কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি: বহুদিন পর নিজের গড় হাতছাড়া হল তৃণমূলের ৷ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের জয়ের পর সাচার কমিটির রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের আক্রমণ করলেন তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ৷ এর পাশাপাশি দলের দুর্নীতিকেও দায়ী করে সরব হলেন তিনি ৷ কারও নামোল্লেখ না-করে আরামবাগের সাংসদ লিখলেন, "দলের কিছু বড় মন্ত্রীর অপকর্মের কারণে আমাদের লাল কার্ড দেখতে হয়েছে এবং মাঠের বাইরে আছে" ৷
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের এই বিধানসভা কেন্দ্রটিতে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি 'মমতা ঘনিষ্ঠ' বলে মনে করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷ একটি মাত্র বিধানসভা কেন্দ্রের এই হার সহজে মানতে পারেননি তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম-কংগ্রেস জোটকে 'অনৈতিক' বলে উল্লেখে করেন ৷ তিনি ঘোষণা করেন, আসন্ন 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও জোটে যাবে না, একাই লড়বে ৷
- — Aparupa Poddar (@AparupaPoddar) March 2, 2023 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
— Aparupa Poddar (@AparupaPoddar) March 2, 2023
">— Aparupa Poddar (@AparupaPoddar) March 2, 2023
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জয়ের পিছনে সংখ্যালঘু তত্ত্ব একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল ৷ 2021 সালে এখানেই প্রথম তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়ী করেছিল প্রয়াত মন্ত্রী তথা বিধায়ক সুব্রত সাহা ৷ সেই কেন্দ্রটিতেই দু'বছর যেতে-না-যেতেই বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস জয়ী হলেন ৷ এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেই সংখ্যালঘু তত্ত্ব নিয়ে বাম ও কংগ্রেসকে বিঁধলেন তৃণমূল নেত্রী অপরূপা পোদ্দার ৷ তিনি তাঁর পোস্টে সাচার কমিটি র কথা উল্লেখ করেন, "ভারতে 70 বছর ধরে কংগ্রেস সরকার এবং বাংলায় 35 বছর ধরে বাম সরকার মুসলমানদের বোকা বানিয়েছিল এবং সেই কারণে কংগ্রেস সাচার কমিটি নিযুক্ত করেছিল ৷"
আরও পড়ুন: অনৈতিক জোটের জয় ! সাগরদিঘি হারিয়েও আত্মবিশ্বাসী মমতা
প্রসঙ্গত, 2005 সালে কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের জমানায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং 7 সদস্যের সাচার কমিটি গঠন করেন ৷ এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষার অবস্থা খতিয়ে দেখা এবং এই সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়ার কারণগুলি রিপোর্টে তুলে ধরা ৷ এই কমিটির প্রধান ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রজিন্দর সাচার ৷
অপরূপা পোদ্দার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, "অধীর রঞ্জন চৌধুরী কি আজ সেই সাচার কমিটির রিপোর্ট অস্বীকার করতে পারেন ?" সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বামপন্থীদের সম্পর্কের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি তিনি ৷ কিন্তু অপরূপা লেখেন, সাগরদিঘিতে জয়ের কারণ, বাংলার বামপন্থীদের ভুলে যাওয়া ৷ আর এটি বুঝতে পেরে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন অধীর চৌধুরী ৷ অপরূপা মনে করিয়ে দেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট স্বীকার করেছিল, আইএসএফ একটি সাম্প্রদায়িক দল ৷ তাদের জন্য এই জোট পরাজিত হয়েছে ৷ এর সঙ্গে উঠে আসে নওশাদ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গও ৷
তবে শুধু বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেও ঘাসফুলের অন্দরমহলে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের ৷ এই প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন অপরূপা। তিনি লেখেন, কয়েকজন বড় মন্ত্রীর অপকর্মের জন্য তাদের লাল কার্ড দেখতে হল এবং তারা 'মাঠের বাইরে' আছেন ৷ তিনি আরও লেখেন, "কিছু বড় নেতা এখনও যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে ৷" তবে এই বক্তব্য তাঁর একান্ত নিজস্ব ৷ পোস্টের শেষে একথা শেষে লিখেছেন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা ৷ পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, "শুধু মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কথা, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করুন, তাঁর পদ্ধতি অনুসরণ করুন ৷ দল অনেক দূর এগিয়ে যাবে ৷"
আরও পড়ুন: সাগরদিঘিতে বাইরনের জয়, পঞ্চায়েতের লড়াইয়ের জন্য কি সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল ?