শিলিগুড়ি, 23 ফেব্রুয়ারি: হাতির হানায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর (Madhyamik Examinee Death) ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee saddened)। তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফর শেষ করে বৃহস্পতিবার কলকাতা ফেরার পথে উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওই ছাত্রের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি (Mamata Copter Gesture)।
মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী: মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি ওই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত । শুধু তাই নয় । পরিবারকে সমবেদনা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদীদের নির্দেশ দিয়েছেন মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ।
মৃতের পরিবারের পাশে মমতা: মৃতের মায়ের শারীরিক পরিস্থিতির কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, তিনি বলেন, "শুনেছি মৃতের মা অজ্ঞান রয়েছেন । আমি বলেছি পরিবারের লোক রাজি থাকলে এয়ার এম্বুলেন্স করে কলকাতায় নিয়ে যেতে । এসএসকেএমে আইসিসিইউ তৈরি রাখতে বলেছি ।" এরপরই তিনি জানান, তিনি যে হেলিকপ্টারে করে মেঘালয় গিয়েছিলেন, সেই হেলিকপ্টার সেখানেই রেখে দিতে বলেছেন । প্রয়োজনে সেই হেলিকপ্টারে করে মৃত ছাত্রের মাকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে । সঙ্গে থাকা মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে গোটা বিষয়টি মনিটরিং করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী ।
গ্রিন ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে তোপ মমতার: তবে এই ঘটনার জন্য উত্তরবঙ্গে হাতির সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়াকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি গ্রিন ট্রাইবুনাল হাতির সংখ্যা রোধে কোনওরকম পদক্ষেপ করছে না বলেও জানান তিনি । এছাড়াও এ দিন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমস্ত বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের আসন্ন পরীক্ষার জন্য আগাম শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী ।
যা বললেন মুখ্যমন্ত্রী: এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "খুবই মর্মান্তিক ঘটনা । সকালে খবরটা শোনার পর থেকে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে । জীবনের প্রথম পরীক্ষায় যাওয়ার আগে এই ধাক্কা । এটা আমাদের হাতে নেই । আমরা চেষ্টা করেছিলাম একটা সীমার মধ্যে রাখার । কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করার কোনও সিদ্ধান্ত পরিবেশবিদ বা গ্রিন ট্রাইবুনাল নিতে পারেনি । নেপাল ও বাংলাদেশ অন্য কায়দায় ওই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে । ঝাড়খণ্ড ও আমরা পারি না । দল বেঁধে থাকলে এই সমস্যা হয় না । কিন্তু দলছুট হলেই তখন তার মাথা ঠিক থাকে না, তখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে ।"
আরও পড়ুন: দেওয়া হল না মাধ্যমিক, পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বুনো হাতির হামলায় মৃত ছাত্র
বন সংলগ্ন এলাকার পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস: এরপরই ওই সমস্যা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে তিনি শিক্ষা দফতরকে বলেছেন যে, প্রয়োজন হলে বন সংলগ্ন এলাকায় যেসব পরীক্ষার্থীরা থাকে তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে । যাতে তাদের পায়ে হেঁটে যেতে না হয় । বন দফতর ও পুলিশকে আগে থেকে নজর রাখার পরামর্শ দেন মমতা । প্রসঙ্গত, গজলডোবার মহারাজ ঘাট এলাকায় বাবার সঙ্গে যাওয়ার সময় আচমকা হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় অর্জুনকুমার দাসের ।
পাহাড় বনধ নিয়ে প্রতিক্রিয়া: পাহাড়ের বনধ নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বনধের রাজনীতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করেছি অনেক দিন আগেই । 11 বছর আগেই পলিসি নিয়ে বন্ধ করেছি । কারণ উন্নয়ন যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, রাস্তা বন্ধ হলে চলে না । আমি একা চলব এটা হতে পারে না । যার জন্য আমি আমার গাড়ি সামনে এলেও ট্রাফিক আটকাতে মানা করি । যদি কেউ করেন আবার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদক্ষেপ করি । বাংলা যেভাবে উন্নয়নের জন্য এগিয়ে চলেছে সেটা মানুষের জন্য । দশটা লোক মিলে রাস্তা বন্ধ করব আর হাজারটা মানুষ আটকে থাকবে তা চলতে পারে না ।"
এরপর নিজের সভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতরের অনুমতি নিয়ে ইন্ডোরে সভা করেছেন । সেটা একটা ঐতিহাসিক দিন ছিল বলে সেখানে সভা করা হয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ।