চন্দননগর (হুগলি), 24 মে : গত 22 মে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্য ছাড়াই এভারেস্ট জয় করেছেন চন্দনগরের স্কুল শিক্ষিকা পিয়ালী বসাক ৷ কিন্তু, তাঁর এই কৃতিত্ব স্বীকৃতি পাবে কি ? এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ কারণ, এভারেস্ট অভিযানের সিকিউরিটি পারমিটের 4 লক্ষ টাকা এখনও জমা করতে পারেননি পিয়ালী বসাক ৷ সেই টাকা জমা না-করতে পারলে তাঁর কৃতিত্ব স্বীকৃতি পাবে না (Recognition of Everest Conquest of Piyali Basak is on Hold for not Submit Security Money) ৷ হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিংয়ের শংসাপত্র হাতে পাবেন না তিনি ৷ আর তাঁর এই স্বীকৃতি লাভের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রাউড ফান্ডিং ৷
চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকা 31 বছরের পিয়ালী বসাক ৷ ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ের প্রতি ভালবাসা তাঁর ৷ সেই ভালবাসার টানেই পর্বতারোহণ শুরু ৷ প্রথমে চন্দনগর মাউন্টেনিয়ারিং স্কুল, তার পর হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পিয়ালী ৷ ধৌলাগিরির শৃঙ্গ জয়ের পর এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্য ছিল তাঁর ৷ আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এভারেস্ট জয়ের প্রস্তুতি নেন তিনি ৷ এভারেস্ট ও লোৎসে জয় করার উদ্দেশ্যে বের হন তিনি ৷
কিন্তু, এই দুই পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে 35 লক্ষ টাকা জমা করতে হত পিয়ালীকে ৷ তার বদলে 25 লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে ৷ তাও পুরোটাই বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে সেই টাকা জোগাড় করেছেন পিয়ালী ৷ আর সেই টাকার মধ্যে 15 লক্ষ টাকা জোগাড় করে দিয়েছে রোটারি চন্দননগর ক্লাব ৷ এখনও 10 লক্ষ টাকা জমা করা বাকি রয়েছে ৷ তার মধ্যে সিকিউরিটির 4 লক্ষ টাকা জমা না করায় এভারেস্ট অভিযানের পারমিট পাচ্ছিলেন না পিয়ালী ৷ ক্যাম্প 4 থেকে তিনি একটি ভিডিয়ো বার্তায় আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন ৷ সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছিল চন্দননগর রোটারি ক্লাব ৷ তাদের এক সদস্য তাপস সাহা পিয়ালী সিকিউরিটি মানির 4 লক্ষ টাকার গ্যারেন্টার হন ৷ তার পর পিয়ালী এবং তাঁর শেরপা অভিযান শুরু করার পারমিট পান ৷
আরও পড়ুন : Piyali Basak Conquers Mount Everest : অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্ট চূড়ায় বঙ্গকন্যা পিয়ালী
গত 22 মে এভারেস্টের চূড় স্পর্শ করেন পিয়ালী বসাক ৷ তাও অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্য় না নিয়েই ৷ তার পর ক্যাম্প 4-এ নেমেও এসেছেন ৷ কিন্তু, নিজের এই অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি তিনি এখনও পাননি ৷ কারণ, সিকিউরিটি মানির 4 লক্ষ টাকা তিনি করতে পারেননি ৷ চন্দননগর রোটারি ক্লাবের সদ্যরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ কিন্তু, যে টাকা মাউন্টেনিয়ারিং এজেন্সিকে জমা না দিলে সাফল্যের স্বীকৃৃতি অধরা থেকে যাবে পিয়ালীর ৷ গত কয়েকবছরের সব লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাবে ৷
তাই তাঁর পরিবার এবং পরিচিতদের একটাই দাবি রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার পিয়ালীর পাশে এসে দাঁড়াক ৷ কারণ, এই লড়াই একা পিয়ালীর হলেও, তা স্বীকৃতি পেলে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের নাম বিশ্বের মঞ্চে আরও একবার উজ্জ্বল হবে ৷ যে সম্মান পিয়ালীর মতো আরও অনেককে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন দেখাবে ৷ স্বপ্নকে বাঁচতে শেখাবে ৷
জানা গিয়েছে, পিয়ালী এই মুহূর্তে ক্যাম্প 4 থেকে তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য লোৎসে অভিযানে বেরিয়েছেন ৷ এভারেস্ট থেকে নামার সময় তাঁর চোখে চোট লেগেছিল বলে জানা গিয়েছে ৷ ক্যাম্প 4 এ বিশ্রাম নিয়ে সোমবার রাতে লোৎসে অভিযানে বেরিয়েছেন তিনি ৷ এই মুহূর্তে পিয়ালীর জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁর অবস্থান জানা যাচ্ছে না ৷ তবে, লোৎসে জয় করে ফেরার পর, দুই অভিযানের সাফল্যের শংসাপত্র হাতে পাবেন পিয়ালী ৷ কিন্তু, তার আগে বকেয়া 10 লক্ষ টাকা জমা করতে হবে ৷ তা না হলে এই বাঙালির কন্যার সাফল্য হিমালয়ের কোলেই হারিয়ে যাবে ৷