হুগলি, 8 মার্চ: মাধ্যমিকের প্রস্তুতি শেষ (Madhyamik 2022) ৷ কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দেওয়া হল না পোলবার সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধূমা গ্রামের সৌমদীপ সামন্তের (Hooghly boy cannot appear Madhyamik 2022)। এবার যাদবপুর হাইস্কুল থেকে তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ।
সৌম্যদীপ আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র (Boy suffering from neuro problem)। টেস্ট পরীক্ষাতেও অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করেছে । করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গত 23 ফেব্রুয়ারি সে স্কুলে যায় । পরদিন বাড়িতে পড়ার ঘরে বাল্ব লাগাতে চেয়ারে ওঠে ৷ মাকে বলে, তার পা কাঁপছে । শরীর খারাপ লাগছে । চুঁচুড়ায় এক চিকিৎসককে দেখানো হয় তাকে । চিকিৎসক নিউরোলজিস্ট দেখাতে বলেন । বাড়ি ফিরে সমস্যা আরও বাড়ে । কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতেই পারছিল না সৌমদীপ ।
চন্দননগরে একজন নিউরো চিকিৎসককে দেখিয়ে এমআরআই, রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জানা যায়, সৌমদীপের শরীরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছে, যা রক্তের কোষগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে । তড়িঘড়ি তাকে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়ান্স (নিমহানস) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু করেন । নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর গতকাল থেকে তার প্লাজমা থেরাপি শুরু হয় । এ দিকে, কাল থেকেই শুরু হয়েছে মাধ্যমিক ৷ তাই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে না পারায় আফসোস করছে গোটা পরিবার ৷
আরও পড়ুন: Madhyamik 2022 : সন্তানের জন্ম দিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন মা
মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে ছেলে হাসপাতালের শয্যায় । তাই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সৌমদীপের মা কল্পনা সামন্ত ৷ তিনি বলেন, "আমি একজন আশা কর্মী । আমি লোকজনকে ডেকে ডেকে ভ্যাকসিন নিতে বলেছি । তাই কখনওই বলব না, আমার ছেলের ভ্যাকসিন নিয়ে এই রোগ হয়েছে । তবে যে ছটফটে ছেলে সব সময় স্ফূর্তিতে থাকত, প্রাইভেট পড়তে যেত, বাড়ির কাজ করত, তাকে কখনওই পড়ার কথা বলতে হয়নি । মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করবে আশা ছিল ।এখন কী হবে জানি না । সামান্য জমি থেকে যা আয় হয়, আর তার ভাতা দিয়ে দুই ছেলের পড়াশোনা চলে । পড়াশোনা করে বড় করাই একমাত্র লক্ষ্য আমাদের । কী হবে বুঝতে পারছি না ।"
জেঠু কুশোরাম সামন্ত বলেন, "ছটফটে ছেলেটার কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না । আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি । সুস্থ হয়ে আগে বাড়ি ফিরুক, তারপর পরীক্ষা নিয়ে ভাবা যাবে ।"
আরও পড়ুন: Madhyamik 2022 : সকালে মেয়ের জন্ম দিয়ে দুপুরে হাসপাতালেই মাধ্যমিকে বসল মা
যাদবপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরজিৎ ঘোষ বলেন, "একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, কোনও ছাত্রের মাধ্যমিক দিতে না পারা খুবই কষ্টের । অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র সৌমদীপ । ওর অসুস্থতার খবর পেয়ে আমরা শিক্ষক শিক্ষিকারা খুবই অবাক হয়েছি । ওর পাশে আছি । ও অ্যাডমিট কার্ড নিতে এসেছিল, তখন অনেক কথা হল । যাদবপুর স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে সুগন্ধা হাইস্কুলে । সেখানে সেন্টার ইনচার্জকে সৌমদীপের অসুস্থতার খবর দিয়েছি । ভেবেছিলাম হয়ত বেঙ্গালুরু থেকে পরীক্ষার আগে ফিরে আসবে, তাহলে সিক রুমে বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা ছিল । শুধু ভালো ছাত্র হিসাবে না, একজন ভালো মানুষ হিসাবে স্কুলের সবাই ওকে ভালোবাসে । আমরা চাই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক সৌমদীপ ।"