গোঘাট, 8 অগাস্ট : পাত্র-পাত্রী, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট বা ঘটক । ছেলেমেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র বা পাত্রী আসলেও হচ্ছে না বিয়ে । নিজেদের যোগ্যতা বা অন্য কিছুকে দায়ি করতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামে এমন অনেকে আছে যাদের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে । কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল বিয়ে ভাঙছে কারোর ব্যক্তিগত কোনও সমস্যার জন্য নয় । ভাঙছে এলাকার রাস্তার জন্য । রাস্তার এমন দশা যাতে না কি কেউ সম্বন্ধ করতে চাইছে না এলাকায় কারোর সঙ্গে । এমনই অভিযোগ তুলেছে হুগলির গোঘাটের নকুণ্ডা এলাকার বাসিন্দারা ।
বেহাল দশার কারণে অনেকদিন আগেই বাস বন্ধ হয়ে গেছে হুগলির গোঘাটের নকুণ্ডা এলাকার ওই রাস্তায় । বিয়ে তো ভাঙছে, ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলেই যেতে পারছে না । কী ভাবেই বা যাবে, বৃষ্টি হলে জল জমে । আর রাস্তা এমন এবড়েখেবড়ে যে সেখানে জলের উপর দিয়ে হাঁটা খুবই বিপজ্জনক । কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও আসতে পারে না অ্যাম্বুলেন্স । 2019-এ দাঁড়িয়েও এভাবেই ব্রাত্য ওই এলাকা । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভোটের আগে একবার বিধায়কের দেখা মিললেও মেলেনি পরিষেবা । বাম আমলে একবার পিচ লাগানোর পর এখনও পর্যন্ত মেরামত হয়নি এক অংশও । তাদের দাবি, রাস্তার এমন অবস্থা যে ধান চাষ এবং মাছ চাষ দুটোই করা যাবে সেখানে ।
দশ বছর ধরে রাস্তার কোনও পরিবর্তন হয়নি । ফাটা রেকর্ডের মতো একই প্রতিশ্রুতি ভেসে আসে প্রতিবার । রাজনৈতিক দল, নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ সবকিছুর বদলে তারা শুধু রাস্তা চায় । আজ ভাঙাচোরা রাস্তায় জমা জলে ধানের বীজ রোপন করে ও মাছ ছেড়ে প্রতিবাদ দেখায় গ্রামবাসীরা । সঙ্গে জানায়, ফাটা রেকর্ডের মতো একই উত্তর ভেসে এসেছে গত দশ বছর ধরে । তাদের কথা কেউ ভাবে না । একইসঙ্গে স্থানীয়দের হুঁশিয়ারি, এবার কোনও নেতা-মন্ত্রী এই এলাকায় এলে অনুরোধ নয় । গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেব ।
তাদের মধ্যে একজন বলেন, দিদিকে বলোতে জানাতে বলেছে অনেকে ৷ কিন্তু ফল মিলবে কি না তার কোনও আশা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না ।
রাস্তা না হওয়ার পিছনে স্থানীয় নেতাদের কাটমানি খাওয়াকেও দায়ি করে তারা । বলে, "কাজ তো করে কিন্তু কাটমানি খাওয়ায় সবাই সিদ্ধহস্ত । ওরা থাকুক কাটমানি নিয়ে । কাটমানি খাওয়ার জন্যই তো রাস্তা হয়নি । রাস্তা না থাকার জন্য এই এলাকার ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্তও হচ্ছে না । তাই আমাদের দাবি রাস্তা চাই । জীবন চাই ।"
আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে তাঁর এলাকার এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "ওই রাস্তার জন্য টেন্ডার বরাদ্দ হয়ে গেছে । এখন বর্ষা চলছে । তাই কাজ শুরু করা সম্ভব নয় । কিন্তু পুজোর পরই কাজ শুরু হবে ।" অন্য দিকে আরামবাগ সাব ডিভিশনের PWD অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়র নিরঞ্জন ভর বলেন, "ওই রাস্তাটি জেলা পরিষদের আওতায় ছিল । PWD-র আওতায় নেওয়া হয়েছে । রাস্তাটি নির্মাণের জন্য সাড়ে 24 কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়েছে ।"
স্থানীয়রা বলছে, রাস্তা ঠিক হলে, বাস চলতে শুরু করলেই জীবনে ফিরবে ছন্দ । বিয়ে, পড়াশোনা সবই হবে আবার স্বাভাবিক নিয়মে ।