শিলিগুড়ি, 26 জুলাই: রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় হাতির উপদ্রব চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বন দফতরের। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে হাতির তাণ্ডব মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বন বিভাগের। দলছুট, দাঁতাল হাতির তাণ্ডবে একদিকে যেমন বিস্তীর্ণ জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ মানুষের। গত দেড় বছরে রাজ্যে হাতির আক্রমণে 21 জনের মৃত্যু হয়েছে। এমতাবস্থায় দলছুট দুষ্ট হাতিদের বাগে আনতে অভিনব উদ্যোগ নিল রাজ্য বন দফতর ও রাজ্য জু অথোরিটি। এবার ওইসব দুষ্ট দাঁতালের জন্য মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি করতে চলেছে বন দফতর। সে জন্য জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে বাঁকুড়ায় ৷
সেই সংশোধনাগারে দুষ্ট হাতিদের রেখে চলবে প্রশিক্ষণ। শুধু তাই নয়, অসুস্থ হাতিদের রেখে করা হবে চিকিৎসা। এতে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত কমবে। প্রাকৃতিকভাবে ঘিরে এনক্লোজার তৈরি করে ওই সংশোধনাগারে হাতিদের রাখা হবে। বেশ কয়েকটি হাতি হলে পরবর্তীতে সাফারির মাধ্যমে হাতিগুলিকে পর্যটনের আওতায় আনা হবে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ, হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স) সৌমিত্র দাশগুপ্ত বলেন, "দলছুট দুষ্ট হাতি একটা বড় সমস্যার বিষয়। সেজন্য মুক্ত সংশোধনাগার তৈরির একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে।"
আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে হাতির হানায় প্রাণ গেল হুলা পার্টির 2 সদস্যের, আহত বহু
তিনি আরও বলেন, "অনেক সময় দুষ্ট হাতিদের ধরে অন্য জায়গায় ছেড়ে দিতে হয়, আবার মানুষ মারতে শুরু করলে কখনও আমরা বাধ্য হই মেরে দিতে। সেসব দুষ্ট হাতিদের জন্য ওই মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি করা হবে। 1500 হেক্টর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে বাঁকুড়ায়। বেশ কয়েকটি হাতিও চিহ্নিত করা হয়েছে। আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কায় এই ধরনের সংশোধনার রয়েছে।" সলিটারি নেচার অ্যান্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন ফাউন্ডেশন (স্ন্যাপ)-এর সম্পাদক কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, "এটা বন দফতরের একটা খুব ভালো উদ্যোগ। আফ্রিকা, থাইল্যান্ডে এই ধরনের মুক্ত সংশোধনাগার রয়েছে। তবে হাতিগুলিকে সঠিকভাবে চিহ্নিতকরণ করতে হবে।"
জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের এই ধরনের ছ'টি হাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-সহ একাধিক এলাকায় হাতি তাণ্ডব চালায়। কেরলে এই ধরনের মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি হয়েছে। রাজ্য বন দফতরের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন আধিকারিরককে সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই সংশোধনাগারের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে বনাঞ্চল ও খাবার থাকবে।
আরও পড়ুন: ঘুমপাড়ানি গুলিতে বনদফতর কাবু করলেও ঝাড়গ্রামে মৃত্যু ঘাতক গজরাজের
ভিতরে হাতির জন্য পৃথক কয়েকটি এনক্লোজার থাকবে। সবমিলিয়ে 25 থেকে 30টি হাতি সেখানে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক হাতিকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে পরবর্তীতে কুনকি হাতি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি সেখানে গড়া হবে হাতির জন্য অত্যাধুনিক হাসপাতাল। বয়স্ক ও অসুস্থ হাতিরও অনায়াসে চিকিৎসা করা যাবে। এছাড়াও পরবর্তীতে সেখানে হাতি সাফারির মাধ্যমে পর্যটন গড়ে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে। তার জন্য মোট 70 থেকে 80 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।