সিঙ্গুর, 12 জুলাই: জমি আন্দোলনের পিঠস্থান সিঙ্গুরের আস্থা সেই মমতার উপরেই রইল । আগের নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতিতে শূন্য ছিল বিরোধীরা ৷ এবার তারা দু’টি আসন পেয়েছে সমিতিতে । রাজ্যের বিরোধীরা যখন শিল্প ও দুর্নীতি নিয়ে সুর চড়াচ্ছিল, শিল্পবিহীন সিঙ্গুরকে হাতিয়ার করছিল সিপিএম ও বিজেপি, তখন সিঙ্গুরের ভোটারদের রায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই রইল ৷
সিঙ্গুরে গ্রাম পঞ্চায়েতে 158টি আসনের মধ্যে সিপিএমের অনেক আসন বেড়েছে । পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিঙ্গুরের 16টি গ্রাম পঞ্চায়েতের 16টি পঞ্চায়েতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির 48টি আসনের মধ্যে দু’টি করে আসন সিপিএম ও বিজেপি পেয়েছে । বাকিটা তৃণমূলের দখলে । জেলা পরিষদের তিনটের মধ্যে সব ক’টিই তৃণমূল দখলে ।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে ফল ভালো হয়েছে ৷ গতবারের ভোটের চেয়ে এবার বিরোধীদের আসন কমানো ৷ সেই লক্ষ্যে অনেকটা সফল হওয়া গিয়েছে ৷ এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের শান্তি-সম্প্রীতির জয় ৷’’ অন্যদিকে সিঙ্গুরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গোবিন্দ ধারা বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে উন্নয়নের ধারা ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে জন্যই মানুষ তৃণমূলের পাশে আছে ।’’
আরও পড়ুন: এক দশক পর জেলায় খাতা খুলেছে বিরোধী, আবীর খেলায় মাতলেন কর্মীরা
যদিও এই জয় মানুষের রায় নয় বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা ৷ সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ’’মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপরই নির্ভর করে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে । বাংলার মায়েরা চুরি করার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে । সন্ত্রাস না হলেও ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে । এজেন্টরা দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিয়েছে ভোটারদের ।’’ আরেক বিজেপি নেতা সঞ্জয় বর্মনও একই কথা বলেছেন ৷
সিপিএম নেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের ভোট ভাগাভাগিতে তৃণমূলের জয় এসেছে । সিঙ্গুরে শিল্প ও দুর্নীতি নিয়ে সর্বদাই আন্দোলন করছি । সেক্ষেত্রে প্রভাব অবশ্যই পড়েছে । সেই কারণেই সিঙ্গুর বিধানসভায় 6টি থেকে 27টি আসন বেড়েছে । তবে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেরকম ফল হয়নি । মানুষ সবকিছুই বুঝতে পারছে । প্রকৃত তৃণমূল বিরোধী হিসাবে কিছুটা দুর্বলতা আছে, সেটা কাটিয়ে অবশ্যই আগামিদিনে জয়লাভ করব ।’’
প্রসঙ্গত, 2006 সালে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন শুরু হয় টাটার কারখানা তৈরিকে কেন্দ্র করে । সিঙ্গুরে তিন ফসলি জমি না দেওয়ার দাবিতে জমি আন্দোলনের সূচনা হয় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে ধরনায় বসেছিলেন ৷ কলকাতায় অনশনও করেছিলেন ৷ 2011 সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার জন্য ওই আন্দোলন তৃণমূলের পথ অনেকটাই প্রশস্ত করেছিল ৷ দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে আদালতের নির্দেশে 2016 সালে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ।
আরও পড়ুন: ' নির্দল নয়, ভোট হয়েছে তৃণমূলের প্রতীকে', জয়ের পর মন্তব্য তৃণমূল বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের
পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা-লোকসভা, সবক্ষেত্রেই তৃণমূলের প্রতি আস্থা রেখেছেন ভোটাররা ৷ 2021 সালের জমি আন্দোলনে মমতার অন্যতম সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সিঙ্গুর থেকে বিজেপিতে দাঁড়িয়েও জিততে পারেননি ৷ তেমনই এবারও আন্দোলনের অন্যতম মুখ দুধকুমার ধারা ও বেরাবেড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান দীপঙ্কর ঘোষ-সহ কয়েকজন প্রার্থী করেনি তৃণমূল ৷ তার পরও সেখানে ঘাসফুলের জয় অব্যাহত রইল ৷