চুঁচুড়া, 20 সেপ্টেম্বর: হাসপাতালে নবজাতক কন্যাকে ফেলে চলে গিয়েছেন মা । এরপর তাকে বুকে টেনে নিয়েছেন হাসপাতালে নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীরা । তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নবজাতকের বয়স বাড়লে তাকে হোমে পাঠিয়ে দিতে হয় ৷ তাই খুশিকেও হোমে যেতে হবে ৷ যাওয়ার আগে সোমবার তার মুখে ভাত, মাছ, আর সব রকমারি খাবার তুলে দিলেন চুঁচুড়ার ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ৷ সঙ্গে সঙ্গে মন ভারী সবার (Imambara District Hospital arranges rice ceremony for an abandoned baby before she departs for Home Centre) ৷
হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ সম্পা নন্দী জানান, 17 মার্চ সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মা ৷ তিনি মানসিক দিক দিয়েও স্বাভাবিক ছিলেন না ৷ 22 জুলাই মা ও নবজাতককে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মায়ের চিকিৎসা চলাকালীন কন্যা সন্তানকে হাসপাতালের অসুস্থ নবজাতক পরিষেবা কেন্দ্রে রাখা হয় ।
অগস্ট মাসের শেষের দিকে মা তাঁর মেয়েকে ফেলে রেখে নিখোঁজ হয়ে যান । তার আগে জুলাই থেকেই শিশুকন্যাকে লালন পালন করছেন হাসপাতালের নার্সরা । সবাই মিলে তার নাম রেখেছেন খুশি । এভাবেই দিন কাটছিল তার ৷ এবার সরকারি নিয়ম মেনে মা-বাবা হারা সন্তানকে তুলে দিতে হবে শিশু সুরক্ষা কমিটির হাতে ।
আরও পড়ুন: পাণ্ডবেশ্বরে ঝোপ থেকে মিলল সদ্যোজাত কন্যা
চুঁচুড়া সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের অসুস্থ নবজাতক পরিষেবা কেন্দ্রের 14 জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন । তাঁর মধ্যে দু'জন স্বাস্থ্যকর্মী খুশির মামা হয়ে মুখে ভাত দেন । লাল জামা, লাল হেয়ারব্যান্ড, ফুলের সাজে হাসি মুখে ভাত খেয়েছে খুশি । সোমবার হাসপাতালে রীতিমতো উৎসবের মেজাজ ৷ মনেই হচ্ছিল না খুশির কোনও পরিবার নেই ৷ তবে শুধু খুশি নয়, তার মতো আরও অনেক ফেলে যাওয়া শিশুকে সযত্নে লালন পালন করেন হাসপাতালে নার্সরা ।
চুঁচুড়া হাসপাতালে এক সিস্টার ইনচার্জ সম্পা নন্দী বলেন, "জুলাই মাসে শিশুটি এখানে আসে । ওর মায়ের অসুস্থতার কারণে সুপারের নির্দেশে শিশু বিভাগে আনা হয়। কিছুদিন বাদে মা নিখোঁজ হয়ে যান । শিশুটি হাসিখুশি থাকত বলে আমরা ওর নাম রেখেছি খুশি । মঙ্গলবার খুশিকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে তাই চালের কিছু খাওয়াতে হবে তাই মুখে ভাত দিলাম । নিজের বাচ্চার জন্য যা যা করতে হয়, তাই করেছি খুশির জন্য ।" অন্নপ্রাশন শেষে সবার মন খারাপ ৷ ওকে ছেড়ে দিতে হবে । ওর পরিবারের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট কমলিকা রায় বলেন, "দু'মাস পর্যন্ত এই শিশুটি ছিল । নিয়ম অনুযায়ী এবার তাকে হোমে পাঠানো হবে । সিস্টার ইনচার্জ ও সব স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগে এই অন্নপ্রাশন । প্রতি বছর দু'টি থেকে তিনটি শিশুকে হোমে পাঠানো হয় । আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে । হোমে যাওয়ার আগে এই অন্নপ্রাশনের আয়োজন করা হয় ৷"