হিন্দমোটর, 2 ডিসেম্বর: তিনদিন ধরে মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখল ছেলে । ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির হিন্দমোটের এক নম্বর বিএন দাস রোডের একটি আবাসনে ৷ জানা গিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে ছেলে শুভ্রদীপের সঙ্গেই থাকতেন কল্যাণী হাজরা নামে 65 বছরের এক বৃদ্ধা ৷ শুভ্রদীপের মানসিক সমস্যা রয়েছে ৷ গত তিনদিন ধরে দরজা বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটের, বের হচ্ছিল দুর্গন্ধ । শনিবার প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দিলে, পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে এসে তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করে ৷ মৃতা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে ৷
প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মাঝে ক'দিন কাজে আসেননি ওই ফ্ল্যাটের পরিচারিকা গীতা দাস ৷ এদিন কাজ করতে এসেই তিনিই প্রথম গন্ধ পান ৷ দেখেন, বৃদ্ধার নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে ৷ তা দেখেই সন্দেহ হয় পরিচারিকার । তখন ছেলে শুভ্রদীপকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, মা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে আছে । আগে থেকেই প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়েছিল । এদিন পরিচারিকারও বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় ৷ অভিযোগ, তিনি ঘটনার কথা প্রতিবেশীদের জানানোর জন্য ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে আটকে রাখে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। পরিচারিকাকে ফ্ল্যাটের ভিতরে বেশ কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর তাঁর চিৎকার চেঁচামেচিতে ভয়ে দরজা খুলে দেয় শুভ্রদীপ ।
কিন্তু পরিচারিকা ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর পরেই আবারও দরজায় তালা দিয়ে দেয় ওই যুবক ৷ প্রতিবেশীদের অনুরোধে সে দরজা না-খোলায় খবর দেওয়া হয় পুলিশে । স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর কংস বণিক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বৃদ্ধার মৃতেদহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় । বৃদ্ধার ছেলেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
যুবকটির সঙ্গে কথা বলে তার আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে পুলিশ । শুভ্রদীপ দাবি করেছে, স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে তাঁর মায়ের চিকিৎসা চলছিল ৷ বৃদ্ধা ওষুধও খেয়েছিল । মায়ের যে মৃত্য হয়েছে তা মানতেই চাইছেন না ওই যুবক ৷
মৃতার এক আত্মীয়া সোমা হাজরা বলেন, "ওনার ছেলে মানসিক ভাবে অসুস্থ । বয়সজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন কল্যাণী দেবী । আমরা খবর পেয়ে এসেছি ।" কাউন্সিলর প্রবীর কংস বণিক জানিয়েছেন, এলাকার মানুষের সাথে সেভাবে মেলামেশা করতেন না কল্যাণী দেবী ও তাঁর ছেলে। আশেপাশে আত্মীয়-স্বজন থাকলেও তাদের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখতেন না। তাঁর অসুস্থতার খবর আগে জানা যায়নি। সেই কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: