সিঙ্গুর, 10 এপ্রিল : চালু না হওয়া ন্যানো কারখানার উপর দিয়ে কি এবার নতুন কোনও হাওয়া বইতে চলেছে ?
দ্বিতীয় দফার হাই ভোল্টেজ কেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম ৷ লড়াই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে ৷ আর চতুর্থ দফার হাইভোল্টেজ নিঃসন্দেহে এই সিঙ্গুর ৷ যেখানে লড়াই বেচারাম মান্না এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মধ্যে ৷ যে মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্নাকে সঙ্গে নিয়ে বছর 15 আগে বাংলার মাটিতে নতুন আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল মহাকরণের দরজায় ৷ ভেঙে পড়েছিল 34 বছরের বামেদের সব বাধা ৷ বাংলায় পরিবর্তন এসেছিল 2011 সালে ৷
10 বছর পরে এই সিঙ্গুর থেকেই যেন অস্তিত্বরক্ষার লড়াইয়ে তৃণমূল ৷ পাশাপাশি যে সিঙ্গুর একদিন বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়েছিল, আজ সেখানে তাঁদের প্রার্থী দলের তরুণ তুর্কি সৃজন ভট্টাচার্য ৷ সারাদিন সিঙ্গুর চষে এসএফআই রাজ্য সম্পাদকের উক্তি, " শান্তিপ্রিয় সিঙ্গুরে শান্তির ভোট হয়েছে ৷ দু'একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে ৷ প্রায় আশি শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে ৷ এই বিপুল ভোট নিঃসন্দেহে সরকার বিরোধী হাওয়াকে তীব্র করেছে ৷ রাজ্যের তৃণমূল এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ তাঁদের রায় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ৷"
যে মাস্টারমশাইকে সঙ্গে নিয়ে আজ থেকে বছর 15 আগে সিঙ্গুরের মাটিতে নতুন করে রাজনীতির বর্ণপরিচয় রচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আজ পদ্মাসনে আসীন ৷ বলছেন, "বাংলায় শিল্পোন্নয়নের জন্য একমাত্র ভরসা বিজেপি ৷ বিজেপিকে ভোট দিয়ে বাংলায় নতুন সূর্য উঠতে চলেছে ৷ বাংলার মানুষ রায় দিয়েছেন ৷ বিজেপির জয় নিশ্চিত ৷"
আরও পড়ুন : এই কুনাট্যরঙ্গ বহাল থাকতে দেওয়া কেন?
সিঙ্গুরকে হাতের তালুর মতো চেনেন যিনি, সেই বেচারাম বলছেন, যতই লোকসভা ভোটে বিজেপি কারসাজি করে থাকুক না কেন ৷ এবারে তারা টু শব্দ করতে পারবে না ৷ নিজের গড় হরিপাল ছেড়ে নেত্রীর নির্দেশে সিঙ্গুর থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৷ চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এককালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে ৷ 89 বছরের মাস্টারমশাইকে যখন ভোটে খাটতে পারবেন না, এই যুক্তিতে তৃণমূল টিকিট দেয়নি, তখন বেসুরো মাস্টারমশাইয়ের বিরুদ্ধে ভরসা সেই বেচারাম মান্না ৷
এককালের দুই সতীর্থ বেচারাম এবং রবীন্দ্রনাথ যখন একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে আসেন, তখনই জাতীয় সড়কের ধারে নতুন হাওয়া সৃজনের হাত ধরে ৷ যে সৃজনকে সামনে রেখে তারুণ্য়কে মুখ করতে চেয়েছে বামেরা, সেই সৃজনই ভোটের দিন বলছেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে ৷ তাঁরা জিতবেন ৷
সৃজনের এই বিশ্বাস কি অবিশ্বাসের নামান্তর ? নাকি অন্য কোনও সমীকরণকে ইঙ্গিত করছেন তিনি ? সিঙ্গুর কি নতুন করে বামেদের সুযোগ দিতে চলেছে ? সারাদিন দু'একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু বড়সড় অশান্তি সিঙ্গুরে ঘটেনি ৷ এই শান্তি কি সত্যিই শান্তি ? নাকি ঝড়ের আগে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ?