হুগলি, 16 অগস্ট: বাঁশবেরিয়ার অশান্তি রুখতে রাজ্য না পারলে কেন্দ্রের কাছে সাহায্য নেওয়া হোক । বুধবার এই দাবি তুলেছেন হুগলির সাংসদ বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস থেকে মুখ্যসচিবের কাছে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের জন্য আবেদন করেছেন তিনি ৷
বুধবার হুগলির বাঁশবেরিয়া কলবাজার এলাকায় ফের অশান্তির সৃষ্টি হয় । ইঁটবৃষ্টি, বাড়ি ও গাড়ি যথেচ্ছভাবে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ । এরপরই মগরা থানায় যান হুগলির সাংসদ । অবিলম্বে এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন তিনি । তবে এই বিষয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল । তৃণমূলের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তর অভিযোগ, প্রধান বিরোধীদল নোংরা রাজনীতি করছে । সিপিএম ও কংগ্রেস এর মধ্যে নেই । পুরোটার মধ্যে বিজেপি যুক্ত ।
মঙ্গলবার বাঁশবেড়িয়ায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় ৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । এলাকায় জারি করা হয় 144 ধারা । বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা । তার পর বুধবার দুপুরে আবার নতুন করে অশান্তি শুরু হয় । ইঁট ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয় বলে অভিযোগ । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় ।
বাঁশবেড়িয়ার ঘটনায় 16 জনকে গ্রেফতার করে ৷ এ দিন অভিযুক্তদের চুঁচুড়া আদালতে পেশ করে মগরা থানার পুলিশ ।তাঁদের মধ্যে 12 জনকে জেল হেফাজত ও চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নির্দেশ দেয় আদালত । পুলিশ এ দিনও অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে 15 জনকে আটক করেছে । রাত পর্যন্ত ধরপাকড় চলে । আজ হুগলির সাংসদ মগরা থানায় গিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করেন ৷ পাশাপাশি তাঁর দাবি, যাঁরা নিরাপরাধ, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে ৷ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার কাছে আবেদন করেন ।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বাঁশবেরিয়ায় আগুন নেভাতে হবে । আগুন লাগালে চলবে না । সেজন্য আমি যাইনি । একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাইরে থেকে যা যা করতে হয়, সেটা আমি করব । পরিস্থিতিকে শান্ত করার জন্য পুলিশের সঙ্গে দেখা করা, মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি ৷ কিন্তু তাঁকে ফোনে পায়নি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা অন্যায় করছে, তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত । পরিস্থিতি ঠিক না হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে বলছি । তা নাহলে আমরা এনআইএ তদন্ত চাইব । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে, রাজ্যপালকে ইমেলের মাধ্যমে জানাচ্ছি । মুখ্যসচিবের কাছেও কেউ আবেদন করছি ।’’
কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বাঁশবেড়িয়ার অশান্তির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে । গতকাল বিজেপি চেয়েছিল ওখানে গন্ডগোল করার । কিন্তু প্রশাসন শক্ত হাতে রাত পর্যন্ত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রেখেছে । সকালে কিছু দুষ্কৃতি ইঁট ছুঁড়ে বেশ কিছু বাড়িতে । সেটাও পুলিশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এখন ওখানে র্যাফ রুটমার্চ করছে । কিন্তু সুকান্ত মজুমদার এসে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করেছিল ।’’
একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এই জেলাতে বিজেপি যা গন্ডগোল করছে ঠান্ডা করতে আমাদের এক ঘণ্টা সময় লাগবে । কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ আমরা কোথাও কিছু করছি না । বিরোধী দল বিরোধীদলের মতো করে থাকবে । বিরোধী দল নোংরা রাজনীতি খেলছে । সিপিএম ও কংগ্রেস তারা এর মধ্যে নেই ৷ পুরোটাই বিজেপি করছে । প্রশাসনকে বলেছি, বিজেপির হয়ে যারা থানা ঘেরাও লুটপাট, বাড়ি ভাঙচুর করছে, তাদের গ্রেফতার করতে । মানুষ এলাকায় শান্তি চায় ৷ কিন্তু কিছু লোক বাইরে থেকে গিয়ে অশান্তি করছে ।’’
আরও পড়ুন: বাঁশবেড়িয়ায় 144 ধারা, এলাকায় ঢুকতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে সুকান্ত
এই নিয়ে পালটা লকেটের দাবি, ‘‘রাজ্য যখন পারছে না, তখন কেন্দ্রের থেকে সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করুক । সামনে লোকসভা নির্বাচনে আসছে । তাই তৃণমূল বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে । সিপিএম ও কংগ্রেসকে বাদ দিচ্ছে, কারণ সাগরদিঘির মতো হবে না । গতকাল পুলিশ পরিস্থিতি ঠান্ডা করেছিল ৷ কিন্তু আজ পরিস্থিতি তাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে । বিভিন্ন থানা থেকে ফোর্স নিয়ে এসেও হাতের মধ্যে আনতে পারছে না, পুরোটাই আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গিয়েছে ।’’