হুগলি, 4 অগস্ট: বয়স মাত্র 20 মাস ৷ আর এর মধ্য়েই জোড়া রেকর্ড পকেটে পুরে ফেলেছে হুগলির (Hooghly) 'বিষ্ময় শিশু' (Wonder Child) ভ্রাজিষ্ণু ভট্টাচার্য ! তার স্মৃতিশক্তি এবং শারীরিক সক্ষমতা তাক লাগিয়ে দিয়েছে রেকর্ড সংস্থার বিশেষজ্ঞদেরও ৷ ভ্রাজিষ্ণুর সঙ্গে দেখা করতে চুঁচুড়ার কাপাসডাঙায় তাদের বাড়িতে পৌঁছে যান ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ কিন্তু, ক্য়ামেরা, ব্যুমকে মোটেও পাত্তা দেয়নি একরত্তি ৷ সে ব্যস্ত ছিল নিজের খেলায় ৷ তবে, তার খেলার সরঞ্জাম দেখলে যে কারও চোখ কপালে উঠতে পারে ৷ আসলে আর পাঁচটা বাচ্চার মতো গড়পড়তা খেলনায় ভ্রাজিষ্ণুর তেমন আগ্রহ নেই ৷ বদলে তার চাই ল্যাপটপ, বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকার রেপ্লিকা থেকে শুরু করে আস্ত এনসাইক্লোপিডিয়া !
ভ্রাজিষ্ণুর মা কাকলি ভট্টাচার্য গৃহবধূ ৷ তাঁর স্বামী দিলীপের ঘুড়ির ব্যবসা রয়েছে ৷ কাকলী জানালেন, তুখোড় স্মৃতিশক্তির প্রমাণ দিয়ে আগেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে (India Book of Records 2022) নাম তুলেছিল ভ্রাজিষ্ণু ৷ আর গত 28 জুলাই এশিয়া বুক অফ রেকর্ডসেও (Asia Book of Records) জায়গা করে নেয় সে ৷ ঠিক কীভাবে ঘটল এমন ঘটনা ? ইটিভি ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছেন কাকলি ৷
আরও পড়ুন: India Book of Records : মাত্র 2 বছর তিন মাস বয়সেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম অঙ্কিতের
ভট্টাচার্য দম্পতি শিব ও বিষ্ণুর উপাসক ৷ তাঁদের বাড়িতে প্রচুর দেবদেবীর ছবি রয়েছে ৷ জন্মের পর থেকেই সেইসব ছবি দেখছে ভ্রাজিষ্ণু ৷ তার যখন মাত্র দেড় মাস বয়স, তখনই এক আশ্চর্য ঘটনা লক্ষ করেন দিলীপ ও কাকলি ৷ তাঁরা দেখেন, ওইটুকু বয়সেই তাঁদের সন্তান শুধুমাত্র দেবদেবীর নাম শুনে তাঁদের ছবি চিনতে পারছে ! সময় যত গড়িয়েছে, ভ্রাজিষ্ণুর এই ক্ষমতা আরও প্রখর হয়েছে ৷ কাকলি বলেন, তাঁদের ছেলে এর মধ্যেই শতাধিক দেশের জাতীয় পতাকা দেখে চিনতে পারে ৷ কানে নাম শুনে অসংখ্য বিখ্য়াত ব্যক্তির ছবি চিহ্নিত করতে পারে ৷ অনায়াসে দেখিয়ে দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ৷ দেশের নাম শুনে গ্লোবে তার সঠিক অবস্থানও দেখিয়ে দিতে পারে ৷
কাকলি জানালেন, তাঁর ছেলের অসামান্য স্মৃতিশক্তির কথা ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছিলেন তাঁরা ৷ এরপরই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের তরফ থেকে ভট্টাচার্য দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ছোট্ট ভ্রাজিষ্ণু সম্পর্কে তাঁরা যে দাবি করেছেন, তার প্রমাণ চাওয়া হয় ৷ সেই প্রমাণ (ভ্রাজিষ্ণুর কীর্তির ভিডিয়ো রেকর্ডিং) সংস্থার দফতরে পাঠাতেই চোখ কপালে ওঠে আধিকারিকদের ৷ ফলস্বরূপ মাত্র দেড় বছর (18 মাস) বয়সেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করে নেয় ভ্রাজিষ্ণু ৷
তবে, বিস্ময়ের পালা যে আরও বাকি, তখনও তা জানতেন না কাকলি ও দিলীপ ৷ ভ্রাজিষ্ণু যখন থেকে হাঁটতে শিখেছে, তখন থেকেই সে ছাদে একা-একা হাঁটত ৷ তার বাবা-মা লক্ষ করেন, কারও সাহায্য ছাড়াই একসঙ্গে অনেকটা রাস্তা পাড়ি দিতে পারে ভ্রাজিষ্ণু ৷ প্রমাণ বলছে, বড়দের কাছ থেকে এতটুকু সাহায্য না নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সাবলীলভাবে দেড় কিলোমিটার হাঁটতে পারে সে ! এই ঘটনা দেখে কার্যত ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয় এশিয়া বুক অফ রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের ৷ ভ্রাজিষ্ণুর এই অসাধারণ ক্ষমতার স্বীকৃতি হিসাবে তার নাম নথিভুক্ত করা হয় চলতি বছরের রেকর্ডধারীদের তালিকায় ৷ গত 28 জুলাই সেই স্বীকৃতির শংসাপত্র পৌঁছে যায় ভ্রাজিষ্ণুর বাড়িতে ৷
আরও পড়ুন: wonder kid creates Record: সেরা প্রতিভাবান শিশু! চার বছরেই প্রিয়মের ঝুলিতে দু'টি রেকর্ড
কাকলি জানিয়েছেন, তাঁরা ভ্রাজিষ্ণুকে নানা ধরনের বই কিনে দেন ৷ সারাক্ষণ সেইসব বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে তাঁদের আদরের ছোট্ট ছেলে ৷ এর মধ্য়েই স্মার্টফোনের সবরকম কেরামতি তার নখদর্পণে ৷ নিজে নিজেই চালাতে পারে ল্যাপটপ ৷ স্রেফ কানে শুনেই মনে রাখতে পারে গোটা একটা বইয়ের তথ্য ! তবে, খুব বেশি কথা বলতে পারে না ভ্রাজিষ্ণু ৷ আধো গলায় কোনও মতে বলে বাবা আর মা !