দেবানন্দপুর, 29 জুলাই: বিনা চিকিৎসায় পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। এমনই অমানবিক ছবি ধরা পড়ল হুগলির দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের কাজিডাঙা এলাকায়। দীর্ঘ 20 বছর ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। প্রথমদিকে, চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হলেও পরে আর্থিক অভাবের কারণে সেভাবে কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না তাঁর। পরিবারে সকলে থাকলেও সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। অগত্যা একটি টিনের ছোট ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে পঞ্চাশ বছরের কাজল পালকে ।
একমাত্র ভরসা বলতে বৃদ্ধ মা। কিন্তু দু'বেলা খেতে দেওয়া ছাড়া তাঁরও কোনও উপায় নেই। দিনের পর দিন এভাবেই শিকল বাঁধা অবস্থায় রয়েছে সেই ব্যক্তি। এলাকা চেঁচামেচি ও উৎপাত করার জন্য তার পরিবার বাধ্য হয়ে তাঁকে বেঁধে রেখে দিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পীযুষ কান্তি ধর জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার চেষ্টা করা হলেও কিছুই লাভ হয়নি। দেবানন্দপুরে কাজি ডাঙায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজল পালের পরিবারের বাস ৷ 20 বছর আগে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো বিয়ে করে সংসার করছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মানসিক ভারসাম্যহীন নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল নেতার ভাই
স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। সন্তানের যখন তিন বছর বয়স তখন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী কাজলবাবুকে ছেড়ে চলে যান। তারপর থেকেই মানসিক অবসাদে চলে যান কাজলবাবু। এলাকায় চেঁচামেচি ও পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা বাড়তে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না-পাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। চুঁচুড়া থেকে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও, আর্থিক অভাবের জন্য সঠিক চিকিৎসা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন বাধ্য হয়ে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে।
তাঁর দু'বেলা খাওয়া ও দেখভাল করার মতো ভরসা বলতে রয়েছে একমাত্র বৃদ্ধ মা। তাঁরও বয়স হয়েছে। সারাদিন বাঁধা অবস্থায় আপন মনে কথা বলেন তিনি। সঠিক চিকিৎসা বা মানসিক হাসপাতালে ভরতি করলে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন কাজলবাবু। ছেলের এই অবস্থা চিন্তা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা বিশাখারানি পাল। তিনি বলেন, "আগে ভালোই ছিল। স্ত্রী ও সন্তান চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে এই অবস্থা হয়ে যায়। অর্থের জন্য চিকিৎসা করানো যায়নি। পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ওকে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমি চাই চিকিৎসা হোক আমার ছেলের।"
আরও পড়ুন: শরীর-মন নিয়ে নাজেহাল ? ভরসা রাখুন মিউজিক থেরাপিতে