চুঁচুড়া, 25 অগাস্ট : নাবালকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে জুনিয়র ডাক্তারকে চড় । পাশাপাশি নার্সদের হেনস্থার অভিযোগ । ঘটনাটি হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । ঘটনায় হাসপাতাল সুপার মৃতের পরিবারের বিরুদ্ধে চুঁচুড়া থানার IC প্রদীপ দাঁয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন । যার জেরে পরে মৃতের পরিবার, চিকিৎসক নরেশ বান্ডেলার পা ধরে ক্ষমা চায় এবং গাফিলতির অভিযোগ তুলে নেয় ।
ভদ্রেশ্বর বিঘাটির বাসিন্দা শুভম পাসোয়ান (7) বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল । চিকিৎসা চলছিল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে । গতকাল সকালে শুভমের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । পরিবারের অভিযোগ, ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তখনই শুভমের চিকিৎসা শুরু করা হয়নি । সেখানে তাকে ফেলে রাখা হয় । নার্সদের একাধিকবার বললেও তাঁরা জানিয়েছিলেন, ডাক্তার এখন নেই পরে আসবে । শুভম ইমারজেন্সি রোগী, এই বলেও কিছু হয়নি । পরে সন্ধ্যা 6.30 নাগাদ শুভমের মৃত্যু হয় । এবিষয়ে তার ঠাকুমা বলেন, "আমরা দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসি । নার্সদের বললেও ওরা কিছু করেনি । বলেছিলাম প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে । একটু দেখুন । ওঁরা বলছিলেন ডাক্তার এলে হবে । তারপর তো চলেই গেল ও ।"
অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল সুপার উজ্জ্বলেন্দু বিকাশ মণ্ডল বলেন, "যাকে এখানে নিগ্রহ করা হয়েছে তিনি তেলাঙ্গানার ট্রেইনি চিকিৎসক । এধরনের ঘটনা সমাজের অবক্ষয় । মানুষের সচেতনতা না বাড়লে এটা রোখা অসম্ভব । এর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।" ঘটনার বিশ্লেষণ করে তিনি আরও বলেন, "যে বাচ্চাটিকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল তার চিকিৎসা চলছিল চন্দননগর হাসপাতালে । আমাদের হাসপাতালের পরিকাঠামোও তো ওখানের মতোই । আমাদের এখানে PICU (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) নেই । উন্নত ব্যবস্থা নেই । তাও আমাদের চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যান করে মাথায় টিউমার পায় । সন্ধ্যা 6.30 নাগাদ হঠাৎই শিশুটি মারা যায় । তারপরই উত্তেজিত হয়ে এই চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলে । বেধড়ক মারধর করে । আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা আটকায় । কিন্তু তাতেও কিছু না হওয়ায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয় । আমরা চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করি ।" বাচ্চাটির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বিষয়টিকে দুঃখজনক বলেন উজ্জ্বলেন্দুবাবু । জানান, প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক । তবে, কারোর মৃত্যু হলেই পরিবার-পরিজন এসে মারধর করবে তা মানা যায় না ।
চিকিৎসককে মারধরের কথা স্বীকার করেন মৃতের আত্মীয় সুভাষ পাসোয়ান । সাফাই দেন, হাসপাতালে এসেই শুভমের মৃত্যু হয়েছে শুনে মাথার ঠিক ছিল না । বলেন, "আমি রাতে থাকার জন্য এসেছিলাম হাসপাতালে । কিন্তু এসে দেখি আমাদের বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে । মাথা ঠিক রাখতে না পেরে ডাক্তারকে মারধর করি । তাই পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি । আমার ভুল হয়েছে, আমি স্বীকার করছি ।" চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে নেওয়ার পর দেহটি ময়নাতদন্ত না করেই ছেড়ে দেওয়া হয় ।