চন্দননগর, 15 মার্চ : মানসিকভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের পাশে থাকেন চন্দননগরের 75 বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক (a Retired Teacher of Hooghly Helps the Cancer Patients) ৷ ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীর মৃত্য যন্ত্রণা দেখার পর থেকেই এইভাবে ক্য়ানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর শুরু তাঁর ৷
হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক ছিলেন ডঃ প্রণব বসু ৷ চন্দননগরের (Chandannagar News) বাসিন্দা এই শিক্ষক 2008 সালে অবসর নেওয়ার পর তাঁর স্ত্রী শুক্লা দেবী কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৷ এরপর মুম্বইয়ে টাটা রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে জানতে পারেন, কোলন ক্যানসার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ৷ খুব বেশি হলে আর বছরখানেক বাঁচবেন স্ত্রী ৷ এরপর স্ত্রী শুক্লাদেবীকে নিয়ে ব্যারাকপুরের প্যালিয়েটিভে যান ৷ সেখানে দেখা হয় একজন ক্যানসার রোগী যাতে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় ৷ যন্ত্রণা কমানোর জন্য স্ত্রীকে এই চিকিৎসা দিতে শুরু করেন ৷ বুঝেছিলেন মানসিক যন্ত্রণা থেকে উপশম দেওয়া এই চিকিৎসার গুরুত্ব ৷ তাই নিয়ম করে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে নিয়ে যেতে থাকেন স্ত্রীকে ৷ এই চিকিৎসায় আড়াই বছর বেঁচে ছিলেন প্রণববাবুর স্ত্রী ৷
স্ত্রীর শেষ সময়ের যন্ত্রণা বিহ্বল করে তুলেছিল অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষককে ৷ চার বছর আগে সহধর্মিনীকে হারিয়ে তাঁর মৃত্যু যন্ত্রণার কথা ভেবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে সচেষ্ট হন ৷ শুরু হয় প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে তাঁর পড়াশোনা ৷ অনলাইন থেকে শুরু করে অফলাইনে বই পড়ার পাশাপাশি এই পড়াশোনার জন্য একাধিক সার্টিফিকেটও পেয়েছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Sweet Lime Peels in Cancer Prevention : মুসাম্বির খোসাই রুখতে পারে ক্যানসার, জানালেন গবেষকরা
কী এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার ? ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কীভাবে কাজ করে এই চিকিৎসা ?
ক্য়ানসার আক্রান্ত রোগীরা শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন ৷ প্যালিয়েটিভ কেয়ার হল সেই চিকিৎসা, যার মাধ্যমে রোগীদের মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উপশম দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ৷ বাংলায় এই চিকিৎসার তেমন চল না থাকলেও কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও মণিপুরে আছে । প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সামগ্রিক সেবা প্রদান করা হয় । শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক যন্ত্রণা কমিয়ে তাকে আরাম প্রদানের চেষ্টা করা হয় । শুধু রোগীকে নয়, তার পরিবারকেও মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয় । একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া ও আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ৷
কীভাবে কাজ করেন প্রণববাবু ?
দীর্ঘ পড়াশোনার পর প্রণববাবু যুক্ত হন ব্যারাকপুরের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সঙ্গে ৷ এর পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের পিন্ডাজোরার কোশিশ হসপিসের সঙ্গে কাজ শুরু করেন ৷ প্রতি মাসে এক বার করে ঝাড়খণ্ড আর সপ্তাহে একদিন করে ব্যারাকপুরে যান প্রণববাবু । চিকিৎসকরা যাঁদের আয়ু বেশি নেই বলে জবাব দিয়ে দেন, তাঁদের প্রথমে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হসপিস’-এ পাঠানো হয় । সেখানে থেকে চিকিৎসা চলে ৷ আর যাঁরা আসতে পারেন না তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা করেন প্রণববাবু । কখনও কখনও পায়ে হেঁটে প্রায় পাঁচ-ছ‘ কিমি দূরের গ্রামেও যেতে হয় ৷
প্রণববাবু জানান, প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে বহু বিদেশী লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে তাঁর ৷ ভূগোলে পিএইচডি করা এই শিক্ষক প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে বই লিখে ফেলেছেন । সেই বইয়ের নাম 'A Beginner's Guide for Care of the Dying'. এই বইয়ের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ অবগত হবে মনে করেন প্রণববাবু । তবে এবার তিনি বাংলাতেও বই লিখবেন বলে জানান ৷ উদ্দেশ্য একটাই, ক্যানসার রোগীদের মুখে হাসি ফোটানো ৷
আরও পড়ুন : Before You Die: ক্যানসার রোগীর জীবনের টানাপোড়েনের গল্প শোনাবে বিফোর ইউ ডাই