সিঙ্গুর, 24 মে : সিঙ্গুরে উলটপুরাণ। নিজেদের দাবি আদায়ে পথে নামলেন সিঙ্গুরের কৃষকরা । প্রসঙ্গ সেই কারখানা কেন্দ্রীক। তবে এ বার কারখানার বিরোধিতায় নয়, কারখানার জন্য । আরও একটা বৈপরিত্য আছে। সে বার কারখানার বিরোধিতায় পথে নেমেছিল তৃণমূল, এ বার পথে নামল BJP।
লোকসভা ভোটে হুগলি থেকে জয়ী হয়েছেন BJP-র লকেট চট্টোপাধ্যায় । অনেকটা অপ্রত্যাশিত এই জয়ের পরই সিঙ্গুর প্রসঙ্গে মুখ খুললেন লকেট । বললেন কারখানার কথাও । লকেটের কথায়, ''আমি চাই সিঙ্গুরে শিল্প ফিরে আসুক । '' আর লকেট যে দিন সিঙ্গুর ইশুতে মুখ খুললেন, সে দিনই কারখানার দাবিতে পথে নামলেন BJP-র কিষাণ মোর্চার সদস্যরা । সঙ্গে ছিলেন জমিদানে ইচ্ছুক কৃষকরাও ।
বাম আমলে সিঙ্গুরে TATA দের কারখানা করা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলনকে চরম মাত্রা দিয়েছিলেন মমতা । সে দিনের বিরোধী নেত্রী মমতা আজকের মুখ্যমন্ত্রী । প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পরই সিঙ্গুর নিয়ে দেওয়া তাঁর কথা রাখেন মমতা । অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেন । কিন্তু, ততদিনে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে । জমির চরিত্র অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে । কারণ, ততক্ষণে সিঙ্গুরের জমিতে কারখানায় অনেকটাই কাজ তৈরি হয়ে গেছিল । ফলে জমি ফেরত এলেও তাতে চাষ করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন ছিল ।
এভাবেই কেটে গিয়েছে প্রায় 10টি বছর । এখনও অথৈ জলে সিঙ্গুরের অনেক কৃষক । চাষ করতে ও জমি ফেরত পেতে বহু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়-হচ্ছে সিঙ্গুরের কৃষকদের । এমনই একজন প্রশান্ত সাঁতরা । তাঁর কথায়, " আড়াই বিঘা জমি শিল্পের জন্য দিয়েছিলাম। এখানে কারখানা হল না। চাষাবাদও হল না। '' রাজনৈতিক মহলের অনুমান, সেই ক্ষোভকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে BJP ।
আর যারা সিঙ্গুর আন্দোলন করে ক্ষমতার অলিন্দে এসেছিল, সেই তৃণমূল কী বলছে ? সিঙ্গুর আন্দোলন যাঁকে পরিচিতি দিয়েছিল, সেই বেচারাম মান্নার দাবি, টিভিতে মুখ দেখানোর জন্য এমন সব কথা বলা হচ্ছে । তাঁর প্রশ্ন, এখানে চাষ হচ্ছে, ফলে কারখানার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে? তিনি আরও বলেন, ''এটা কোনও কৃষকের আন্দোলন নয় । তখন যাঁরা CPM করত, এখন তাঁরাই BJP হয়েছে । এসব তাঁদের কাজ । '' অন্যদিকে, শিল্প বিকাশ সমিতির সভাপতি উদয়ন দাস বলেন, ''প্রধানমন্ত্রী নিজে এখানে কারখানা করার উদ্যোগ নিলে আমরা পাশে থাকব । '' একইসঙ্গে, সিঙ্গুরে পড়ে থাকা অনেক ফাঁকা জমি নেয়ে কটাক্ষও করতে শোনা যায় তাঁকে ।