চুঁচুড়া, 3 জুলাই : টানাপোড়েন যেন শেষ হওয়ার নয় ৷ একদিকে বাস মালিকদের দাবি, ভাড়া বাড়াতে হবে ৷ অন্যদিকে সরকার অনড়, ভর্তুকি দেওয়া হবে তবু ভাড়া বাড়ানো হবে না ৷ সমস্যা দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে ৷ ভুগছে সাধারণ মানুষ ৷ গোটা রাজ্যের মতোই জেলাতেও গণপরিবহন নিয়ে জর্জরিত নিত্যযাত্রীরা । লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে ৷ হুগলির বিভিন্ন রুট বাস চলাচলও অনিয়মিত । এমনিতে লকডাউনে বাস মালিক, ড্রাইভার, কন্ডাক্টররাও ভালো নেই । আনলক পর্বে বাস চলাচল কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে শুরু করে । সরকারি নির্দেশ, স্বাস্থ্যবিধি মেন যত সিট তত যাত্রী নিতে হবে ৷ যার পর ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তোলে বাস সংগঠনগুলি ৷ সরকার তাতে না করে দেয় ৷ এরমধ্যে লাফিয়ে বাড়ছে ডিজেলের দাম ৷ অবশ্য, সরকার 15 হাজার টাকা করে ভর্তুকির কথা ঘোষণা করেছে ৷ বাস মালিকরা বলছেন, ভর্তুকি নয়, ভাড়া বাড়ালে সমস্যার সমাধান হবে । কিন্তু যাত্রীদের কী হবে! যাদের পথে বেরোতেই হবে, হচ্ছে ! তাদের কথায়, বেশ কিছু রুটে বেশি ভাড়া দিয়ে তবেই বেসরকারি বাসে যাতায়াত করা যাচ্ছে । অন্যদিকে, সামাজিক দূরত্বের বালাই থাকছে না বাসে ।
হুগলি জেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় 500-র বেশি বাস চলে । বাস মালিকদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে 5 থেকে 10 টাকা । সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কেন ? এই প্রশ্নে বাস মালিকদের উত্তর, যাত্রীরা কথা শুনছেন না ৷ বাস সংগঠনের দাবি, 15 হাজার টাকার বদলে বাস পিছু 30 হাজার টাকা ভর্তুকি দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে । তবে, ভাড়া বৃদ্ধির দাবি থেকে সরছে না বাস সংগঠন ৷ হুগলি জেল বাস-মিনিবাস সংগঠনের সভাপতির দেবব্রত ভৌমিকের অভিযোগ, ভর্তুকির ঘোষণা হয়েছে বটে ৷ টাকা কবে পাব তার নিশ্চয়তা নেই । এখনও লোকসভা ভোটের বাস ভাড়া মেটানো হয়নি ৷ লকডাউনে ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক এনেছে যে সব বাস তাদের ভাড়াও মেটানো হয়নি ৷ সব মিলিয়ে সমস্যা জটিলতর হচ্ছে ৷
এক যাত্রী পিয়ালী বসু ঠাকুর বলেন, "চুঁচুড়া থেকে বালির ভাড়া নেওয়া হচ্ছে 50 টাকা । যাতায়াতে 100 টাকা খরচ হয় । অফিস যেতেই হবে ৷ এছাড়া উপায় নেই। ভাড়া না দিলে কলকাতায় যেমন বাস বন্ধ হয়েছে, এখনেও হয়ে যাবে ৷ বাসে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকছে না ।"
এই অবস্থায় সরকারি বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হোক, দাবি জানাচ্ছেন বেশকিছু যাত্রী ৷
জনৈক যাত্রী প্রবীর কুমার দত্ত বলেন, "চুঁচুড়া-চন্দননগর-শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারি বাস পাওয়া গেলেও ফেরার পথে অমিল বাস । কলকাতা থেকে ফেরার পথে মাঝেমধ্যেই বাসের টিকিট পাওয়া নিয়েও সমস্যা হচ্ছে ৷ ভেঙে ভেঙে ফিরতে হচ্ছে ৷ তাতে খরচ বাড়ছে, সময়ও লাগছে বেশি ৷"
প্রবীরবাবুর দাবি, "দক্ষিণেশ্বর থেকেও চুঁচুড়া পর্যন্ত সরকারি বাস দেওয়া হোক । তবে, একটা ভালো বিষয়, সরকারি বাসে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে ।"
জেলার এক বেসরকারি বাসচালক দুলাল চন্দ্র দে বলেন, "হুগলি জেলার বাসমালিকরা এখনও বাস বন্ধের কথা বলেনি । তবে, কষ্টে চালানো হচ্ছে গাড়ি । যে কোনও দিন কলকাতার মতো এখানেও বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে । তেলের দাম বেড়েই চলেছে ৷ না কেন্দ্র না রাজ্য কেউ চিন্তাভাবনা করছে না । এখন লিটার প্রতি দাম 76 টাকা । যত সিট তত যাত্রী নিলে বাস চালানো যাবে না। যাত্রীদের একটু সমস্যা হলেও ভাড়া বাড়াতে হবে ।"
হুগলি জেল বাস-মিনিবাস সংগঠনের সভাপতির দেবব্রত ভৌমিকের বক্তব্য, ''সাধারণের স্বার্থে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বাস চালাচ্ছি । কিন্তু, ওই ভর্তুকিতে বাস চালানো অসম্ভব । তবে, কলকাতার মতো হুগলি জেলায় বাস ধর্মঘটের সমর্থন করছি না । "
দেবব্রতবাবু প্রশ্ন তুললেন, "সরকার কেন 6 হাজার গাড়িকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলল ! এতে স্বজনপোষণ হবে । রাজ্যে 40 থেকে 42 হাজার বাস আছে । ভর্তুকি দিলে সবাইকে দেওয়া হোক । ভর্তুকি যদিও কোনও সমাধান নয় । তাছাড়া কবে ভর্তুকির টাকা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও সংশয় থাকছে ৷ এখনও লোকসভা ভোটের টাকা পায় বাস বালিকরা ৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ভাড়া বাকি ৷ "
জেলা বাস সংগঠনের সভাপতির দাবি, "মানুষ বেশি ভাড়া দিয়েও স্বাচ্ছন্দ্য চাইছে । সরকারের উচিত মানুষের স্বার্থে ভাড়া বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা । নচেত 10-12 দিন পর জেলাতেও বাস চলাচল থমকে যাবে ।"

একনজরে দেখা নেওয়া যাক, জেলায় কোন রুটে কটি বেসরকারি বাস চলছে ৷ ভাড়াই বা কত ?
2 নম্বর রুট (চুঁচুড়া-দক্ষিণেশ্বর) ৷ 32 টি বাস চলছে ৷ যাত্রীদের দাবি, ভাড়া নেওয়া হচ্ছে 50 টাকা ৷ বাস মালিকদের জানাচ্ছেন, ভাড়া 40 টাকা । তাই নেওয়া হচ্ছে ৷
4 নম্বর রুট (চুঁচুড়া-মেমারি) ৷ 12 টি বাস চলছে । যাত্রীরা জানাচ্ছেন, চুঁচুড়া থেকে বৈচিগ্রামের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে 40 টাকা ।
17 নম্বর রুট (চুঁচুড়া-তারকেশ্বর) ৷ 16 টি বাস চলছে ৷ যাত্রীরা বলছেন, ভাড়া 50 টাকা । বাস মালিকরা বলছেন, 45 টাকা ।
8 নম্বর রুট (চুঁচুড়া-জিরাট) ৷ বাস চলছে 4 টি ৷ ভাড়া নিয়ে অভিযোগ জানা যায়নি ৷
চুঁচুড়া-জঙ্গিপাড়া রুটে 2 টি বাস চলছে ৷ ভাড়া নিয়ে অভিযোগ জানা যায়নি ৷
285 রুট (শ্রীরামপুর-নিউটাউন) ৷ বাস চলছে 10 টি । যাত্রীরা জানাচ্ছেন, এখন ভাড়া 30 টাকা । আগে ছিল 18 টাকা ৷
একনজরে দেখা নেওয়া যাক, জেলার কোন রুটে কটি সরকারি বাস চলছে ও ভাড়া কত ৷
তারকেশ্বর-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 2 ৷ ভাড়া 50 টাকা ৷
হরিপাল-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 2 ৷ ভাড়া 50 টাকা ৷
ধনিয়াখালী-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 1 ৷ ভাড়া 50 টাকা ৷
কামারকুণ্ডু-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 2 ৷ ভাড়া 50 টাকা ৷
হরিপাল গজার মোড়-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 2 ৷ ভাড়া 50 টাকা ৷
চুঁচুড়া-করুণাময়ী ৷ বাসের সংখ্যা 1 । ভাড়া 35 টাকা ।
চুঁচুড়া-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 4 । ভাড়া 40 টাকা ।
চুঁচুড়া-হাইকোর্ট ৷ বাসের সংখ্যা 1 । সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে ।
চুঁচুড়া-বিধানসভা ৷ বাসের সংখ্যা 1 । সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে ।
শ্রীরামপুর-ধর্মতলা ৷ বাসের সংখ্যা 1 । সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে ।
শ্রীরামপুর-সল্টলেক ৷ বাসের সংখ্যা 1 । সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে ।