শিলিগুড়ি, 26 অগস্ট : ঘন জঙ্গল। পাহাড়ি নদী । বন্য জন্তু । শাল, সেগুনের বুক চিরে ডুয়ার্স যাত্রা ৷ পাশেই চোখ জুড়ানো চা বাগানের সবুজ গালিচা । এ বার ডুয়ার্স যাত্রার সময় কাচের কামরার মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন । চাইলে তা মুঠোফোনে বন্দিও করতে পারবেন । পুজোর আগে পর্যটকদের এই উপহার দিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল । এ বার ডুয়ার্সের রেলপথে ছুটবে ভিস্তাডোম রেল (Vistadome Coach)। শনিবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ভিস্তাডোম কোচ নিয়ে পথ চলা শুরু করবে এই টুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন (Tourist Special Train)। পরিষেবা শুরু হওয়ার আগেই প্রথম দিনের সফর হাউজফুল । এখন শুধু ট্রেনের জানালা দিয়ে ডুয়ার্সের প্রকৃতি ও ঘন অভয়ারণ্য নজরবন্দি করার অপেক্ষা ।
পাহাড়ের (North Bengal Tourism) মতোই পর্যটকদের কাছে পছন্দের ডেস্টিনেশন ডুয়ার্স । এতদিন পর্যন্ত ডুয়ার্সে যেতে হলে ট্রেন কিংবা বাসে চড়ে ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছতে হত । কিন্তু তাতে ডুয়ার্সের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে ট্রেন সাফারির যে আনন্দ, তা থেকে ব্রাত্য ছিলেন পর্যটকরা । আর তাই ট্রেনে চড়ে ডুয়ার্স সফরকে এ বার আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নিল ভারতীয় রেল । এ বার শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স যাওয়ার রুটে শুরু হতে চলেছে ভিস্তাডোম কোচ ।
শনিবার থেকে শতাব্দি এক্সপ্রেসের দু‘টি বাতানুকূল কামরা, দু’টি চেয়ার কার ও একটি ভিস্তাডোম কোচ নিয়ে যাত্রা শুরু করবে ভিস্তাডোম টুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন । নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত যাওয়া যাবে এই ট্রেনে । ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল 7:20 মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে । উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স, পার্বত্য ও ঘন অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত 168 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে এই ট্রেন । শিলিগুড়ি থেকে সেবক, চালসা, মাদারিহাট, রাজাভাতখাওয়া স্টেশন হয়ে ট্রেনটি যাবে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত ।
আরও পড়ুন: Protest In Darjeeling : হেরিটেজ টয়ট্রেনকে বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে 11টি রেল স্টেশনে বিক্ষোভ
রয়েছে কেতাদুরস্ত আসন ৷ 44টি উন্নতমানের আসন 360 ডিগ্রি ঘুরতে পারবে । যাতে সেখানে থাকা যাত্রীরা পরিবেশের সৌন্দর্য স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পারেন । ট্রেনের গতি থাকবে 30 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ৷ মাথা পিছু 770 টাকা করে ভাড়া ধার্য্য করা হয়েছে ।
পাশাপাশি পর্যটকদের মনোরঞ্জনেরও ব্যবস্থা থাকছে যাত্রার সময়ে । কোচের ভেতরে থাকবে আধুনিক ওয়াই ফাই পরিষেবা, ডিজিটাল ডিসপ্লে স্ক্রিন, মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট-সহ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা । প্রত্যেক সপ্তাহে শুক্র, শনি ও রবিবার ছুটবে এই স্পেশ্যাল ট্রেন ।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার দিলীপ কুমার বলেন, "পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য হাসিমারা ও চালসা দু‘টো স্টেশনেই লোকনৃত্যের ব্যবস্থা করা হবে । ইতিমধ্যেই প্রথম যাত্রার জন্য সব সিট বুকিং হয়ে গিয়েছে । পরের সপ্তাহের জন্য প্রায় অর্ধেক বুকিংও শেষ । ওই কোচ পর্যটকদের উত্তর-পূর্বের পর্যটনকেন্দ্রগুলির প্রতি আরও আকর্ষণ বাড়াবে বলে আমরা আশাবাদী ।"
আরও পড়ুন, Privatization of Toy Train : বেসরকারিকরণের পথে ঐতিহ্যবাহী টয়ট্রেন, প্রতিবাদের উত্তাপ পাহাড়ে
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সন্দীপন ঘোষের কথায়, "ভিস্তাডোম কোচ উত্তরের পর্যটনে আলাদা মাত্রা এনে দেবে । তাতে উত্তরে পর্যটনে পর্যটকদের আরও ঢল নামবে বলে আমরা আশাবাদী ।"
টয় ট্রেন তো ছিলই ৷ এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে নয়া আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে ভিস্তাডোম কোচ ৷ করোনা পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে এলে এই স্পেশ্যাল ট্রেনের স্বাদ নিতে ভ্রমণপিপাসু বাঙালি যে আবার পাহাড়-ডুয়ার্সে আছড়ে পড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই ৷