হুগলি, 26 জানুয়ারি: দলবিরোধী কাজের অভিযোগে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষালকে শোকজ করল দলীয় নেতৃত্ব৷ মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে হুগলির জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য়পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রবীর৷ দলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও তোলেন৷ এরপরই বিধায়ককে ঘটনার জবাবদিহি চেয়ে পাঠায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ বিধায়কের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা৷
প্রবীরের এই পদক্ষেপ আকস্মিক নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ বস্তুত, গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই কিছুটা বেসুরে গাইছেন প্রবীর৷ তাঁর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের বিবাদও কারও অজানা নয়৷ সম্প্রতি দিলীপ যাদবের দাদার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ বিজেপির প্রতিনিধিরা৷ জল্পনা ওঠে, তবে কি বিধানসভা ভোটের আগে দিলীপের পরিবারও গেরুয়াশিবিরের দিকে ঝুঁকছে৷ লক্ষ্য়ণীয় বিষয় হল, এই ঘটনা দলের নজরে আনেন প্রবীর ঘোষাল ঘনিষ্টরা ৷ তাঁদের অভিযোগ, এরপরও দিলীপ যাদবের বিরুদ্ধে দলের তরফে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়নি৷
এই পরিস্থিতিতে প্রবীরপন্থীদের সঙ্গে দিলীপ গোষ্ঠীর দূরত্ব আরও বাড়ে ৷ বেচারাম মান্না, অপরূপা পোদ্দারের মতো তৃণমূলের প্রবীর ঘেঁষা নেতামন্ত্রীরা প্রকাশ্য়েই দিলীপের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করেন৷ অন্য়দিকে, প্রবীরের অবস্থাও যে খুব ভালো, তা বলা যায় না৷ তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগই হল, তিনি মোটেও কাজের মানুষ নন৷ প্রবীরের আগে উত্তরপাড়ার বিধায়ক ছিলেন অনুপ ঘোষাল৷ তাঁর বিরুদ্ধেও কাজ না করার অভিযোগ ওঠে৷ তাই অনুপকে সরিয়ে উত্তরপাড়ার জন্য় প্রবীরকে বেছে নেয় দল৷ তবে তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলেই ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের৷
প্রসঙ্গত, হুগলির সিঙ্গুর আন্দোলনই দু’হাজার এগারোর পালাবদলে তৃণমূলের অন্য়তম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল৷ অথচ সেই হুগলিতেই এখন অন্তর্কলহে জেরবার রাজ্য়ের শাসকদল৷ পরিস্থিতি বাগে আনতে সম্প্রতি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ঘোষণা করেন, এবার তিনি নিজেই জেলায় দলের সংগঠনের হাল ধরবেন৷ তবে তাতেও যে অন্দরের কোন্দল মেটেনি, প্রবীরের এদিনের পদক্ষেপই তার প্রমাণ৷
আরও পড়ুন : শুভেন্দুর মতো ‘নীতি’র পথেই কি এগিয়ে চলেছেন রাজীব ?
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে প্রবীর দাবি করেন, তৃণমূলে ভালো লোকেদের থাকার বা কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই৷ এই প্রসঙ্গে ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা রাজ্য়ের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কথাও টেনে আনেন তিনি৷ প্রবীরের মতে, রাজীব ভালো ছেলে, কাজের মানুষ৷ বাধ্য় হয়েই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে তাঁকে৷ কারণ, তাঁর মতো লোকেদের দলের থাকার মতো পরিবেশই নেই৷ প্রসঙ্গত, রাজীবের ইস্তফা প্রদানের পর প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছিল বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালিময়ার মুখেও৷ যার জেরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে৷ এবার প্রবীরের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিল দলীয় নেতৃত্ব৷
আগামী 31 জানুয়ারি ফের রাজ্য় সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ তার ঠিক আগেই ঘরের এই কোন্দলে চাপ বাড়াবে তৃণমূলের৷ অক্সিজেন জোগাবে গেরুয়াশিবিরকে৷ অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷