চুঁচুড়া (হুগলি), 7 মে : নেই উপযুক্ত পরিকাঠামো, নেই পরিবারের আর্থিক সচ্ছ্বলতা ৷ তবে, এই সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন চুঁচুড়ার অষ্টাদশী জয়িতা মালিক ৷ আগামী জুন ফ্রান্সে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গেমসের আসরে জিমন্যাস্টিক্সে অংশ নেবেন তিনি ৷ ইতিমধ্যে স্কুল গেমসের পাঁচবার ন্যাশনালে অংশ নিয়েছেন জয়িতা ৷ শত বাধার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছেন জয়িতা মালিক ৷
জয়িতা মালিকের বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ার চকবাজার শান্তিপল্লিতে ৷ তাঁর বাবা জয়ন্ত মালিক মেলায় খেলনা বিক্রি করেন ৷ তিনি শারীরিক দিকে থেকে বিশেষভাবে সক্ষম ৷ মা সুমিতা মালিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ৷ দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালাচ্ছেন জয়ন্ত মালিক এবং সুমিতা মালিক ৷ এমনকি ফ্রান্স যাওয়ার আড়াই লক্ষ টাকা জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের ৷ গয়না বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়স্বজনের থেকে ধার করে তাঁর ফ্রান্স যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা ৷ সেখানে কিছুটা সাহায্য় হয়েছে, জয়িতার খেলো ইন্ডিয়ায় জেতা আর্থিক পুরস্কার ৷ একটাই আশা তাঁদের, জিমন্যাস্টিক্সে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গেমস জিতে ফিরবে মেয়ে । বাংলা তথা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করবেন জয়িতা ৷
জয়িতাকে নিয়ে খুবই আশাবাদী বাঁশবেড়িয়ার তরুণ সঙ্ঘের জিমন্যাস্টিকস কোচ মৌনা কর্মকার ৷ তিনি জানান, সামান্য পরিকাঠামো মধ্যেও নিজের সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা করে জয়িতা ৷ ক্লাবে জিমন্যাস্টিক্স অনুশীলনের জায়গার অভাব রয়েছে ৷ তাই রাস্তায় অনুশীলন করাতে হয় সবাইকে । এইসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও খেলো ইন্ডিয়ায় স্থান পেয়েছিল জয়িতা । তাই কোচ মৌনার বিশ্বাস, জয়িতার কষ্ট ও পরিশ্রমই তাঁকে জয় এনে দেবে ৷
আরও পড়ুন : Egypt Gymnastic World Cup : জিমন্যাস্টিক বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন বাংলার প্রতিষ্ঠা
তবে, এরই মধ্যে শুক্রবার জয়িতার আর্থিক সমস্যার কথা শুনে এগিয়ে এসেছে একটি সংস্থা ৷ সংস্থার তরফে জয়িতার মায়ের হাতে 3 লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ একটি জীবন বিমা সংস্থার আধিকারিকরা মিলে এই সংস্থা গড়ে তুলেছেন ৷ যারা মূলত গরিব মেধাবীদের এবং জয়িতার মত খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ায় ৷ ফলে জয়িতার ফ্রান্স যেতে খরচের আড়াই লাখ টাকার পুরোটাই উঠে এসেছে ৷ আগের করা দেনার টাকাও তাই মিটিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান জয়িতার বাবা-মা ৷ বাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা জয়িতার ফিটনেস ও ডায়েটের খরচে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা ৷
আরও পড়ুন : Injured Trekker Mithun : হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে বাঁচার আশা ফিরে পেলাম, বলছেন মিঠুন
মাত্র 4 বছর বয়স থেকে জিমন্যাস্টিক্সে ভর্তি হন জয়িতা মালিক ৷ স্কুলে ভর্তির আগেই মায়ের কোলে চেপে জিমন্যাস্টিকসের ক্লাসে যেতেন তিনি ৷ ইতিমধ্যে, নবম এবং দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল গেমসে ন্যাশনাল খেলতে আগ্রা ও ত্রিপুরায় গিয়েছিল জয়িতা ৷ 2020 সালে খেলো ইন্ডিয়ায় ভাল পারফর্ম করে আর্থিক পুরস্কার জিতেছিল সে ৷ ফ্রান্স যেতে সেই অর্থও অনেকটা সাহায্য করেছে জয়িতাকে ৷ আর পড়াশোনা ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন জয়িতার হুগলি গার্লস স্কুলের শিক্ষিকারা ৷ ফলে জিমন্যাস্টিক্স ও পড়াশোনা দুই সমানভাবে চলছে তাঁর ৷ আগামী 14 মে থেকে ফ্রান্সে শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গেমস ৷ সেখানে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে সুযোগ পেয়েছেন জয়িতা ৷ 13 মে ফ্রান্সে রওনা দেবেন তিনি ৷