ETV Bharat / state

কোরোনা আর লকডাউনে সংকটে বেগমপুরের তাঁত শিল্প

মঙ্গলহাটের মতো ব্যবস্থাস্থল বন্ধ ৷ লকডাউনে চাহিদাও সামান্য ৷ তাঁতঘরে মজুত হয়ে পড়ে আছে হাজার হাজার শাড়ি৷ সংকটে বেগমপুরের তাঁত শিল্প৷

Begampur Tant weaving industry in lockdown crisis
তাঁত শিল্প
author img

By

Published : Aug 25, 2020, 8:54 PM IST

বেগমপুর, 25 অগাস্ট : রাজ্যের তাঁত শিল্পের অন্যতম ঠিকানা হুগলির বেগমপুর ৷ পাওয়ারলুম হোক বা হ্যান্ডলুম, বছরভর তাঁত বোনার শব্দে মুখরিত থাকত বেগমপুর ৷ কোরোনা আর লকডাউন গ্রাস করেছে সেই বেগমপুরকে ৷ সমবায় থেকে ক্লাস্টার, সবখানে সংকট চরমে ৷ ব্যবসা তলানিতে ৷ তাঁতশিল্পীর ঘরে যেমন, তেমনই মহাজনের ঘরেও মাল মজুত ৷ নতুন অর্ডার নেই ৷

তাঁতশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ মাসে থমকে গিয়েছে কাজ । দেখা দিয়েছে উভয় সংকট ৷ একদিকে যেমন এই শিল্পের কাঁচামাল- সুতো, রং পাওয়া যাচ্ছে না লকডাউনে, তেমনই মঙ্গলহাটের মতো ব্যবসাস্থল বন্ধ ৷ সমবায় ও ক্লাস্টারেও অতি সামান্য কাজ হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, মহাজনী প্রথায় যে শিল্পীরা কাজ করতেন তাঁদের হাতেও কাজ নেই, যেহেতু নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না মহাজন। কারণ বিক্রি না হওয়া শাড়ি মজুত হয়ে পড়ে আছে মহাজনের ঘরে ৷ এই অবস্থায় অর্ধেকেরও বেশি তাঁতঘর বন্ধ।

Begampur Tant weaving industry in lockdown crisis
বিক্রি নেই৷ মজুত হয়ে পড়ে তাঁতের শাড়ি৷

বেগমপুরে তাঁতের কাজ হয় মোটামুটি তিনভাবে ৷ এক) সমবায়ের অধীনে তাঁত বোনেন শিল্পীরা৷ দুই) হ্যান্ডলুমে ক্লাস্টার গড়ে তাঁত বোনা হয়৷ এবং তিন) পাওয়ারলুমে বুনে মহাজনের মাধ্যমে চলে ব্যবসা ৷ এখানে তাঁত সমবায়ে যুক্ত 400 তাঁতি ৷ 2010 সালে গড়ে ওঠে বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ৷ ঐতিহ্য আর যুগের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই ছিল ক্লাস্টারের কাজ ৷ তাতেই সাফল্য ৷ একদিকে সরকারি সংস্থা বিশ্ববাংলা এখানকার কাজ কিনত ৷ অন্যদিকে বেসরকারিভাবেও ভালো বিক্রি ছিল। কিন্তু সে সবই এখন অতীত ৷ কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন ৷ সমবায়ের অধীনের শিল্পীদের সপ্তাহে 2 টির বেশি শাড়ি বোনার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁতিদের কথায়, লকডাউনে কয়েক হাজার শাড়ি মজুত পড়ে আছে। ফলে, নতুন করে শাড়ি উৎপাদনের ঝুঁকি নিচ্ছেন না৷ একই অবস্থা পাওয়ারলুমের। যা মহাজনী ব্যবসা ৷ চাহিদা নেই বলে এখানেও উৎপাদন থমকে ৷ অথচ কয়েক হাজার শিল্পী পাওয়ারলুমের সঙ্গে জড়িত। তাঁরাও বেকার।

লকডাউনে উভয়সংকটে বেগমপুরের তাঁত শিল্প৷

হ্যান্ডলুম তাঁতি অশোক দত্ত বলেন, "যাঁরা পুরানো তাঁতি তাঁরাই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তাঁদের পক্ষে পেশা বদল করা সম্ভব না ৷ একটা শাড়ি তৈরি করলে 160 টাকা মজুরি মেলে ৷ শাড়ি তৈরি না হলে মজুরি পাব কী করে !"

পাওয়ারলুম শিল্পী সূর্য দত্ত বলেন, "বেগমপুরের তাঁত আমদানি-রপ্তানি কলকাতা নির্ভর । ব্যবসা পুরো বন্ধ। কারণ মঙ্গলা হাটও বন্ধ। শাড়ির বিক্রি নেই। কত জমানো সম্ভব কম্পানির ঘরে! আমাদের ওরা পয়সাও দিচ্ছে না।"

সব শিল্পীই জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর দু'মাস বাকি। অন্য বছর এই সময় নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। এবার কাজ নেই ! সূর্য দত্তর দাবি, "মঙ্গলা হাট সহ সমস্ত হাট খুলে দিক সরকার। বিক্রিবাটা শুরু হলেই কাজ পাব।"

এতটা সংকটে থাকলেও কোনওরকম সরকারি সাহায্য মেলেনি, অভিযোগ শিল্পীদের৷ পাওয়ারলুমের ব্যবসায়ী স্বপন নন্দী বলেন, "হাটগুলো এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকাতেই সমস্যা । ট্রান্সপোর্টে ট্রেনই ভরসা ছিল। লকডাউন ওঠার পর ব্যবসা কিছুটা শুরু হলেও নতুন করে সপ্তাহে দু'দিনের লকডাউনে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমার 30 বছরে ব্যবসা ৷ এই অবস্থা কোনওদিন দেখিনি।"

বেগমপুরের তাঁত ব্যবসার অবস্থা যে ভালো না, তা বললেন বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টারের ম্যানেজার শৈল কুমার কুণ্ডুও৷ শৈলবাবু বলেন, "লকডাউনে ব্যবসা বসে গেছে। টানা 60 দিন বন্ধ ছিল কাজ। গতবছরের লেনদেন ছিল দেড় কোটি টাকা। গতবার জুন-জুলাইয়ে 18 লাখ টাকার বিক্রি ছিল ৷ এবছর বিক্রি 3 লাখ টাকায় ঠেকেছে । এই লোকসান কীভাবে পূরণ হবে জানি না । তাঁত সমবায়গুলি আর্থিক সংকটে পড়ে গিয়েছে।"

আপাতত অন্ধকার থেকে উদ্ধারের পথ জানা নেই বেগমপুরের ৷ সরকারি সাহায্যের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা ৷

বেগমপুর, 25 অগাস্ট : রাজ্যের তাঁত শিল্পের অন্যতম ঠিকানা হুগলির বেগমপুর ৷ পাওয়ারলুম হোক বা হ্যান্ডলুম, বছরভর তাঁত বোনার শব্দে মুখরিত থাকত বেগমপুর ৷ কোরোনা আর লকডাউন গ্রাস করেছে সেই বেগমপুরকে ৷ সমবায় থেকে ক্লাস্টার, সবখানে সংকট চরমে ৷ ব্যবসা তলানিতে ৷ তাঁতশিল্পীর ঘরে যেমন, তেমনই মহাজনের ঘরেও মাল মজুত ৷ নতুন অর্ডার নেই ৷

তাঁতশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ মাসে থমকে গিয়েছে কাজ । দেখা দিয়েছে উভয় সংকট ৷ একদিকে যেমন এই শিল্পের কাঁচামাল- সুতো, রং পাওয়া যাচ্ছে না লকডাউনে, তেমনই মঙ্গলহাটের মতো ব্যবসাস্থল বন্ধ ৷ সমবায় ও ক্লাস্টারেও অতি সামান্য কাজ হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, মহাজনী প্রথায় যে শিল্পীরা কাজ করতেন তাঁদের হাতেও কাজ নেই, যেহেতু নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না মহাজন। কারণ বিক্রি না হওয়া শাড়ি মজুত হয়ে পড়ে আছে মহাজনের ঘরে ৷ এই অবস্থায় অর্ধেকেরও বেশি তাঁতঘর বন্ধ।

Begampur Tant weaving industry in lockdown crisis
বিক্রি নেই৷ মজুত হয়ে পড়ে তাঁতের শাড়ি৷

বেগমপুরে তাঁতের কাজ হয় মোটামুটি তিনভাবে ৷ এক) সমবায়ের অধীনে তাঁত বোনেন শিল্পীরা৷ দুই) হ্যান্ডলুমে ক্লাস্টার গড়ে তাঁত বোনা হয়৷ এবং তিন) পাওয়ারলুমে বুনে মহাজনের মাধ্যমে চলে ব্যবসা ৷ এখানে তাঁত সমবায়ে যুক্ত 400 তাঁতি ৷ 2010 সালে গড়ে ওঠে বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ৷ ঐতিহ্য আর যুগের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই ছিল ক্লাস্টারের কাজ ৷ তাতেই সাফল্য ৷ একদিকে সরকারি সংস্থা বিশ্ববাংলা এখানকার কাজ কিনত ৷ অন্যদিকে বেসরকারিভাবেও ভালো বিক্রি ছিল। কিন্তু সে সবই এখন অতীত ৷ কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন ৷ সমবায়ের অধীনের শিল্পীদের সপ্তাহে 2 টির বেশি শাড়ি বোনার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁতিদের কথায়, লকডাউনে কয়েক হাজার শাড়ি মজুত পড়ে আছে। ফলে, নতুন করে শাড়ি উৎপাদনের ঝুঁকি নিচ্ছেন না৷ একই অবস্থা পাওয়ারলুমের। যা মহাজনী ব্যবসা ৷ চাহিদা নেই বলে এখানেও উৎপাদন থমকে ৷ অথচ কয়েক হাজার শিল্পী পাওয়ারলুমের সঙ্গে জড়িত। তাঁরাও বেকার।

লকডাউনে উভয়সংকটে বেগমপুরের তাঁত শিল্প৷

হ্যান্ডলুম তাঁতি অশোক দত্ত বলেন, "যাঁরা পুরানো তাঁতি তাঁরাই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তাঁদের পক্ষে পেশা বদল করা সম্ভব না ৷ একটা শাড়ি তৈরি করলে 160 টাকা মজুরি মেলে ৷ শাড়ি তৈরি না হলে মজুরি পাব কী করে !"

পাওয়ারলুম শিল্পী সূর্য দত্ত বলেন, "বেগমপুরের তাঁত আমদানি-রপ্তানি কলকাতা নির্ভর । ব্যবসা পুরো বন্ধ। কারণ মঙ্গলা হাটও বন্ধ। শাড়ির বিক্রি নেই। কত জমানো সম্ভব কম্পানির ঘরে! আমাদের ওরা পয়সাও দিচ্ছে না।"

সব শিল্পীই জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর দু'মাস বাকি। অন্য বছর এই সময় নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। এবার কাজ নেই ! সূর্য দত্তর দাবি, "মঙ্গলা হাট সহ সমস্ত হাট খুলে দিক সরকার। বিক্রিবাটা শুরু হলেই কাজ পাব।"

এতটা সংকটে থাকলেও কোনওরকম সরকারি সাহায্য মেলেনি, অভিযোগ শিল্পীদের৷ পাওয়ারলুমের ব্যবসায়ী স্বপন নন্দী বলেন, "হাটগুলো এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকাতেই সমস্যা । ট্রান্সপোর্টে ট্রেনই ভরসা ছিল। লকডাউন ওঠার পর ব্যবসা কিছুটা শুরু হলেও নতুন করে সপ্তাহে দু'দিনের লকডাউনে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমার 30 বছরে ব্যবসা ৷ এই অবস্থা কোনওদিন দেখিনি।"

বেগমপুরের তাঁত ব্যবসার অবস্থা যে ভালো না, তা বললেন বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টারের ম্যানেজার শৈল কুমার কুণ্ডুও৷ শৈলবাবু বলেন, "লকডাউনে ব্যবসা বসে গেছে। টানা 60 দিন বন্ধ ছিল কাজ। গতবছরের লেনদেন ছিল দেড় কোটি টাকা। গতবার জুন-জুলাইয়ে 18 লাখ টাকার বিক্রি ছিল ৷ এবছর বিক্রি 3 লাখ টাকায় ঠেকেছে । এই লোকসান কীভাবে পূরণ হবে জানি না । তাঁত সমবায়গুলি আর্থিক সংকটে পড়ে গিয়েছে।"

আপাতত অন্ধকার থেকে উদ্ধারের পথ জানা নেই বেগমপুরের ৷ সরকারি সাহায্যের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.