চুঁচুড়া, 13 জুন : পরীক্ষাটা ছিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য । তাতে অংশগ্রহণ করেন অনেকেই । লিখিত থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা সবই নেওয়া হয় । কিছুদিন পর ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী 54 জনের নিয়োগের একটি তালিকা প্রকাশ হয় । আর তখনই দেখা যায়, তাতে নাম রয়েছে এক কাউন্সিলরের । শুধু তাই নয়, নাম রয়েছে আরও দুই কাউন্সিলরের ছেলেদেরও । তারপর থেকেই চুঁচুড়া পৌরসভায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিরোধীরা । বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে পৌরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর এক সদস্যও ।
1 মার্চ চুঁচুড়া পৌরসভায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য একটি লিখিত পরীক্ষা হয় । তাতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় 8 হাজার চাকরি প্রার্থী । চার দিনের মাথায় অর্থাৎ 4 মার্চ সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় । তাতে 300 জনের নামের তালিকা প্রকাশিত হয় । কিছুদিন পর তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় । সেখান থেকে চূড়ান্ত 76 জনকে নির্বাচন করা হয় । প্রত্যেককে নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরই আবার 54 জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয় । আর সেই তালিকায় দেখা যায়, নাম রয়েছে পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন তৃণমূল কাউন্সিলর সৌমিত্র মালাকারের । পাশাপাশি তালিকার নাম রয়েছে 9 নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন তৃণমূল কাউন্সিলর সুপর্ণা সেনের ছেলে সাত্ত্বিক সেনের । নাম রয়েছে 13 নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন তৃণমূল কাউন্সিলর জয়দেব অধিকারীর ছেলে সৌদীপ্ত অধিকারীর । শুধু তাই নয়, গতকাল তাঁরা কাজে যোগদানও করেছেন । তবে, বাকি 19 জনকে এখনও কাজে যোগদান করানো হয়নি । আর এই পুরো বিষয়টাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা ।
বিরোধীদের প্রশ্ন, 8 হাজার চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষার ফলাফল মাত্র চার দিনে কীভাবে প্রকাশ সম্ভব ? আর সেই ফলাফলের তালিকায় কীভাবে একজন কাউন্সিলরের নাম এল ? পাশাপাশি চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগপত্রের ওই তালিকায় দুই কাউন্সিলরের ছেলেদের নাম রয়েছে । তা নিয়েও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা ।
এই বিষয়ে সৌমিত্র মালাকারের দাবি, কোনও দুর্নীতি হয়নি । তিনি 20 মার্চ কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন । তাই নিয়ম মেনে তিনি পরীক্ষা দিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন ।
সৌমিত্র মালাকারের দাবির পালটা দিয়েছেন পৌরসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা CPI(M)-এর সমীর মজুমদার । তাঁর বক্তব্য, "সৌমিত্র মালাকার 20 মার্চ পদত্যাগ করেছেন । আর পরীক্ষা থেকে শুরু করে তার ফলাফল প্রকাশ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে 20 মার্চের আগে । সুতরাং, ওই সময়ে সৌমিত্র মালাকার কাউন্সিলর পদে বহাল ছিলেন । তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দুর্নীতি হয়েছে ।"
পৌরসভার কর্মী নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসক মণ্ডলীর এক সদস্যও । তাঁর অভিযোগ, 54 জনের যে নামের তালিকা প্রকাশ পেয়েছে তাতে দুর্নীতি হয়েছে । শুধু তাই নয়, বাকি 19 জনের নামের তালিকা প্রকাশ না করা হলেও, তাঁদের বেতন দেওয়া হবে । বিরোধীদের বক্তব্য, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই বাকি 19 জনের নামের তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি ।