উত্তরপাড়া, 13 ডিসেম্বর: বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় বলেই তার নাম বাঁশি । বিশেষ প্রজাতির বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাঁশি তৈরি করা হয় । সেই বাঁশির আওয়াজে মোহিত হন সকলেই । আদি অনন্তকাল ধরে চলে আসা এই বাদ্যযন্ত্রের নাম সকলেরই জানা । কিন্তু বর্তমানে তরাই অঞ্চলের এই বাঁশ বিপুল পরিমাণে কাটার ফলে অবলুপ্তের পথে । যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই সেই বাঁশের তৈরি বাঁশির মূল্য বেড়েছে । স্টিলের বাঁশিও বাজারে রয়েছে কিন্তু বাঁশের তৈরি বাঁশির সঙ্গে আওয়াজের তারতম্য রয়েছে ৷
তাই বাঁশের বাঁশির আওয়াজকে সঠিক রেখে পিভিসি পাইপ দিয়ে অভিনব বাঁশি তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করেন হুগলির(Hooghly News)উত্তরপাড়ার বাসিন্দা তথা জাতীয় স্তরের বাঁশিবাদক শৌভিক পাল । 10 বছর আগে থেকেই এই বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন তিনি ৷ ফলস্বরূপ, জলের পাইপ দিয়ে বাঁশি তৈরি করেছেন । যা বাজালে বাঁশের বাঁশি ও পাইপের বাঁশির পার্থক্য বোঝা দুষ্কর । তাঁর দাবি, আওয়াজের ক্ষেত্রে বাঁশের তুলনায় কোনও অংশে কম হবে না পিভিসি পাইপের বাঁশি (Flute of PVC Pipe)৷ ইতিমধ্যে এই পিভিসি পাইপের বাঁশি পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছেন শিল্পী । তাঁর এই শিল্পসত্তার সঙ্গে পাইপের তৈরি বাঁশি রাজ্যে কুটির শিল্পের দিশা আনবে বলে ধারণা । পাইপের এই বাঁশি অনেকটাই কম দামে ও সহজলভ্য হবে বাঁশি বাদকদের কাছে ।
আরও পড়ুন : হেড কনস্টেবল সুর তুললেন ব্যাটনে : দেখুন ভিডিয়ো
উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শৌভিকবাবু ছোটবেলা থেকেই বাঁশি বাজান । জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রের স্বীকৃতি পেয়েছেন । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুরষ্কৃতও হয়েছেন । ওয়ার্ল্ড কালচার ফেস্টিভ্যাল, কাশী মহোৎসব, উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশীর অনুষ্ঠান, বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক জায়গায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । ভূটান রাজবাড়িতে বাঁশি বাজিয়ে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন ।করোনাকালে করোনা এক্সপ্রেস মিউজিক্যাল অ্যালবাম তৈরি করেছিলেন তিনি । যার পয়েন্টের স্বীকৃতি পেয়েছেন ইতিমধ্যেই ।
আরও পড়ুন : প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বাঁশি বানিয়ে "শখপূরণ"
তিনি আরও বলেন, "প্রফেশনাল বাঁশি কিনতে গেলে খরচ দেড় থেকে দু'হাজার টাকা । সেই তুলনায় পাইপের বাঁশি 700 থেকে 800 টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব । ব্যবহারিক জীবনেও বাঁশের তুলনায় পাইপের বাঁশি বাজানো সহজ । এখনও পর্যন্ত ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা করিনি তবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় আমি বাঁশি তৈরি করে বিক্রি করেছি । 2017 সালে পাইপের বাঁশি পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছি । কিন্তু করোনাকাল ও কয়েকটি সমস্যার কারণে তা সম্পূর্ণ হয়নি । তবে কিছুদিনের মধ্যে আশা করি পেটেন্ট পেয়ে যাব (Man made a Flute by PVC Pipe is Waiting for Patent)। সরকারিভাবে এটার আমি স্রষ্টা হব ঠিকই, কিন্তু হতে পারে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বহু গুণী মানুষ । তাঁরাও শিল্পের উন্নতির জন্য করেছেন । এর জন্য কোনও মতপার্থক্য নেই আমার । সবুজকে বাঁচানোর জন্য এই বিকল্প চিন্তাভাবনা করা উচিত সবার । তাছাড়া এই পাইপ দিয়ে বাঁশি তৈরি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে একটা ব্যবসায়িক দিক খুলতে পারে । সরকার বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড ফেয়ার ও হস্তশিল্প মেলায় বিক্রির পরিকল্পনা করুক ।"
আরও পড়ুন : স্টেশন চত্বরেই থমকে বাঁশিওয়ালা অনিল বিশ্বাসের প্রতিভা