চুঁচুড়া, 18 জুন : রাজ্য সরকারের তরফে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে । যাদের বাড়ি ভেঙে গেছে তাদের হাতে 20,000 টাকা করে তুলে দেওয়া হচ্ছে । এবার সেই ত্রাণের টাকা নিয়েই হুগলির নানা এলাকায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । গতকালই পোলবার দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রুপম ভবক পরিবারের সদস্যদের নাম ত্রাণ বিতরণের তালিকায় ঢুকিয়ে আমফানের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন । এবার প্রকাশ্যে এল পঞ্চায়েতের এক কর্মী টাকা নেওয়ার বিষয় । অভিযোগ , তালিকা তৈরিতে তিনিও যুক্ত ছিলেন । নিজের পরিবারের নাম ঢুকিয়েছেন । চাপে পড়ে এখন ত্রাণের ক্ষতিপূরণের টাকা BDO-র কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন ।
কার্যত চাপে পড়ে গতকাল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রুপম ভবক দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন । বলেন, "আমার পরিবারের মোট চারটি নাম দিয়েছি এবং সরকারি টাকা নিয়েছি । তবে সে টাকা আমি ব্যবহার করব না । BDO-র কাছে টাকা ফেরত দিতে চাই ।" পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে টাকা ফেরত দিতে চান । আজ আবার পঞ্চায়েতের আরও এক অস্থায়ী কর্মী টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন । সেই সঙ্গে তৃণমূল কর্মী রমজান আলি-সহ বেশ কয়েকজন টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন । পরে রমজান আলি মোল্লা বলেন , "আমার পরিবারের নামে টাকা ঢোকার খবর পাই । পঞ্চায়েতে আমফানে তালিকায় আমার এবং আমার স্ত্রীর নামে আছে । এছাড়াও আরও দু-তিনটি নামে ত্রাণ এসেছে । তালিকায় ভুল করে এসে গেছে নামগুলি । পঞ্চায়েত মারফত টাকা ঢোকার কথা শুনে আমি ব্যাঙ্কে যাই । দেখি কোনও টাকা ঢোকেনি । আমি ও আমার স্ত্রীর ব্যাপারে পঞ্চায়েতের কাছে আমি জানিয়েছি । আমরা কোনও সরকারি টাকা পেলে, তা ফিরিয়ে দেব সরকারকে ।"
পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী সানি ওরফে বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "আমার অ্যাকাউন্টে 20 হাজার টাকা ঢুকেছে । আমার বাড়ি ভেঙে গেছিল । কিন্তু আমার এত টাকা ক্ষতি হয়নি । আমি আজ BDO-র কাছে আবেদন করেছি । সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেব । আমি আমফানের জন্য আবেদন করেছিলাম, যাতে ত্রিপল বা সামান্য কিছু টাকা পাব । আমার 20 হাজার টাকা লাগবে না ।"
এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন: আমফানের টাকা নিয়ে দুর্নীতি, স্বীকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের
এবিষয়ে পোলবা দাদপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিয়া পাত্র বলেন, "দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা নিয়ে আমরা খুবই মর্মাহত । মুখ্যমন্ত্রী যে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন, সেটা দুস্থ মানুষদের জন্য । যাদের সত্যি সত্যি ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য । দাদপুর অঞ্চল যা করেছে, তা অত্যন্ত বড় ভুল । সঠিকভাবে দুর্গতদের কাছে টাকা না পৌঁছালে, সেই টাকা যাতে সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তার চেষ্টা করছে পোলবার BDO, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত । আমাদের উর্ধ্বতন প্রশাসনও এটা নিয়ে তদারকি করছেন । আমরা সবসময় চেষ্টা করছি, যাতে সঠিক মানুষের হাতে ওই টাকা যায় । এখানে আমাদের দলের কর্মীকে ধামাচাপা দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করব না । মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যাদের প্রকৃত ক্ষতি হয়েছে, তাদেরই 20 হাজার টাকা করে দেওয়া হবে । পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।" পোলবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রমেন হালদার বলেন, "যারা সরকারি টাকা নয়-ছয় করছে, তাঁদের হয় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হবে নয় দল থেকে বহিষ্কার করা হবে ।"
দাদপুরের BJP-র মণ্ডল সভাপতি প্রফুল্ল দাস বলেন, "তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমফানের ক্ষতিপূরণের নামে পঞ্চায়েত থেকে টাকা নিয়েছে । পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী বিশ্বজিৎ দাসও এর সঙ্গে জড়িত । সংবাদমাধ্যম ও আমাদের চাপে পড়ে এখন টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছে । যদি ফেরানোর হত, তাহলে দুর্নীতি করল কেন ? আমরা চাই এই সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন । দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে । এই বাসা ভেঙে দেব আমরা ।"