খন্যান, 21 অগস্ট : সপ্তমীর ভোরে পাড়ার মণ্ডপ থেকে ঢ্যাং কুড়কুড় শব্দ জানান দেয়, পুজো এসে গিয়েছে ৷ নতুন পোশাকে ঢাকের বাদ্যির তালে কচিকাঁচাদের নাচ, বড়দের ধুনুচি নৃত্য - পুজোর পাঁচটা দিন আট থেকে আশিকে মাতিয়ে রাখে ৷ ঢাকের আওয়াজ ছাড়া পুজো যেমন বেমানান, ঠিক তেমনই সানাইয়ের সুর ছাড়া বাঙালি গেরস্থ বাড়ির বিয়ে যেন সম্পূর্ণ হয় না ৷ বিয়ের মণ্ডপে নহবতের সুর ছাড়া ঠিক জমে না ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে না হচ্ছে পুজো, না ধুমধাম করে বসছে বিয়ের আসর ৷ হলেও তা নমো নমো করে ৷ তাই পুজোয় ঘটা করে ঢাকি বা বিয়েতে ব্যান্ড পার্টি ডাকার মতো বিলাসিতাকে ঝেড়ে ফেলেছেন অনেকেই ৷ আর এতেই বিপাকে পড়েছেন সানাই, স্যাকসোফোনে সুর তোলা মানুষগুলি ৷
হুগলির খন্যানে জিটি রোডের পাশে এমনই খান দশেক দল রয়েছে । কয়েকশো মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত । যাঁদের রুটি রুজির পুরোটাই নির্ভর করে বিয়েবাড়িতে ব্যান্ড বা পুজোয় ঢাক বাজিয়ে ৷ মায়ের আগমনের আর বেশি দেরি নেই ৷ কিন্তু এখনও কোনও পুজো কমিটি থেকে রবীন ধাড়া, মাধব ধাড়ারা ডাক পাননি ৷ তার উপর চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ ৷ ফলে এখন কোনও দিশাই খুঁজে পাচ্ছে না । রেশনের চাল-গম দিয়ে কতদিনই বা জীবন অতিবাহিত করা যায় ৷ রাজ্য সরকারের লোকশিল্পীর কার্ড আছে মাত্র একজনের কাছে ৷
এই বিষয়ে মাধব ব্যান্ডের কর্ণধার মাধব ধাড়া বলেন, "গত দু'বছর ধরে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, বিবাহ অনুষ্ঠান সবকিছুই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । দুর্গাপুজোয় এখনও পর্যন্ত কোনও অর্ডার নেই । আমরা বাড়িতেই বাঁশের কুলো, ডালা তৈরি করে খাই ৷ সেটারও বিক্রিবাটা নেই । এই সময় করোনা লকডাউনে কোনও কাজই জুটছে না । তার উপর লোন নিয়ে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি কেনা আছে সেটাও ঠিক মতো শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না আমাদের পক্ষে ।"
সানাই বাদক মন্টু পণ্ডিত বলেন, "20 বছর বয়স থেকে সানাই বাজাচ্ছি ৷ 65 বছর হয়ে গেল । আর হাতের কাজ বলতে বাঁশের কাজ করি । করোনা লকডাউনের জন্য এসবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । একটা বিয়ে বাড়িতে সানাই বাজালে 10 থেকে 12 হাজার টাকা আয় হত । তাতে আরও 4 থেকে 5 জনের সংসার চলত । দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজোর এখনও কোনও অর্ডার নেই । এই পরিস্থিতিতে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে গিয়েছে । সরকারি তরফে কোনও লোনের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের ভাল হয় ।"
আরও পড়ুন : Babul Supriyo : বঞ্চিত সিধাবাড়ি আর বাবুলের কথা মনেই রাখতে চায় না
ঢাকি রবীন ধাড়া বলেন, "গত দু'বছর ধরে যেভাবে সংসার চালাচ্ছি তা উপরওয়ালাই জানে । খন্যান জিটি রোডে আশেপাশে প্রায় আটটি ব্যান্ডেল দল আছে ৷ এছাড়াও নহবত, ঢাকের দল আছে । বর্ধমান থেকে হাওড়া পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় থেকে অর্ডার আসত । এখন আমাদের কিন্তু সবই বন্ধ ।"