ETV Bharat / state

যশের দোসর নিম্নচাপ, হুগলির সবজি চাষিদের মাথায় হাত - হুগলির চাষি

যশের পর নিম্নচাপের বৃষ্টি, আর তাতেই কোপে পড়েছে সবজি চাষ । প্রায় 33 শতাংশ সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে যশে । হুগলি জেলায় কমবেশি 18টি ব্লকে সবজি চাষ হয় । কিন্তু এই বছরে যশের প্রবল বৃষ্টি সেই সঙ্গে সদ্য নিম্নচাপের ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছেন হুগলি চাষিরা ।

যশ পরেই নিন্মচাপ ঠিক যেন "কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে"-র মতো অবস্থা সবজি চাষিদের
যশ পরেই নিন্মচাপ ঠিক যেন "কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে"-র মতো অবস্থা সবজি চাষিদের
author img

By

Published : Jun 19, 2021, 6:32 PM IST

হুগলি, 19 জুন : যশের পর নিম্নচাপের বৃষ্টি, আর তাতেই কোপে পড়েছে সবজি চাষ । রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো হুগলি জেলা সবজি চাষ ক্ষতির থেকে বাদ পড়েনি । প্রায় 33 শতাংশ সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে যশে । হুগলি জেলায় কমবেশি 18টি ব্লকে সবজি চাষ হয় । বিশেষ করে সিঙ্গুর, পোলবা, হরিপাল, পুরশুড়া, চণ্ডীতলা-সহ বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি কলকাতা, বর্ধমান, রামপুরহাট সহ বিভিন্ন জায়গায় যায় । হুগলিতে 10 হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করেন চাষিরা । কিন্তু এই বছরে যশের প্রবল বৃষ্টি সেই সঙ্গে সদ্য নিম্নচাপের ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছেন হুগলি চাষিরা ।

বর্ষাকালীন সবজি বলতে ভেন্ডি, বেগুন, চিচিঙ্গা, পটল ও ফুলকপি সহ বিভিন্ন রকমের সবজি ও নানা ধরনের শাক চাষ হয় । কিন্তু যে হারে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে, তাতে সবজি গাছের গোড়ায় জল জমার ফলে প্রবল সমস্যার মুখে পড়ছেন চাষিরা । এরপরও যদি এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকে বর্ষার সবজি নষ্ট হয়ে যাবে এবং ক্ষতির মুখে পড়তে হবে চাষিদের ।

যশ ও নিম্নচাপে বৃষ্টির ফলে সবজি চাষে ক্ষতি কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার উদ্যানপালন দফতর । যশের বৃষ্টির ফলে সবজি চাষে প্রায় সাত হাজার হেক্টর মতো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সেই অনুযায়ী রাজ্য কৃষি দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে । এভাবে যদি আরও বৃষ্টি হয় সবজি চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে দাবি কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের ।

যশ পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হুগলির সবজি চাষিরা ৷

আরও পড়ুন...করোনার ধাক্কায় চন্দননগরের আলোক শিল্পে অন্ধকার

পোলবার এক চাষি নরেন মণ্ডল বলেন, "গাছের গোড়ায় জল জমে যাচ্ছে, গাছ খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং মরে যাচ্ছে । জমিতে জল জমে থাকার ফলে নিকাশি ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে । এইভাবে যদি বৃষ্টি চলতে থাকে কোন ফসলই পাব না আমরা । আর ফসল কম হলেই দাম বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে । আমরা চাইছি ফসলটা বাঁচাতে তাতে যোগান ঠিক থাকে । এখন সেভাবে ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না । কারণ বৃষ্টির জলে প্রায় অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়েছে ।"

শ্যামাপদ সাঁতরা নামে আরেক চাষি বলেন, "বৃষ্টির ফলে জমিতে ঘাস হয়ে গিয়েছে । ফসলের গাছ জন্মানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছে । আর যে সমস্ত চাষিদের বেগুন,ভেন্ডি, চিচিঙ্গা হয়েছে সেই জমিতে অতিবৃষ্টির ফলে জল নিকাশি হচ্ছে না । তার ফলেই গাছের গোড়া পচে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আমের ক্ষেত্র সমস্যা হচ্ছে দোফলা আমে পোকা এসে যাচ্ছে । হালিশহরে কুমড়ো চাষ হয়েছিল, কিন্তু এক হাঁটু জল হয়ে যাওয়ার ফলে সেও নষ্ট হতে বসেছে ।"

সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের অমিত মান্না বলেন, "খলিসানি, বিলকুলি এলাকায় ফ্লাইওভার যাওয়ার ফলে আরও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে । চাষিদের একদিকে যেমন বৃষ্টির জল তার ওপরে নিকাশি সমস্যার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের । পলি হাউস বা গ্রিনহাউজ যে ক্ষেত্রে চাষিদের কাছে অনেকটাই ব্যয় সাপেক্ষ সেখানে সবজি চাষ করা সম্ভব নয় ।"

আরও পড়ুন... আরামবাগে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় মহকুমা শাসক

উদ্যানপালন বিভাগের আধিকারিক মৌটুসী মিত্র ধর বলেন, "যশের ফলে হুগলিতে সবজি চাষে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে । তবে সাধারণত সবজি চাষ নিচু জমিতে হয় না । তবে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি হলে জল জমাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বৃষ্টি কমলে জল নেমে যায় । আর যশে অধিকাংশ এলাকার জমি ক্ষতি হয়েছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ম অনুযায়ী 33 শতাংশের বেশি ক্ষতি হলেই সেটা ক্ষতি বলে ধরা হয় । তবে এই বৃষ্টির ফলে গাছের গোড়ায় পচনের ক্ষেত্রে জল যাতে না জমে সেটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । সেইসঙ্গে গোড়ায় রাসায়নিক সার,পটাশ ও ছত্রাকনাশক কোনও ওষুধ স্প্রে করার প্রয়োজন ।"

সবজি চাষের জন্য বিশেষ করে সেভাবে গ্রিনহাউজ তৈরি করা হয় না জেলায় । তবে এখন পালংশাক এবং লালশাকের জন্য পুরশুড়া, পোলবা, হরিপাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের পলি হাউস তৈরি করছে । এর খরচাও কম ৷ এর ফলে চাষিরা অনেকটাই এই বর্ষাকালীন সময়ে লাভের মুখ দেখতে পাবেন ।

হুগলি, 19 জুন : যশের পর নিম্নচাপের বৃষ্টি, আর তাতেই কোপে পড়েছে সবজি চাষ । রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো হুগলি জেলা সবজি চাষ ক্ষতির থেকে বাদ পড়েনি । প্রায় 33 শতাংশ সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে যশে । হুগলি জেলায় কমবেশি 18টি ব্লকে সবজি চাষ হয় । বিশেষ করে সিঙ্গুর, পোলবা, হরিপাল, পুরশুড়া, চণ্ডীতলা-সহ বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি কলকাতা, বর্ধমান, রামপুরহাট সহ বিভিন্ন জায়গায় যায় । হুগলিতে 10 হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করেন চাষিরা । কিন্তু এই বছরে যশের প্রবল বৃষ্টি সেই সঙ্গে সদ্য নিম্নচাপের ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছেন হুগলি চাষিরা ।

বর্ষাকালীন সবজি বলতে ভেন্ডি, বেগুন, চিচিঙ্গা, পটল ও ফুলকপি সহ বিভিন্ন রকমের সবজি ও নানা ধরনের শাক চাষ হয় । কিন্তু যে হারে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে, তাতে সবজি গাছের গোড়ায় জল জমার ফলে প্রবল সমস্যার মুখে পড়ছেন চাষিরা । এরপরও যদি এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকে বর্ষার সবজি নষ্ট হয়ে যাবে এবং ক্ষতির মুখে পড়তে হবে চাষিদের ।

যশ ও নিম্নচাপে বৃষ্টির ফলে সবজি চাষে ক্ষতি কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার উদ্যানপালন দফতর । যশের বৃষ্টির ফলে সবজি চাষে প্রায় সাত হাজার হেক্টর মতো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সেই অনুযায়ী রাজ্য কৃষি দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে । এভাবে যদি আরও বৃষ্টি হয় সবজি চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে দাবি কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের ।

যশ পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হুগলির সবজি চাষিরা ৷

আরও পড়ুন...করোনার ধাক্কায় চন্দননগরের আলোক শিল্পে অন্ধকার

পোলবার এক চাষি নরেন মণ্ডল বলেন, "গাছের গোড়ায় জল জমে যাচ্ছে, গাছ খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং মরে যাচ্ছে । জমিতে জল জমে থাকার ফলে নিকাশি ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে । এইভাবে যদি বৃষ্টি চলতে থাকে কোন ফসলই পাব না আমরা । আর ফসল কম হলেই দাম বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে । আমরা চাইছি ফসলটা বাঁচাতে তাতে যোগান ঠিক থাকে । এখন সেভাবে ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না । কারণ বৃষ্টির জলে প্রায় অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়েছে ।"

শ্যামাপদ সাঁতরা নামে আরেক চাষি বলেন, "বৃষ্টির ফলে জমিতে ঘাস হয়ে গিয়েছে । ফসলের গাছ জন্মানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছে । আর যে সমস্ত চাষিদের বেগুন,ভেন্ডি, চিচিঙ্গা হয়েছে সেই জমিতে অতিবৃষ্টির ফলে জল নিকাশি হচ্ছে না । তার ফলেই গাছের গোড়া পচে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আমের ক্ষেত্র সমস্যা হচ্ছে দোফলা আমে পোকা এসে যাচ্ছে । হালিশহরে কুমড়ো চাষ হয়েছিল, কিন্তু এক হাঁটু জল হয়ে যাওয়ার ফলে সেও নষ্ট হতে বসেছে ।"

সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের অমিত মান্না বলেন, "খলিসানি, বিলকুলি এলাকায় ফ্লাইওভার যাওয়ার ফলে আরও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে । চাষিদের একদিকে যেমন বৃষ্টির জল তার ওপরে নিকাশি সমস্যার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের । পলি হাউস বা গ্রিনহাউজ যে ক্ষেত্রে চাষিদের কাছে অনেকটাই ব্যয় সাপেক্ষ সেখানে সবজি চাষ করা সম্ভব নয় ।"

আরও পড়ুন... আরামবাগে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় মহকুমা শাসক

উদ্যানপালন বিভাগের আধিকারিক মৌটুসী মিত্র ধর বলেন, "যশের ফলে হুগলিতে সবজি চাষে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে । তবে সাধারণত সবজি চাষ নিচু জমিতে হয় না । তবে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি হলে জল জমাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বৃষ্টি কমলে জল নেমে যায় । আর যশে অধিকাংশ এলাকার জমি ক্ষতি হয়েছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ম অনুযায়ী 33 শতাংশের বেশি ক্ষতি হলেই সেটা ক্ষতি বলে ধরা হয় । তবে এই বৃষ্টির ফলে গাছের গোড়ায় পচনের ক্ষেত্রে জল যাতে না জমে সেটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । সেইসঙ্গে গোড়ায় রাসায়নিক সার,পটাশ ও ছত্রাকনাশক কোনও ওষুধ স্প্রে করার প্রয়োজন ।"

সবজি চাষের জন্য বিশেষ করে সেভাবে গ্রিনহাউজ তৈরি করা হয় না জেলায় । তবে এখন পালংশাক এবং লালশাকের জন্য পুরশুড়া, পোলবা, হরিপাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের পলি হাউস তৈরি করছে । এর খরচাও কম ৷ এর ফলে চাষিরা অনেকটাই এই বর্ষাকালীন সময়ে লাভের মুখ দেখতে পাবেন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.