শিলিগুড়ি, 17 মে : মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে দীর্ঘ লকডাউনে অনান্য শিল্পের মতোই বিপাকে ক্ষুদ্র স্বর্ণ শিল্পও ৷ ছোট ছোট সোনার দোকান ও সোনার অলঙ্কার নির্মাণের কাজে যুক্ত অসংখ্য কারিগর নিজেদের রোজকার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন । কাজ না থাকায় অনেকেই নিজের পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন ৷
শিলিগুড়িতে প্রায় শ’তিনেক সোনার দোকান রয়েছে ৷ এছাড়াও রয়েছে কিছু বড় প্রতিষ্ঠান। গহনা তৈরির কাজে যুক্ত কারিগরের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। নিউ সিনেমা রোড, ক্ষুদিরাম পল্লিতে রয়েছে সোনার বাজার। তবে সেই সব বাজারে এখন শোনা যায়না স্যাকরার ঠুকঠাক ৷ পরিবর্তে শোনা যায় হাহাকার ৷ সোনা গলানোর শ্রমিক ছাড়াও, সোনা কাটা, পালিশ, নকশার কাজ, মিনা করা প্রভৃতি কাজে যুক্ত শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন তাঁরা প্রাত্যহিক কাজের বিনিময়ে মজুরি পেতেন । তা দিয়েই চলত সংসার । কিন্তু এখন আর কাজ নেই । তাই সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে ৷
সোনা গলানোর কাজে যুক্ত থাকেন মহারাষ্ট্র থেকে আসা শ'খানেক কারিগর । এরপর তা কেটে গহনার প্রাথমিক কাজ করেন আরেক দল কারিগর। এরপর শুরু হয় গহনা তৈরি ৷ এ কাজেই যুক্ত সবচেয়ে বেশি কারিগর । প্রায় হাজার খানেক কারিগর গহনা তৈরি করেন । এরপর সোনার গহনা যায় পালিশ হতে। তারপর তা দোকানে বিক্রি করা হয় ।
বৈশাখ মাস বিয়ের মরশুম ৷ তাই গহনা চাহিদা থাকে বেশি ৷ কিন্তু দেশজুড়ে চলছে দীর্ঘ লকডাউন ৷ তাই বন্ধ রাখতে হয়েছে দোকান৷ তাছাড়া বাতিল হয়েছে বহু বিবাহ ৷ তাই সোনার গহনার চাহিদা নেই বাজারে ৷ দোকান খুললেও যে মানুষ গহনা কিনতে আসবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ৷
নিউ সিনেমা রোডে দেখা গেছে, কারখানা বন্ধ থাকায় সোনার দোকানের বাইরে মুড়ি বিক্রি করছেন এক কারিগর । অন্য এক কারিগর বিক্রি করছেন চা-পাতা, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি । তারা জানান, ‘‘কারখানা বন্ধ । প্রত্যহ মজুরি সিস্টেমে কাজ করতাম এই এলাকার প্রায় পাঁচশো কারিগর । অর্ডার না থাকায় কাজ নেই । ক’দিন এভাবে চলবে । কারখানা মালিকেরা কেউ টাকা দিতে চাইছেন না। সোনার দোকানগুলো থেকে অর্ডার আসছে না। তাই সংসার চালাতে ডালা নিয়ে বসেছি। মূলত গহনার কাজই শিখেছি। আপাতত, বাজারে মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করছি। যে দু’পয়সা আসছে তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছি ।