চন্দননগর, 2 মে: খুদে গবেষকের টেবিলে ছড়ানো নানারকম যন্ত্রপাতি ৷ তার মধ্যে রয়েছে জুতো ! হঠাৎ জুতো নিয়ে কী করছে নবম শ্রেণির ছাত্র সৌভিক শেঠ ? আসলে, সে বানিয়ে ফেলেছে আশ্চর্য জুতো, যার নাম স্মার্ট শু ৷ অবাক করার মতোই তার এই অভিনব জুতো ৷ এই জুতো পরে হাঁটতে গেলেই ম্যাজিক ৷ পায়ের চাপে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ ৷ আর সেই বিদ্যুৎ দিয়ে মোবাইলে চার্জ দেওয়া দিব্যি, করা যাবে জিপিএস ট্র্যাকিংও ৷ জুতোর মধ্যে লুকিয়ে থাকবে ক্যামেরা, যা দিয়ে পিছু নেওয়া ব্যক্তির চেহারা ধরা পড়বে ৷ এমন একটি স্মার্ট শু তৈরি করে ফেলেছে চন্দননগরের খুদে বিজ্ঞানী সৌভিক ৷
সে এখন কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের (ইংরেজি বিভাগ) নবম শ্রেণির ছাত্র ৷ পড়াশোনার সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করা তার কাছে নেশার মতো ৷ এই গবেষণার প্রথম দিকে সৌভিক ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে কলিংবেল তৈরি করেছিল ৷ বর্জ্য পদার্থ জ্বালিয়ে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, তার একটি ডেমো প্রজেক্টও করে সে ৷ তার প্রতিভার জন্য কয়েকটি বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে সে পুরস্কারও পেয়েছে ৷ তবে তার গবেষণামূলক প্রজেক্টগুলি বাস্তবায়িত হয়নি ৷
এখন সে মগ্ন তার স্মার্ট শু নিয়ে ৷ স্মার্ট ফোন, ঘড়ি হাতে এসেছে ৷ কিন্তু পায়ের সঙ্গী কি হবে স্মার্ট শু ? বলবে সময় ৷ তবে সৌভিকের দাবি, জুতো পরে হাঁটলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে ৷ আর তা দিয়ে মোবাইল, পাওয়ার ব্যাঙ্ক-সহ নানা ধরনের গ্যাজেটে চার্জ দেওয়া যাবে ৷ এছাড়া এই জুতোয় লাগানো থাকবে গোপন ক্যামেরা ও নেভিগেশন সিস্টেম ৷ জিপিএস ট্র্যাকিং থাকায় এই জুতো শিশুদের নিরাপত্তা দেবে ৷ ক্যামেরায় গোপনে রেকর্ড করাও সম্ভব হবে ৷
বিশেষত পর্বতারোহী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই স্মার্ট জুতো অনেক দিক দিয়ে কার্যকরী ৷ ভ্রমণে বেরিয়ে অনেক সময় মোবাইল বা লাইট অথবা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেটে সহজেই চার্জ দিতে পারবেন তাঁরা ৷ জুতোর তলায় থাকা একটি যন্ত্রের মাধ্যমে পায়ের চাপে বিদ্যুৎ তৈরি হবে ৷ একটি 2 হাজার এমএএইচ ব্যাটারি সহজেই চার্জ হবে ৷ সৌভিক জানিয়েছে, এক কিলোমিটার হাঁটলেই ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে যাবে ৷ আর সেখান থেকে একটি মোবাইল চার্জ বা অন্য কোন গ্যাজেট চার্জ করা যাবে।
চন্দননগরের বারাসাত দে পাড়ায় বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৌভিকের এই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা অর্থ ৷ বাবা স্বরূপ শেঠ একজন জুটমিল শ্রমিক ৷ খরচসাপেক্ষ এই স্মার্ট শু তৈরি হবে কী করে ? তাই কোনও জুতো কোম্পানি বা সংস্থা তার এই কাজে পাশে এসে দাঁড়াক, চায় সৌভিক ৷ তাহলে এই স্মার্ট শু তৈরিতে খরচের টাকার জোগাড় হবে ৷ পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বৈজ্ঞানিক সব কাজকর্মে আগ্রহ তার ৷ স্কুলের শিক্ষক থেকে প্রতিবেশী এক দাদা এই কাজে সাহায্য করে সৌভিককে ৷ বাড়িতে আর্থিক পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো না-হলেও অদম্য ইচ্ছেশক্তিতে কাজ করে যাচ্ছে খুদে আবিষ্কারক ৷ ভবিষ্যতে আইটিআইতে পড়াশোনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে তার ৷ এখন তার এই 'জুতা আবিষ্কার'-এর সহযোগী হবে কেউ ? দেখা যাক ৷
আরও পড়ুন: বিশেষভাবে সক্ষম মেয়েকে খাইয়ে দিতে 'মা রোবট' বানালেন গোয়ার দিনমজুর