বলাগড় (হুগলি), 21 সেপ্টেম্বর: জমিদারি উঠে গিয়েছে ৷ কালের নিয়মে ভেঙে পড়েছে বিরাট প্রাসাদ ৷ তবুও ঐতিহ্য তো টিকিয়ে রাখতেই হবে ! শত অসুবিধার মধ্যেও সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন হুগলির (Hooghly) বলাগড় (Balagarh) ব্লকের সোমড়ার জমিদার বংশের উত্তরসূরিরা ৷
এই পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভাস্কর বিশ্বাস ৷ তিনি জানান, প্রায় 250 বছর আগে সুখরিয়া গ্রামে এই জমিদারির পত্তন হয়েছিল শ্রীপুরের মিত্র মুস্তাফি পরিবারের হাত ধরে ৷ বাড়ির ঠাকুরদালানটি তৈরি করিয়ে ছিলেন পরিবারের তৎকালীন কর্তা শ্রী রাধাজীবন মিত্র মুস্তাফি ৷ বসবাসের জন্য বিরাট অট্টালিকা নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মন্দিরও তৈরি করিয়ে ছিলেন তিনি ৷ জমিদারি ছাড়াও নিজস্ব ব্যবসা ছিল তাঁর ৷ রাধাজীবনের সন্তান বলতে ছিলেন তিন কন্যা এবং এক পুত্র ৷ কিন্তু, সেই ছেলে অকালেই চলে যায় ৷ এই ঘটনায় একেবারে ভেঙে পড়েন রাধাজীবন ৷ তখন জমিদারির হাল ধরেন রানাঘাটের জমিদার বংশের সন্তান বিনোদবিহারী বিশ্বাস ৷ এই বিনোদবিহারীর সঙ্গে রাধাজীবনের এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে বিনোদবিহারীর হাতেই জমিদারি তুলে দেন রাধাজীবন ৷ পরিবারের জামাইয়ের হাতে জমিদারির বহর আরও বাড়ে ৷ ফুলে-ফেঁপে ওঠে পারিবারিক ব্যবসা ৷ ফলে বিনোদবিহারীর আমলে জমিদার বাড়ির বৈভবও বেড়ে যায় ৷
আরও পড়ুন: শরিকি বিবাদে আর্থিক সংকটে ধুঁকছে 409 বছরের প্রাচীন পুজো
অর্থের অভাব ছিল না ৷ তাই বছরভর জমিদার বাড়িতে উৎসব, পুজো, অনুষ্ঠান- এসব লেগেই থাকত ৷ দশভূজার পুজো তো ছিলই ৷ সঙ্গে হত আনন্দময়ী কালীর পুজো ৷ এছাড়াও দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা এবং রাধাকৃষ্ণের নিত্য সেবা হত জমিদার বাড়িতে ৷ এখানকার দুর্গাপ্রতিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, দেবীর বাহন সিংহ এখানে ঘোটকরূপী ৷ আগে পুজো হত শাক্ত মতে ৷ সেই সময় ছাগ ও মহিষ বলি হত ৷ পরবর্তীতে বৈদিক এবং বৈষ্ণব মতের মিশেলে পুজো শুরু হয় ৷ ফলে প্রাণী হত্যা পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷
এই বাড়িতেই সিনেমার শুটিং করেছিলেন মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালক ৷ এখন অবশ্য সে সবই অতীত ৷ বর্তমানে জমিদার বাড়িতে ঘরের সংখ্যা 108 ৷ কিন্তু, তার অধিকাংশই আর বাসযোগ্য নেই ৷ এই বিরাট সম্পত্তি সংস্কারের সাধ্য এখনকার প্রজন্মেরও নেই ৷ তবে, জমিদার বাড়ির মন্দিরগুলি ইতিমধ্যেই সংস্কার করা হয়েছে ৷ পরিবারের সদস্যদের দাবি, বিশ্বাসদের এই মন্দিরের অনুকরণেই তৈরি হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির ! এইসব ইতিহাস পাথেয় করেই আবারও উমার আবাহনের (Durga Puja 2022) তোড়জোড় শুরু হয়েছে সোমড়ার জমিদার বাড়িতে ৷