হিন্দমোটর (হুগলি), 13 ডিসেম্বর: হিন্দমোটরের জমি অধিগ্রহণ (Hindmotor Land Acquisition) করতে এসেও ভেস্তে গেল পরিকল্পনা । শিল্পের জায়গায় শিল্প হবে, এই পরিকল্পনা নিয়ে অ্যাম্বাসাডার কারখানার জমি অধিগ্রহণের কর্মসূচি নেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে । মঙ্গলবার সকাল থেকে হিন্দমোটর কারখানার গোটা চত্বর পুলিশে ভর্তি করে দেওয়া হয় । তবে এই বিষয়ে কিছু নথিপত্রের সমস্যার কারণে ফিরে যেতে হয় প্রশাসনকে ।
হুগলির (Hooghly) জেলা শাসক পি দীপাপ প্রিয়া জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু সমস্যা আছে ৷ তাই আজই ফিজিক্যালি পজিশন নেওয়া বাতিল করা হয়েছে । পরে আলোচনা করে দিন ঠিক করা হবে । জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে । সেই জমিতে সরকারি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হবে । আজই শ্রীরামপুর মহকুমা অফিসে শ্রমিক আবাসিকদের নিয়ে বৈঠক করা হয় ।
গত আট বছর ধরে বন্ধ হিন্দমোটরের হিন্দুস্থান মোটর কারখানা (Hindustan Motors) । সেই কারখানার অব্যবহৃত 395 একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্যের ভূমি দফতর । আজ সেই জমি ফিজিক্যালি পজিশন নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল হুগলি জেলা প্রশাসন । জেলা শাসক ও ভূমি দফতরের আধিকারিকরা যাবেন হিন্দমোটরে, তাই প্রস্তুত ছিল পুলিশও । হঠাৎই জেলা প্রশাসন আজকের এই কর্মসূচি বাতিল করে ।
প্রায় 700 একরের বেশি জমি রয়েছে হিন্দুস্থান মোটরের । তার মধ্যে 300 একর বেঙ্গল শ্রীরামকে দেওয়া হয়েছে আবাসন শিল্পের জন্য । কিছু জমিতে টিটগড় ওয়াগন যেটা রেলের কোচ তৈরি হয়, তাদের কারখানা রয়েছে । সেই টিটাগড় ওয়াগান কারখানাতেই (Titagarh Wagon Factory) গত জুলাই মাসে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন শিল্পের কথা ।
1948 সালে উত্তরপাড়ায় হিন্দুস্থান মোটরের অ্যাম্বাসাডার কারখানা পথচলা শুরু করে । 2014 সালে সাসপেনশান অফ ওয়ার্কের নোটিশ ঝোলে । কাজ বন্ধ হয়ে যায় । সেই সময় প্রায় 2300 শ্রমিক ছিল কারখানায় । অনেক আন্দোলন শ্রমিক প্রতিবাদেও কারখানার গেট খোলেনি । হিন্দুস্থান মোটরের অব্যাহত জমিতে জঙ্গলে ভরে যায় । অবশেষে সরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় । প্রায় দু’মাস শুনানির পর অবশেষে জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হয় । মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন হতে দেখে শ্রমিক মহল্লায় চাঞ্চল্য তৈরি হয় । অনেকেই বলেন, আর কী হবে সব তো শেষ । অনেকে অবশ্য আশাবাদী, সরকার যদি এই জমিতে কিছু করে তাদের জন্য । কারখানার জমিতে কারখানার দাবি সিটুর ।
এর আগে হুগলির সাহাগঞ্জের বিখ্যাত ডানলপ কারখানা অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার । কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি । ডানলপের শ্রমিকদের ভাতার ব্যবস্থা করে সরকার । হিন্দুস্থান মোটরের শ্রমিকরা অনেকেই ভিআরএস নিতে বাধ্য হয়েছেন । বর্তমানে প্রায় 300 শ্রমিক রয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয় । তবে শ্রমিকরা চাইছেন শিল্প ।
সিটুর মণীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরাম ও টিটাগড় ওয়াগন কারখানার জমিতে থাবা বসানোর চেষ্টা করছে । এদিকে রাজ্য সরকার কারখানা খোলার উদ্যোগ দেখাচ্ছে না । শিল্প হলে অবশ্যই ভালো, স্বাগত জানাচ্ছি । তবে কারখানা চালু হলে শ্রমিকদের সুযোগ দিতে হবে ।’’
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় হিন্দমোটর কোম্পানিকে এই বিশালাকার জমি লিজে দিয়েছিল । হিন্দমোটর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিশালাকার জমি পড়ে রয়েছে । আমাদের সরকারের লক্ষ্য যেসব বন্ধ কারখানা গুলো রয়েছে, তার অব্যবহৃত জমি পড়ে রয়েছে, সেখানে নতুন শিল্প গড়ার । সেই হিসাবে হিন্দমোটরের 395 একর যে জমি রয়েছে, সেটাই সরকার নেবে । কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে, আমরা সত্ত্বর জমিটা নেব, শিল্প উদ্যোগীদের দেব, তবে শিল্প গড়তে হবে । সেখানে কর্মসংস্থান হবে, রাজ্যের উন্নয়ন হবে, এগুলো শিল্প কারখানা হলেই হয় । তবে আজ কিছু কাগজ পত্রের ত্রুতির কারণে অধিগ্রহণ করা বাতিল হয়েছে ।’’ জেলাশাসক জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে, আর জমি নেওয়া হবে ।
আরও পড়ুন: তৈরি হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি-বাইক, হিন্দমোটর কারখানার পুর্নজন্মের অপেক্ষায় শ্রমিকরা