খাড়া করছেন ।

শকুন্তলা
author img

By

Published : Aug 24, 2019, 10:53 PM IST

Updated : Aug 24, 2019, 11:06 PM IST

ব্যান্ডেল, 24 অগাস্ট : ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনে মূল অভিযুক্ত এক মহিলা । পুলিশের দাবি, শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি এই খুনের মূল চক্রী । ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয় দিলীপকে । রফা হয় তিন লাখ টাকার । প্রাথমিকভাবেই জমি বিবাদের গল্প উঠে আসছে এই খুনে । তবে স্ত্রী রীতু সিং অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই খুনের তত্ত্ব খাড়া করছেন ।

পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে, খুনের আগে থেকেই শকুন্তলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল বিজু পাসওয়ান । লোকসভা ভোটের পরই দিলীপ রামের প্রভাব খর্ব করতেই এই খুন ।
কেন এই খুন? জমি নিয়ে বিবাদ? নাকি দিলীপের স্ত্রী ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্ডেলে রাজ শুরু করেন দিলীপ । তাতেই গাত্রদাহ বাড়ে শকুন্তলার । তার উপর ব্যান্ডেল পেট্রল পাম্পের পিছনে প্রায় 12 কাঠা জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় দিলীপের সঙ্গে । যার মূল্য 2 কোটি টাকার মতো । শকুন্তলার একটি লজের পাশেই এই জমি । স্বভাবতই এই জমি দখল করার অভিসন্ধি থেকেই বিবাদ বাড়ে । সেই জমি দিলীপ রাম পঞ্চায়েতের মধ্যস্থায় ব্যান্ডেলের একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করার ব্যবস্থা করে । দিলীপের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকায় শকুন্তলার বিভিন্ন অসামাজিক কাজ মার খাচ্ছিল ।


কে এই শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি ? ব্যান্ডেলের মহিলা ডন হল এই শকুন্তলা । বেনারস থেকে আসার পর ব্যান্ডেলের মানসপুর বস্তিতে বসবাস শুরু করে সে । স্বামী মুন্নালাল যাদব রেলের কর্মী ছিলেন । প্রথমদিকে সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করাত এরা । সেখান থেকে টাকা উপার্জন করা শুরু । সুদের কারবারি হিসাবেও পরিচিতি আছে শকুন্তলার । জানা যাচ্ছে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাত । এভাবেই চলতে থাকে । এরই মধ্যে দুই ছেলে বড় হয়ে যায় । বড় ছেলে মঙ্গল ও ছোটো আজ়হার । মঙ্গল লজের দেখাশোনা করত । এই খুনের সঙ্গে মঙ্গল জড়িত সন্দেহে পুলিশি তাকে হেপাজতে নিয়েছে । ব্যান্ডেলে একাধিক ফ্ল্যাট তৈরি করে এই শকুন্তলা । বিভিন্ন বিবাদের জমি কিনে প্লট করে বিক্রি করে সে । শকুন্তলা ছেলেদের নিয়ে বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাফিয়া রাজ চালাত । এর আগে চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাসকে গুলি চালানোর ঘটনায় নাম উঠে এসেছিল শকুন্তলার । এছাড়া মগরা বড়োপাড়ার ডোলে, হেডেক-সহ একাধিক অপরাধী তার সঙ্গে যুক্ত ছিল । পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, সেই মহম্মদ নাসিম, হিডডা ছাড়াও ব্যান্ডেলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী লালার সঙ্গেও আগে থেকে সম্পর্ক ছিল তার ।

দিলীপ রাম
দিলীপ রাম

বর্তমানে পুলিশের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে গেছে এই মহিলা । সম্ভবত বেনারস পালিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ । ব্যান্ডেল ছাড়াও পাশের জেলার অপরাধীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল শকুন্তলার । মনে করা হচ্ছে, তার যোগাযোগ পুলিশের উপরতলার সঙ্গেও ছিল । অভিযোগ, গ্রেপ্তার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ASI উৎপল গুপ্তা শকুন্তলাকে ফোন করে পালাতে সাহায্য করে । সেই কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশনার হুমায়ুন কবির ।

পুলিশ জানিয়েছে, দিলীপ খুনের জন্য তিনমাস ধরে রেইকি করে অপরাধীরা । দেবব্রত বিশ্বাসের পর দিলীপকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল । সেই কারণে একাধিকবার রাস্তায় হুমকি বা ফোনে হুমকি আসে দিলীপের কাছে । পুলিশকে জানিয়েছিলেন দিলীপ ও তাঁর পরিবার । প্রাণ সংশয় হতে পারে মনে করে নিজেও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দিলীপ । লোকজন নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরোনো শুরু করেন । খুনিরা মাসখানেক ধরে রেইকি করে দিলীপের অফিস যাওয়ার সময়টা খুনের জন্য বেছে নেয় । কিন্তু, দিলীপ যেহেতু ব্যান্ডেলে প্রভাবশালী । তাই এখানকার কোনও অপরাধীরা তাঁকে খুন করতে রাজি হয় না । তাই বাধ্য হয়ে টিটাগর থেকে শুটার হায়ার করে আনা হয় । রফা হয় তিন লাখের । শকুন্তলার ছেলে মঙ্গল পুরো ব্যাপারটা দেখাশোনা করলেও অপরিচিত তিনজনকে এই খুনের পরিকল্পনা সফল করার জন্য আনা হয় ।

পুলিশি তদন্তে জানা যাচ্ছে, মহম্মদ নাসিম ব্যান্ডেল স্টেশনের 5 নম্বর প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারে দিক থেকে এসে দিলীপের মাথার পিছনে গুলি করে । তখনই লুটিয়ে পড়েন দিলীপ । খুনের সময় নাসিমের সঙ্গে আরও দু'জন ছিল আশপাশে । খুনের পর লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য শূন্যে ফায়ার করা হয় । তার পরই ওখান থেকে ব্যান্ডেল স্টেশনের রেল লাইনের তলা দিয়ে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা । তৃণমূল নেতাকে খুনে 3 লাখ টাকা সুপারি দেয় শকুন্তলা । নাসিম সে কথা স্বীকার করেছে । সে জানিয়েছে, দেড় লাখ টাকা সে এখনও পর্যন্ত পেয়েছে । হেডেককে বলা হয়, এই খুন সফল হলে তার জীবন পাল্টে যাবে ।


এই বিষয়ে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাসের বক্তব্য, "দিলীপদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল । এর আগে এক খুনের কেসে আমি শকুন্তলার বিরুদ্ধে বলায় আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল । আমাকে ডানলপ বাজারে গুলি চালায় । অল্পের জন্য বেঁচে গেছিলাম । দিলীপদাও শুকুন্তলার সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে । তাই তাঁকে খুন হতে হল ।"

দিলীপ রামের স্ত্রী রীতু সিং BJP-র বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে হুগলি জেলার BJP সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, "দিলীপ রাম খুনে আমাদের চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে । এর সঙ্গে তৃণমূলের বড় বড় নেতা জড়িত । দিলীপ রামকে সরানো গেলে আরও বড় স্বার্থ চরিতার্থ করা যাবে । তাই সুপারি কিলার দিয়ে খুন করেছে । ভালো করে তদন্ত করলে দেখা যাবে তৃণমূলের নিজেদের লোকই জড়িত আছে এই খুনে ।"

ব্যান্ডেল, 24 অগাস্ট : ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনে মূল অভিযুক্ত এক মহিলা । পুলিশের দাবি, শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি এই খুনের মূল চক্রী । ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয় দিলীপকে । রফা হয় তিন লাখ টাকার । প্রাথমিকভাবেই জমি বিবাদের গল্প উঠে আসছে এই খুনে । তবে স্ত্রী রীতু সিং অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই খুনের তত্ত্ব খাড়া করছেন ।

পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে, খুনের আগে থেকেই শকুন্তলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল বিজু পাসওয়ান । লোকসভা ভোটের পরই দিলীপ রামের প্রভাব খর্ব করতেই এই খুন ।
কেন এই খুন? জমি নিয়ে বিবাদ? নাকি দিলীপের স্ত্রী ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্ডেলে রাজ শুরু করেন দিলীপ । তাতেই গাত্রদাহ বাড়ে শকুন্তলার । তার উপর ব্যান্ডেল পেট্রল পাম্পের পিছনে প্রায় 12 কাঠা জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় দিলীপের সঙ্গে । যার মূল্য 2 কোটি টাকার মতো । শকুন্তলার একটি লজের পাশেই এই জমি । স্বভাবতই এই জমি দখল করার অভিসন্ধি থেকেই বিবাদ বাড়ে । সেই জমি দিলীপ রাম পঞ্চায়েতের মধ্যস্থায় ব্যান্ডেলের একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করার ব্যবস্থা করে । দিলীপের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকায় শকুন্তলার বিভিন্ন অসামাজিক কাজ মার খাচ্ছিল ।


কে এই শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি ? ব্যান্ডেলের মহিলা ডন হল এই শকুন্তলা । বেনারস থেকে আসার পর ব্যান্ডেলের মানসপুর বস্তিতে বসবাস শুরু করে সে । স্বামী মুন্নালাল যাদব রেলের কর্মী ছিলেন । প্রথমদিকে সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করাত এরা । সেখান থেকে টাকা উপার্জন করা শুরু । সুদের কারবারি হিসাবেও পরিচিতি আছে শকুন্তলার । জানা যাচ্ছে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাত । এভাবেই চলতে থাকে । এরই মধ্যে দুই ছেলে বড় হয়ে যায় । বড় ছেলে মঙ্গল ও ছোটো আজ়হার । মঙ্গল লজের দেখাশোনা করত । এই খুনের সঙ্গে মঙ্গল জড়িত সন্দেহে পুলিশি তাকে হেপাজতে নিয়েছে । ব্যান্ডেলে একাধিক ফ্ল্যাট তৈরি করে এই শকুন্তলা । বিভিন্ন বিবাদের জমি কিনে প্লট করে বিক্রি করে সে । শকুন্তলা ছেলেদের নিয়ে বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাফিয়া রাজ চালাত । এর আগে চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাসকে গুলি চালানোর ঘটনায় নাম উঠে এসেছিল শকুন্তলার । এছাড়া মগরা বড়োপাড়ার ডোলে, হেডেক-সহ একাধিক অপরাধী তার সঙ্গে যুক্ত ছিল । পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, সেই মহম্মদ নাসিম, হিডডা ছাড়াও ব্যান্ডেলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী লালার সঙ্গেও আগে থেকে সম্পর্ক ছিল তার ।

দিলীপ রাম
দিলীপ রাম

বর্তমানে পুলিশের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে গেছে এই মহিলা । সম্ভবত বেনারস পালিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ । ব্যান্ডেল ছাড়াও পাশের জেলার অপরাধীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল শকুন্তলার । মনে করা হচ্ছে, তার যোগাযোগ পুলিশের উপরতলার সঙ্গেও ছিল । অভিযোগ, গ্রেপ্তার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ASI উৎপল গুপ্তা শকুন্তলাকে ফোন করে পালাতে সাহায্য করে । সেই কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশনার হুমায়ুন কবির ।

পুলিশ জানিয়েছে, দিলীপ খুনের জন্য তিনমাস ধরে রেইকি করে অপরাধীরা । দেবব্রত বিশ্বাসের পর দিলীপকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল । সেই কারণে একাধিকবার রাস্তায় হুমকি বা ফোনে হুমকি আসে দিলীপের কাছে । পুলিশকে জানিয়েছিলেন দিলীপ ও তাঁর পরিবার । প্রাণ সংশয় হতে পারে মনে করে নিজেও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দিলীপ । লোকজন নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরোনো শুরু করেন । খুনিরা মাসখানেক ধরে রেইকি করে দিলীপের অফিস যাওয়ার সময়টা খুনের জন্য বেছে নেয় । কিন্তু, দিলীপ যেহেতু ব্যান্ডেলে প্রভাবশালী । তাই এখানকার কোনও অপরাধীরা তাঁকে খুন করতে রাজি হয় না । তাই বাধ্য হয়ে টিটাগর থেকে শুটার হায়ার করে আনা হয় । রফা হয় তিন লাখের । শকুন্তলার ছেলে মঙ্গল পুরো ব্যাপারটা দেখাশোনা করলেও অপরিচিত তিনজনকে এই খুনের পরিকল্পনা সফল করার জন্য আনা হয় ।

পুলিশি তদন্তে জানা যাচ্ছে, মহম্মদ নাসিম ব্যান্ডেল স্টেশনের 5 নম্বর প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারে দিক থেকে এসে দিলীপের মাথার পিছনে গুলি করে । তখনই লুটিয়ে পড়েন দিলীপ । খুনের সময় নাসিমের সঙ্গে আরও দু'জন ছিল আশপাশে । খুনের পর লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য শূন্যে ফায়ার করা হয় । তার পরই ওখান থেকে ব্যান্ডেল স্টেশনের রেল লাইনের তলা দিয়ে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা । তৃণমূল নেতাকে খুনে 3 লাখ টাকা সুপারি দেয় শকুন্তলা । নাসিম সে কথা স্বীকার করেছে । সে জানিয়েছে, দেড় লাখ টাকা সে এখনও পর্যন্ত পেয়েছে । হেডেককে বলা হয়, এই খুন সফল হলে তার জীবন পাল্টে যাবে ।


এই বিষয়ে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাসের বক্তব্য, "দিলীপদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল । এর আগে এক খুনের কেসে আমি শকুন্তলার বিরুদ্ধে বলায় আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল । আমাকে ডানলপ বাজারে গুলি চালায় । অল্পের জন্য বেঁচে গেছিলাম । দিলীপদাও শুকুন্তলার সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে । তাই তাঁকে খুন হতে হল ।"

দিলীপ রামের স্ত্রী রীতু সিং BJP-র বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে হুগলি জেলার BJP সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, "দিলীপ রাম খুনে আমাদের চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে । এর সঙ্গে তৃণমূলের বড় বড় নেতা জড়িত । দিলীপ রামকে সরানো গেলে আরও বড় স্বার্থ চরিতার্থ করা যাবে । তাই সুপারি কিলার দিয়ে খুন করেছে । ভালো করে তদন্ত করলে দেখা যাবে তৃণমূলের নিজেদের লোকই জড়িত আছে এই খুনে ।"

Intro:ব্যান্ডেল তৃণমূল নেতা দিলীপ খুনের মূল অভিযুক্ত এক মহিলা।পুলিশের অনুমান শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি এই খুনের মূল চক্রী।ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয়েছে তৃণমূল নেতা দিলীপ রামকে।প্রাথমিক ভাবেই জমি বিবাদের গল্প উঠে আসছে এই খুনে।তবে স্ত্রী রীতু সিং অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই খুনের তত্ব খাড়া করছেন।শকুন্তলা সঙ্গে খুনের আগে থেকেই যোগাযোগ রাখছিল বিজু পাসওয়ান।লোকসভা ভোটের পরই দিলীপ রামের প্রভাব খর্ব করতেই এই খুন।
কেন এই খুন ।।জমি নিয়ে গন্ডগোল।তার আগে দিলীপ স্ত্রী ব্যান্ডেল পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার কারণেই বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্ডেল রাজ করছিল।তাতেই গাত্র দাহ বাড়ে শকুন্তলার।তারউপর ব্যান্ডেল পেট্রল পাম্পের পিছনে প্রায় 12 কাটা জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় দিলীপের সঙ্গে।যার মূল্য 2 কোটি টাকার মত।শকুন্তলার একটি লজের পাশেই এই জমি।স্বভাবতই ঐ জমি দখল করার অভিসন্ধি থেকেই বিবাদ বাড়ে।সেই জমি দিলীপ রাম পঞ্চায়েতের মধ্যস্থায় ব্যান্ডেলের ভাওয়ালদের বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেন।এই প্রতিপত্তি বাড়তে থাকায় শকুন্তলার বিভিন্ন অসামাজিক কাজ মার খাচ্ছিল।

কে এই শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি।।ব্যান্ডেলের মহিলা ডন হল এই শকুন্তলা।বেনারস থেকে এরা ব্যান্ডেল মানস পুর বস্তিতে বসবাস শুরু করে।স্বামী মুন্না লাল যাদব রেল কর্মী ছিলেন।প্রথম দিকে গুন্ডা দের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ করাত এরা।সেখান থেকে টাকা উপার্জন করা শুরু।সুদের কারবারী হিসাবেও পরিচিতি আছে শকুন্তলার।ব্যান্ডেলে একসময় ডাকাবুক ছিল এই মহিলা।আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ কে ভয় দেখতো।তার উত্থান শুরু হয় জমি মাফিয়া হয়ে।ততদিনে তার দুই ছেলেও বড় হয়ে যায়।বড় ছেলে মঙ্গল যাদব ও ছোটো আজহার যাদব।মঙ্গল লজের দেখা শোনা করত।এই খুনের সঙ্গে মঙ্গল জড়িত সন্দেহে পুলিশি হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।ব্যান্ডেলে একাধিক ফ্ল্যাট তৈরি করেছে এই শকুন্তলা।বিভিন্ন বিবাদের জমি কিনে পল্ট করে বিক্রি করে সে।শকুন্তলা ছেলেদের নিয়ে বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাফিয়া রাজ চালাত ব্যান্ডেলে।এর আগে চুঁচুড়া মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস কে গুলি চালানো কেসে নাম উঠে এসেছিল শকুন্তলার।মগরা বড়ো পাড়ার ডোলে ও হেডেক সহ একাধিক অপরাধী তার সঙ্গে আগাগোরাই যুক্ত ছিল তারা।পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে টিটাগরের মহঃ নাসিম ও এই কাজে যুক্ত ছিল।ব্যান্ডেলে কুখ্যাতি দুষ্কৃতী লালা ,হিডডার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার।অপরাধ জগতের ডন এই মহিলা যথেষ্টই ছিল।বর্তমানে পুলিশের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে গেছে এই মহিলা।সম্ভবত বেনারস পালিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।ব্যান্ডেল ছাড়াও অন্যান্য পার্শবর্তী জেলার অপরাধীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।তার প্রভাব কমিশনারেটের পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক অফিসারের সঙ্গেও ছিল।শকুন্তলা গ্রেফতার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ অফিসার উৎপল গুপ্তা তাকে ফোন করে পালানোর সাহায্য করে।সেই কারণেই সেই অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয় বলে জানান কমিশনার হুমায়ুন কবির ।
দিলীপ খুনের রহস্য:পুলিশ জানিয়েছে দিলীপ খুনের জন্য তিন মাস ধরে রেকি করে অপরাধীরা।মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে নাম আসে শকুন্তলার।দেবব্রত বিশ্বাস পর দিলীপ কে সরানো পরিকল্পনা করা হয়েছিল।সেই কারণে একাধিক বার রাস্তায় হুমকি বা ফোনে হুমকি আসে দিলীপের কাছে।পুলিশ কে জানিয়েছিল দিলীপ ও তার পরিবার।সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিয়েও ছিল দিলীপ।দিলীপের আসে পাশে বেশ কয়েকটি লোক পরিবেষ্টিত থাকত সব সময়।খুনিরা মাস খানেক ধরে দেখার পর দিলীপ অফিস যাওয়ার সময় টা খুনের জন্য বেছে নেয়।কিন্তু দিলীপ যেহেতু ব্যান্ডেলে প্রভাব শালী মানুষ।তাই এখানকার কোন অপরাধীরা তাকে খুন করতে রাজি হয় না।তাই বাধ্য হয়ে টিটাগর থেকে সাফ শুটার হায়ার করে আনা হয়।শকুন্তলার ছেলে মঙ্গল পুরো ব্যাপারটা দেখা শোনা করলেও অপরিচিত তিন জন এই খুনের পরিকল্পনা সফল করার জন্য আনা হয়।ধৃত মহঃ নাসিম ব্যান্ডেল 5 নম্বর প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারে দিক থেকে এসে দিলীপের মাথার পিছনে ওয়ান সাটার দিয়ে গুলি করে।তখনই লুটিয়ে পড়ে দিলীপ।9.25 নাগাদ ইন্টারসিটি তে অফিস যেত সে।এই খুনের সময় নাসিমের সঙ্গে আরও দুজন ছিল আসে পাশে।একটি গুলিতে খুন করার পর স্টেশনের লোকজন কে ভয় দেখানোর জন্য আরেকটি ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করা হয়।তার পরই ওখান থেকে ব্যান্ডেল স্টেশনের রেল লাইনের তলা দিয়ে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।তৃণমূল নেতা খুনের 3 লক্ষ টাকা সুপারি দেয় শকুন্তলা।নাসিম সে কথা স্বীকার করে।এবং সে জানায় দেড় লক্ষ টাকা সে এখনও পর্যন্ত পেয়েছে।হেডেক বলা হয় এই খুন সফল করলে তার জীবন পাল্টে যাবে।
প্রাক্তন পঞ্চায়েত সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস বক্তব্য দিলীপদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল ছিল।এর আগে এক খুনের কেসে আমি শকুন্তলার বিরুদ্ধে বলায় আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল।আমাকে ডানলপ বাজারে গুলি চালায়।অল্পের জন্য বেঁচে যাই।দিলীপদা ও শুকুন্তলা সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তাই তাকে খুন হতে হল।

দিলীপ রামের স্ত্রী রীতু সিং বিজেপির বিরুদ্ধে এখন ও অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে হুগলি জেলার বিজেপি সভাপতি সুবীর নাগ বলেন দিলীপ রাম খুনের বিজেপিকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে।এর সঙ্গে তৃণমূলের বড় বড় নেতাই জড়িত।দিলীপ রাম কে সরানো গেলে আর বড় স্বার্থ চরিতার্থ করা যাবে তাই সুপারি কিলার দিয়ে খুন করেছে।ভালো করে তদন্ত করলে তৃণমূলের নিজের লোকই এখানে আছে এই খুনে।
Body:WB_HGL_BANDEL DILIP MURDER CASE SHUKUNTALA_7203418Conclusion:
Last Updated : Aug 24, 2019, 11:06 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.