বেগমপুর, 11 নভেম্বর: নিষিদ্ধ আতশ বা শব্দবাজি তৈরি ৷ সবুজবাজি করতে গিয়ে জেরবার হতে হচ্ছে বেগমপুর বাজি ব্যবসায়ীদের । সবুজবাজি তৈরি করতে লাগবে লাইসেন্স ও পর্যাপ্ত কেমিক্যাল । কোনওটাই নেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বেগমপুরের বাজি ব্যবসায়ীদের কাছে । যার জেরে গত এক বছর ধরে বাজি তৈরি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বেগমপুরে । বাধ্য হয়ে তামিলনাড়ুর শিবাক্যাসি থেকে বাজি এনে ব্যবসা করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের । বাকি ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েছেন অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে । একসময় কয়েক হাজার শ্রমিক এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তবে এখন তাঁরা অন্যত্র কাজে চলে যাচ্ছেন ।
পরিবেশ দূষণ রুখতে আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়েছে শব্দবাজি তৈরি । নিদিষ্ট নিয়ম মেনে তাই দূষণমুক্ত বাজি তৈরি করার চিন্তাভাবনা নেয় রাজ্য সরকার । এর জন্য ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্রীয় সংস্থা নেরি(neeri) । যারা এই ছাড়পত্র পাবে তাদের নিদিষ্ট কেমিক্যাল ব্যবহার করেই করতে হবে বাজি তৈরি । সেটার জন্য লাগবে লাইসেন্স । কিন্তু বর্তমানে সবুজবাজি তৈরি করতে কেমিক্যাল থেকে লাইসেন্স কিছুই নেই বেগমপুরের বাজি ব্যবসায়ীদের কাছে ।
বেগমপুরে মূলত রংমশাল ও তুবড়ি তৈরি হয় । 20 থেকে 25 জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কয়েকহাজার শ্রমিক এই বাজি তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন । তবে গতবছর থেকে এই ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এর উপর পুলিশি অভিযান, তার ফলে এই ব্যবসা লাটে উঠেছে । ব্যবসায়ীদের দাবি, লাইসেন্স পেতে ও কেমিক্যাল সহজলভ্য হতে আগামী বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে । আর এতেই সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা । ফলে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে তাঁদের । এছাড়াও বহু বাজির কর্মীরাও অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন । এরপর ফের নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গেলে শ্রমিক তৈরি করতে হবে । সেটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
এই বেগমপুরে দীপাবলির আগে দু'দিন বাজির মেলা বসে । বর্তমানে সেটাও প্রায় বন্ধের মুখে । এবারেও বহু মানুষ আসছেন বাজি কিনতে । অধিকাংশই সবুজবাজি বিক্রি হচ্ছে । তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে । বাজি ব্যবসায়ী রবিন কোলে বলেন, "নির্বাচনের আগে থেকেই বাজি তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেগমপুরে । সবুজবাজির লাইসেন্সে যারা পেয়েছে তারাই বাজি বিক্রি করছে । এখানে বাজির মেলা হত সেটা এ বছর হবে না । অন্যান্য বাজি বিক্রি করতে পারব না । কলকাতা হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আতশবাজি কিনতে আসত লোকজন । যারা এই বাজি ব্যবসা করত কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ জোগারের কাজ করছেন । আমিও বাজি ব্যবসা করতাম ৷ কিন্তু পুলিশ এসে নিয়ে গিয়েছে । কিছু করতে পারছি না । বাধ্য হয়ে বাঁশের কাঠামো তৈরি করি । আগামিদিনে সরকার একটা ব্যবস্থা করুক এই ব্যবসার ।"
আরেক বাজি ব্যবসায়ী বুম্বা নাথের কথায়, "সরকার থেকে সবুজবাজি বিক্রির করার অনুমতি দিয়েছে । বেগমপুরে বাজি তৈরি হত সেই কাজ প্রায় দু'বছর বন্ধ । কারণ এটাই, উপযুক্ত কেমিক্যাল ও লাইসেন্স নেই । নেরি থেকে এসে ট্রেনিং দিয়েছে । তার সার্টিফিকেট পেয়েছি । কিন্তু লাইসেন্স পেতে গেলে স্যাম্পেল পাঠিয়ে সামনের বছর কাজ চালু করতে পারব । আমাদের রাজ্যে কেমিক্যাল সহজলভ্য নেই । আমার বাজি বানাতে পারছি না । শিবাক্যাসি থেকে কিনে বিক্রি করছি । কাজ বন্ধের ফলে ব্যবসায়ী থেকে শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গিয়েছে । কেমিক্যাল ও লাইসেন্স পেলে তবে বাজি তৈরি হবে । তারপর শ্রমিক তো আছেই । সরকার অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়েছে । তারা বেগমপুরের মেলায় গিয়ে বসবে ।"
পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প সমন্বয় সমিতির হুগলি জেলার সম্পাদক সন্দীপ বসু জানান, জি20 সম্মলনেও আতশবাজি নিয়ে আলোচনা হয়েছে । সবুজ বাজিতে বেরিয়াম কেমিক্যাল দিয়ে বাজি তৈরি করা যাবে না । বেরিয়ামের পরিবর্তে স্ট্রনসিয়াম ব্যবহার করতে হবে । কিন্তু এই কেমিক্যালের মেয়াদ খুব কম । সেটা তামিলনাড়ুতে করা সম্ভব । কারণ ওখানে আবহাওয়া শুষ্ক । যার কারণে বাজির মেয়াদ বেশি দিন থাকে । এছাড়াও সবুজবাজিতে সালফার ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । এতদিন যেসব ব্যবসায়ীরা কেমিক্যালের যোগান দিতেন, সবুজবাজির কেমিক্যাল তারা এখন দিতে পারছেন না । ধোঁয়া কমানোর জন্য রয়েছে এডেশিপ ৷ সেই এডেশিপও সহজলভ্য নয় । বর্তমানে বেগমপুরের বাজি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সে পাওয়াটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপারে হয়ে দাঁড়িয়েছে । এছাড়াও এখন শ্রমিক সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । বাজি কাজ এমনিতেই কেউ করতে চায় না । তার উপর কাজ বন্ধের ফলে অনেকেই রাজমিস্ত্রি ও কারখানার কাজে চলে গিয়েছেন । নতুন করে ব্যবসা করা সত্যি সমস্যার ব্যাপার বলে তিনি দাবি করেন ।
আরও পড়ুন: