পোলবা (হুগলি), 14 জুলাই: "ঘর, দুয়ার, শৌচাগার থাকলে তবেই তো বাংলাটা নির্মল হবে ৷ আমাদের গ্রাম নির্মল হয়নি ৷" ক্ষোভের এই সুর শোনা গেল হুগলির (Hooghly) পোলবা গ্রাম পঞ্চায়েতের (Polba Gram Panchayat) এক আদিবাসী মহিলার গলায় ৷ এই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তাঁদের বঞ্চিত রাখা হচ্ছে ৷ মিলছে না আবাস যোজনার সুবিধা বা বিনামূল্যে শৌচালয় তৈরির সুযোগও ৷ যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ৷
পোলবা গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী পাড়া ৷ ইতিমধ্য়েই এই গ্রামকে 'নির্মল' (Mission Nirmal Bangla) ঘোষণা করা হয়েছে ৷ অথচ, এলাকার অধিকাংশ বাড়িতেই পাকা শৌচালয় নেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের ৷ ফলে শৌচকর্মের জন্য মাঠ, ঘাট, বন-বাদাড়ই ভরসা তাঁদের ৷ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ৷ আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মীমণি মুর্মু জানিয়েছেন, সরকার থেকে প্রায় কোনও সুবিধাই পান না তাঁরা ৷ এমনকী, তাঁদের বাড়িতে কোনও শৌচালয়ও তৈরি করে দেওয়া হয়নি ৷ ফলে এই বর্ষাকালেও মাঠে শৌচকর্ম সারতে যেতে হয় তাঁদের ৷ সেখানে সাপ-খোপের ভয় আছে ৷ তাছাড়া, বাড়ির মহিলাদের পক্ষে শৌচালয় না থাকাটা সবথেকে বড় সমস্যার ৷
আরও পড়ুন: Purulia Forest Office Reopens : মাওবাদী আতঙ্কে বন্ধ পুরুলিয়া বন দফতরের অফিস, আজ থেকে ফের কাজ শুরু
সুনি মুর্মু নামে আর এক মহিলা জানিয়েছেন, বাম আমলে সরকারের তরফে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের ৷ পরবর্তীতে বর্তমান সরকার একটি শৌচাগারও তৈরি করে দেয় ৷ কিন্তু, সেই শৌচালয়ের কোনও দরজা নেই ৷ ফলে পরিবারের সদস্যরা সেটি আর ব্যবহার করেন না ৷
গ্রাম ঘুরে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পোলবার এই আদিবাসী পাড়ায় মোট 90টি পরিবার রয়েছে ৷ তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি পরিবার সরকারি প্রকল্পের আওতায় শৌচাগার পেয়েছে ৷ সেই পাঁচটি শৌচালয়েরও আবার সবক'টির দরজা নেই ! ফলে খাতায়-কলমে এই এলাকা নির্মল হলেও এখনও মাঠে, ঘাটে মল, মূত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷ এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন বাসিন্দারা ৷ তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে বারবার পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি পোলবা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রমেন হালদার ৷ তিনি জানান, গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ৷ এমনকী, আদিবাসী পাড়ায় যে 100-এর কাছাকাছি পরিবারের বাস রয়েছে, তাও মানতে চাননি তিনি ৷ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রমেন জানিয়েছেন, অধিকাংশ বাড়িতেই পাকা শৌচালয় রয়েছে ৷ কিন্তু, অনেকেই বাড়িতে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করেন না ৷ বাকি যে কয়েকটি বাড়িতে এখনও শৌচালয় তৈরি করা হয়নি, খুব দ্রুত তাঁরাও শৌচালয় পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন উপপ্রধান ৷
প্রসঙ্গত, 2018 সালে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলাকে 'নির্মল জেলা' হিসাবে ঘোষণা করা হয় ৷ এই জেলাগুলি হল, হুগলি, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান এবং কোচবিহার ৷ পরবর্তীতে মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও হাওড়া জেলাকেও 'নির্মল জেলা'র স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৷
2012-13 আর্থিক বছরে এই খাতে 254.41 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় ৷ 2017-18 অর্থবর্ষে বরাদ্দের পরিমাণ বহু গুণ বাড়ানো হয় ৷ সেই সময় এ নিয়ে একটি সমীক্ষাও করা হয় ৷ কিন্তু, কাগজে কলমে এত কাজ হলেও আদতে বহু যোগ্য উপভোক্তাই প্রকল্পের সুবিধা পাননি বলে অভিযোগ পোলবার আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের ৷
এই বিষয়ে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ৷ পশ্চিমবঙ্গজুড়েই গ্রামে গ্রামে এমন দুর্নীতি চলছে ৷ এর জন্য শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়ী করেছেন বিজেপি সাংসদ ৷ তাঁর অভিযোগ, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্র কোটি কোটি টাকা পাঠাচ্ছে ৷ কিন্তু, তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা সেই টাকা আত্মসাৎ করছেন ৷ ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৷