দার্জিলিং, 12 জুলাই: ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করা এবং পুষ্টিকর খাবার দিতেই মিড ডে মিল প্রকল্প চালু করেছিল বিভিন্ন রাজ্য সরকার । পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে বসেই পুষ্টিকর খাদ্য পেত ছাত্র-ছাত্রীরা । COVID পরিস্থিতিতে এখন বিশ্বজুড়েই টালমাটাল পরিস্থিতি । স্কুল বন্ধ । এই অবস্থায় অভিভাবকদের হাতেই পড়ুয়াদের বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার । কিন্তু সেই খাবার কি শুধুমাত্র পড়ুয়ার পাতেই পড়ছে ? আদৌ কি শুধুমাত্র পড়ুয়ারাই সেই খাবার পাচ্ছে ? বিষয়গুলি অবশ্য সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না ।
স্কুলে মিড ডে মিলের মেনুতে ভাতের পাশাপাশি ডাল, তরকারি, ডিম দেওয়া হত পড়ুয়াদের । কোথাও কোথাও সপ্তাহে একদিন স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় মাছ বা মাংস পেত ছাত্র-ছাত্রীরা । COVID পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রয়েছে । দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়ায় জুলাই পার করে আগামী সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই । এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের হাতেই ছাত্র-ছাত্রীদের খাবার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের সরকার । পড়ুয়া পিছু দুই কিলোগ্রাম চাল ও আলুর পাশাপাশি চলতি মাস থেকেই 250 গ্রাম ডাল ও 50 মিলিলিটার স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে শিলিগুড়িতে । কিন্তু সে খাবার কি শুধুই ছাত্র-ছাত্রীরা খাচ্ছে? নাকি আর্থিক অনটন, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সেই খাবার ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে পরিবারের সব সদস্যদের মধ্যেই ? যেসব অভিভাবকরা মিড ডে মিলের খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেরই দাবি, এই পরিস্থিতিতে হাতে কাজ নেই । সংসারে টানাটানির পরিস্থিতি । তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই স্কুল থেকে পাওয়া খাদ্য সামগ্রী ভাগ করে খাচ্ছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা । অভিভাবকদের যে অংশ নিম্নবিত্ত তাঁদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পাওয়া এই খাদ্য সামগ্রী শুধুই সন্তানকে পৃথকভাবে রান্না করে দেওয়ার প্রশ্ন নেই । টানাটানির সংসারে সকলে মিলেই তা খাচ্ছেন । কেউ আবার জানাচ্ছেন, মিড ডে মিলের যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী পড়ুয়াদের দেওয়া হচ্ছে তা নিতান্ত অল্প । তা দিয়ে সন্তানের সারা মাস কখনওই চলবে না । ফলে ছেলে-মেয়েদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য আদৌ পূরণ হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যেও । শিলিগুড়ি বয়েজ় প্রাথমিক স্কুলের টিচার ইনচার্জ সন্দীপ পাল জানিয়েছেন, "সরকারি নির্দেশিকা মেনেই আমরা এই খাদ্য সামগ্রী পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছি । উদ্দেশ্যে পড়ুয়াদের খাওয়ানো । কিন্তু বাস্তবে সেই পড়ুয়ারা আদৌ পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছে কি না তা দেখা সম্ভব না ।"
শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ রায় স্বীকার করে নিয়েছেন, "মিড ডে মিল মানবিক কারণে চালু করা হয় । এর মূল উদ্দেশ্য দুই । ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুলমুখী করা এবং তাদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা । কিন্তু দু'টি উদ্দেশ্যই বর্তমানে বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না কোরোনা পরিস্থিতির কারণে । শুধু শিলিগুড়ি মহকুমাতেই 294টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে । পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় 34 হাজার । স্কুলে বসিয়ে ছেলে-মেয়েদের খাওয়ালে পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করা যেত । কিন্তু এই অবস্থায় তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না । তবে মানবিক কারণেই সরকার এই মিড ডে মিলের খাবার বন্ধ করেনি । বরং সেই খাদ্য সামগ্রী অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । কোরোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে সর্বত্রই টালমাটাল অবস্থা । তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি মাত্র । বাকিটা পড়ুয়াদের পরিবারের অবস্থা ও আর্থ সামাজিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল ।"