রিষড়া, 4 এপ্রিল: আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠল রিষড়া । সোমবার রাতে ঘনঘন বোমাবাজি চলতে থাকে রিষড়ার বিভিন্ন এলাকায় ৷ স্বভাবতই এর প্রভাব পড়েছে মানুুষের দৈনন্দিন জীবনে ৷ এই অশান্তির ঘটনায় হাওড়া-বর্ধমান ও তারকেশ্বর লাইনে রাত 9টা পর থেকে ট্রেনচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ৷ রাত 1টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শুধু তাই নয়, 4 নম্বর রেলগেটে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটও ছোড়া হয় ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়েছে পুলিশ ৷ ইটের জবাবে পুলিশও পালটা ইট ছুড়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ রিষড়া পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডে 4 নম্বর রেল গেটের কাছেই অবস্থিত সুভাষ নগর হাউজিং কমপ্লেক্স ৷ সেখানে বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছে । জানা গিয়েছে, রিষড়ায় অশান্তির ঘটনার পর তড়িঘড়ি দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ সারারাত ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে ৷ রাত যত গড়িয়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা ৷ এক বাসিন্দা ইশান কুমারের অভিযোগ, "যা হয়েছে তা পুলিশের জন্য হয়েছে । রবিবার যদি পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকত, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না ৷ কাল রাতে পুলিশ হাউজিংয়ের ভিতরে ঢুকে অত্যাচার চালিয়েছে তারা ৷ গেট ভেঙে ঢুকে ঘরে থাকা মানুষদের তুলে নিয়ে গিয়েছে ৷ ঘরের দরজা ভাঙা হয়েছে ৷ এই হাউজিংয়ে 1 হাজার 200টি পরিবার বাস করে ৷" রেলগেটে পুলিশ ভ্যানে আগুন লাগানো এবং পুলিশের উপর ইট ছোড়ার পর পুলিশের সন্দেহ হয় কাছেই থাকা সুভাষ নগর হাউজিং কমপ্লেক্স থেকে এই সব করা হচ্ছে ৷ এই অভিযোগে পুলিশ রাত একটা নাগাদ ওই কমপ্লেক্সে ঢোকে ৷ এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ রাত একটা নাগাদ কমপ্লেক্সে এসে আবাসিকদের মারধর করে ৷ বাসিন্দারা এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয় ৷ অথচ অহেতুক তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ ৷ তাদের কথা অনুযায়ী, হাউজিংয়ের প্রায় 10 জনকে আটক করেছে পুলিশ ৷
রামনবমী দিনের অশান্তির ঘটনার রেশ এখনও চলছে ৷ রবিবার রিষড়া সন্ধ্যাবাজার ছাই গলি এলাকায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রিষড়া ও শ্রীরামপুর এলাকা ৷ সোমবার রাতে ফের উত্তেজনা তৈরি হয় ৷ প্রথমদিকে পুলিশকে পিছু হঠতে হয়েছিল ৷ পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় ঘটনাস্থলে ৷ কিন্তু তারাও হিমশিম খেয়ে যায় ৷ রেলগেটে গেটম্যানের হদিশ মেলেনি । পুলিশ ভ্যান দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ৷ ট্রেনকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। এই অবস্থায় আনুমানিক রাত 9টার পরপর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । রিষড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুরে বহু এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন আটকে পড়ে ৷ হাওড়া, বর্ধমান, কাটোয়া, ব্যান্ডেল ও তারকেশ্বর লোকালে ট্রেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়, যা স্বাভাবিক হতে লাগে বেশ কয়েকঘণ্টা লেগে যায় ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিস্থিতি পুলিশের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে ৷ রবিবার রাতে রিষড়ায় অশান্তির ঘটনা ঘটে ৷ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ৷ তারপরও পুলিশ আগে থেকে কোনও মোকাবিলা ব্যবস্থা নেয়নি ৷ এলাকায় বারবার এমন ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে বাসিন্দারা ৷ জানা গিয়েছে, ট্রেন বন্ধ থাকায় ওই এলাকার বহু মানুষ রাতে বাড়ি ফিরতে পারেনি ৷ বিভিন্ন স্টেশনে রাত কাটাতে হয়েছে তাদের । স্টেশনে স্টেশনে এখন রেল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । তবে রেলের নিরাপত্তার দিকে নজর রেখেই ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে ৷ পূর্ব রেলের সিপিআরও কৌশিক মৈত্র বলেন, "রেলগেট বন্ধ না-থাকার কারণে ট্রেন চলাচল করানো যাচ্ছে না ৷ সবার নিরাপত্তার জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয় ৷ রেল পুলিশ ও স্থানীয় পুলিশ সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: রিষড়ায় ফের বোমাবাজি, এলাকায় টহল পুলিশের