খানাকুল, 4 সেপ্টেম্বর: পেশায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক (Head Master) ৷ কিন্তু তিনিই এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বহুরূপী সেজে ৷ কপালে বড় সিদূরের টিপ ৷ গাল লাল-সবুজে রাঙানো ৷ গলায় প্ল্যাকার্ড ৷ নাম তাঁর গোলাপসুন্দরী ৷
তবে কীসের জন্য তাঁর এই রূপ ?
বাল্য বিবাহের (Child Marriage) বিরুদ্ধে প্রচার ও মানুষকে সচেতন করতেই এই রূপ ধারণ করেছেন হুগলির খানাকুলের মাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৷ আসল নাম দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (Teacher Debashis Mukherjee) ৷
সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar) বাল্য বিবাহ বন্ধের জন্য লড়াই করেছিলেন ৷ আর তাঁকে অনুসরণ করেই সেই পথে হাঁটলেন শিক্ষক দেবাশিস ৷ সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাল্য বিবাহ রোধে প্রচার অভিযানে একক প্রচেষ্টা শিক্ষকের । গোলাপসুন্দরী সেজে শুধু হুগলি নয়, ভিন জেলা এমনকী অন্য রাজ্যেও তিনি প্রচারে যান । শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে ছুটির দিন এলেই বেরিয়ে পড়েন বহুরূপী সেজে ।
আরও পড়ুন: তপন কান্দু খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার ভাড়াটে শুটার
মহিলার বেশে রাস্তায়, মন্দির বা বিভিন্ন মেলায় ঘুরে ঘুরে প্রচার করেন দেবাশিস । পড়াশোনা শেখানোর পরও সমাজ গড়ার কারিগর হিসাবে ব্রতী হয়েছেন তিনি । লক্ষ্য একটাই হুগলি জেলা থেকে শুরু করে রাজ্য বা দেশে বাল্য বিবাহ রোধ করা এবং মানুষকে সচেতন করা ।
প্রসঙ্গত, গত আর্থিক বছরে শুধু হুগলিতে 550টি বাল্য বিবাহ রোধ করেছে চাইল্ড লাইন । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অহরহ ঘটে চলেছে এমন সব ঘটনা । সরকারি তরফে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোথাও যেন খামতি থেকেই যায় । কন্যাশ্রী, রূপোশ্রীর মতো প্রকল্প করার পরও এখনও অজ্ঞতা রয়েই গিয়েছে মানুষের । হুগলি জেলায় পাণ্ডুয়া, বলাগর,পোলবা খানাকুল,জাঙ্গিপাড়া-সহ একাধিক ব্লকে এই ধরনের বাল্য বিবাহের অভিযোগ ওঠে আসছে ।
সরকার পুলিশ, ব্লক প্রশাসন, কন্যাশ্রী ক্লাব ও আশা কর্মীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাচ্ছে । স্কুলে গিয়ে সচেতন করা সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে । সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে । আর একজন শিক্ষক হিসাবে তাই ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি সমাজ সংস্কারের পথ বেছে নিয়েছেন দেবাশিস ।
সম্পূর্ণ নিজের খরচায় বহুরূপী সেজে দিনের পর দিন বাল্য বিবাহ রোধের প্রচারের জন্য ছুটে গিয়েছেন তিনি । কখনও বেড়াতে গিয়ে, আবার কখনও শ্রাবনী মেলায় তারকেশ্বর বা তারাপীঠের মন্দিরে মানুষকে সচেতন করেন দেবাশিস । হুগলির প্রবাদ প্রতিম রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রোধ করেছিলেন । সেই খানাকুলের শিক্ষক হয়ে সমাজ সচেতনতার একক প্রচেষ্টা তাঁর । সরকারি ক্ষেত্রেও দেবাশিসকে ডাকা হয় । তাঁর আবেদন, তিনি যেমন এগিয়ে এসেছেন । সমাজের প্রতিটা স্তরের মানুষ এগিয়ে আসুক এই উদ্যোগে । সরকারি তরফে তাঁকে কাজে লাগানো হোক সমাজ সচেতনতায় । শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে শিক্ষক দিবসে কুর্নিশ জানায় ইটিভি ভারত ।
দেবাশিস বলেন, "মেয়েদের বাল্য বিবাহ হওয়ায় তারা নানারকম রোগের শিকার হচ্ছে । পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । মেয়ের বিয়ে দিলেই একটা বোঝা কমে যাবে, এই অজ্ঞতা গ্রামের মানুষের মধ্যে আজও আছে । তাই আমার এই বহুরূপী সাজা । বাংলার লোক শিল্প হিসাবে গ্রহণ যোগ্যতা পাই আমি । করোনাকাল থেকেই বহুরূপী সেজে নানা ধরনের প্রচার করেছি । সরকারি স্তরে আরও প্রচার করতে হবে । ছুটির দিন বা স্কুলনছুটির পরেই আমি প্রচারে যাই ।"
খানাকুল-1 ব্লকের বিডিও শান্তুনু চক্রবর্তী বলেন, "প্রতিটি পঞ্চায়েতে শনিবার বৈঠক করা হয় । কন্যাশ্রী ক্লাব করা হয়েছে । দেবাশিস মুখোপাধ্যায় নিজের প্রচেষ্টায় বাল্য বিবাহ রোধের কাজ করছেন । সরকারি অনুষ্ঠানে আমরা আমন্ত্রণ জানাই তাঁকে । শিক্ষক দিবসে উপযুক্ত শিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন তিনি ।"