ফুরফুরা শরিফ, 10 অগস্ট: ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল । পঞ্চায়েতে তালা ঝোলানোর ও এলাকায় বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে গতকাল রাত থেকেই । আজ বোর্ড গঠনের আগেই পুলিশকে লক্ষ্য করে চলল ইঁট বৃষ্টি । পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায় হুগলি গ্রামীণ পুলিশ । স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বন্ধ করে দেন দোকানপাট । পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । গোটা ঘটনায় আহত হন একাধিক পুলিশ কর্মী-সহ বেশ কয়েকজন ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে শুরু হয় গণ্ডগোল । তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম ও আইএসএফ একযোগে জোট বেঁধে ভোটের ময়দানে নামে ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জয়লাভ করলেও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনে বাম ও আইএসএফ । তাদের দাবি, তারা 22টি আসনে জিতেছিল । কিন্তু গণনা শেষ হওয়ার আগেই জোর করে তাদের বের করে দেওয়া হয় । এরপর জানা যায় ফুরফুরা পঞ্চায়েতে 29টি আসনের মধ্যে 24টি পেয়েছে তৃণমূল ৷ আর আইএসএফ ও সিপিআইএম জোট পেয়েছে 5টি আসন ।
এই নিয়েই বোর্ড গঠনের সময় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফের উত্তেজনা ছড়ায় দুই শিবিরের মধ্যে ৷ সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তালা বন্ধ করে রাখা হয় পঞ্চায়েত । পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে কয়েকজন আইএসএফ কর্মী ও স্থানীয় মানুষজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছুড়তে আরম্ভ করে বলে অভিযোগ । উত্তেজিত জনতাকে সরাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায় । সেই শেল ফেটে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর বাড়ির কাঁচ ভাঙার অভিযোগ ওঠে । উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান নওশাদ ।
পুলিশের এই কাজের প্রতিবাদে রাস্তায় বসে আন্দোলন শুরু করেন আইএসএফ বিধায়ক । পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও উত্তেজনা কমেনি ফুরফুরায় । ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় অ্যাডিশনাল এসপি লাল্টু হালদার-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন । এছাড়াও বেশকয়েকজন স্থানীয় মানুষ আহত হন । এরপর ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতে পুলিশি নিরাপত্তায় বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হয় । হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তরফে পুলিশ বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয় ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে রণক্ষেত্র গাজোল, আক্রান্ত পুলিশ
বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর অভিযোগ, "পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে আমার বাড়ির কাঁচ ভেঙেছে । পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ বলছে আমার লোক বোমা মেরেছে । তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে অশান্তি করতে । গতকাল থেকে বোমাবাজি করে তাণ্ডব চালিয়েছে । পুলিশ সম্পূর্ণ দালালি করেছে ।একজন বিধায়কের বাড়ির উপর হামলা চালানো হচ্ছে । পুলিশের কর্মকাণ্ডের জন্য সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে । তৃণমূল বোর্ড গঠন করুক আমরা আদালতে গিয়েছি । মামলায় জয় হলে আমরা আবার ফুরফুরা পঞ্চায়েত দখল করব ।"
ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান শামিম আহমেদ বলেন, "গতকাল রাত থেকে বোমাবাজি করেছে । আইএসএফ পঞ্চায়েতে একটা তালা মেরেছে । পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে । ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে ৷ গণনা শান্তিপূর্ণ হয়েছে ৷ বোর্ড গঠনও শান্তিপূর্ণ হয়েছে । শান্ত ফুরফুরা শরিফকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে । ওরা আদালতের এমন কোনও অর্ডার দেখাতে পারেনি যেখানে বলা আছে বোর্ড গঠন করা যাবে না । তাই বোর্ড গঠন হয়েছে । তাতে ফুরফুরা পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন রাজিয়া সুলতানা, উপপ্রধান মৃগাঙ্ক মোহন মাল ।"
ফুরফুরার পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির অভিযোগ, "চক্রান্ত করে শান্ত ফুরফুরায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করা হয়েছে । এতে ফুরফুরার মানুষ যুক্ত নন । বহিরাগতরা এসে গণ্ডগোল পাকিয়েছে । প্রাক্তন প্রধান শামিম আহমেদ এ বার জেলা পরিষদ থেকে জিতেছেন । তাঁকে বদনাম করতেই এই প্রচেষ্টা । মুখ্যমন্ত্রীকে বলব দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে ।" তৃণমূলের কেউ এই গণ্ডগোলে ছিল না দাবি করেন ত্বহা সিদ্দিকীর ।