পোলবা, 6 জুলাই : অবশেষে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন ৷ দীর্ঘদিন ধরে নিকাশি ও অ্যাসিড মিশ্রিত জলে হুগলির পোলবা থানার সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষের জমিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ৷ ETV ভারতের খবরের জেরে নালা কেটে নিকাশি ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নিল হুগলি জেলা প্রশাসন ৷
সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দিল্লি রোডের পাশেই রয়েছে ICS কেমিকেল কারখানা ও একটি বস্তার কারখানা ৷ দুই কারখানার মাঝখানে রয়েছে একটি নিকাশি নালা ৷ দীর্ঘদিন ধরে কারখানার বর্জ্য জমা হয়ে ভরতি হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে আশেপাশের জমিগুলি বছরের অধিকাংশ সময়ই জলমগ্ন হয়ে থাকছিল, নষ্ট হচ্ছিল জমির ফসল ৷ বিগত 10 বছরে কয়েক বিঘা জমি জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছে ৷
কারখানা থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত জলে একদিকে যেমন চাষে ক্ষতি হচ্ছিল, অন্যদিকে জলমগ্ন জমিতে কাজ করতে গিয়ে রাসায়নিক পদার্থের কারণে কৃষকদের শরীরে নানা রোগ দেখা যায় ৷ গ্রামবাসী পঞ্চায়েতে বহুবার অভিযোগ জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি ৷ তবে ETV ভারতে এই সমস্যার কথা প্রকাশিত হতেই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় প্রশাসন ৷ কারখানা দুটির সঙ্গে কথা বলে নিকাশি নালা কাটার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা ৷ এছাড়াও JCB দিয়ে নিকাশি নালায় জমে থাকা বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷
কৃষকদের দাবি, নিকাশি ব্যবস্থা সঠিকভাবে করা হলে সবজি চাষে উপকার হবে । তবে সাময়িক নয়, প্রয়োজন পাকাপাকি নিকাশি ব্যবস্থা ৷ পুরুষোত্তম বাটির সদস্য ও কৃষক হেমন্ত বারুই বলেন, ‘‘আমাদের মাঠে জল নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিষয়ে BDO এবং পঞ্চায়েতে জানিয়েও প্রতিকার হচ্ছিল না । তবে ETV ভারতের খবরের জেরে তৎপর হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ এই কাজ শুরু হওয়ার ফলে অনেকটাই নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হবে । মাঠে জমা জল মূল নিকাশি নালায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা না হলে সমস্যা থেকেই যাবে ৷ নিকাশি ব্যবস্থা করা হলে ফের মাঠে চাষাবাদ শুরু করা যাবে ৷’’
আর এক কৃষক মদন আদক বলেন, ‘‘আমফানের ফলে এমনিতেই প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে ৷ এর উপর কারখানার বর্জ্য পদার্থে নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফ থেকে নিকাশির কাজ শুরু করা হলেও পাকা ড্রেন না নালা তৈরি না হলে জল আটকেই থাকবে ৷ প্রশাসনের তরফে যদি সমস্যার সমাধান না করা হয়, তবে আমরা দিল্লি রোড অবরোধ করব ৷ আমরা চাষের উপর নির্ভর করেই বাঁচি, সেখান থেকেই আমাদের খাবার জোটে ৷ তাই এছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই ৷
সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘চাষিদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাদের নিয়ে তিনদিনের মধ্যেই মিটিং করি । ইতিমধ্যেই নিকাশির জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে । আপাতত একটি কাঁচা ড্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই কাজ শেষ হলেই নিকাশি ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নতি হবে । তখন ওই কয়েকশো বিঘার মাঠে জল জমে থাকবে না । এই বিষয়ে চাষিদের নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে ৷ আশা করি আপাতত এই সমস্যার সমাধান হবে ।’’