শিলিগুড়ি, 23 সেপ্টেম্বর : 24 অগাস্ট শিলিগুড়ির মুথুট ফিনান্স থেকে 10 কোটি টাকার সোনার গয়না লুট হয় ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে উঠে এল নতুন তথ্য ৷ একটি ফোন কলের সূত্র ধরে ওড়িশা যায় স্পেশাল টিমের সদস্যরা । সে রাজ্যের পুলিশের সাহায্য নিয়ে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের হাতে যে তথ্য উঠে এসেছে, সেই মোতাবেক ধৃতদের সঙ্গে মাওবাদী সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মির যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
অশোক মাঝি, সনাতন কেরি, অশোকচন্দ্র মেহের, দিলেশ্বর মেহের ও ক্ষীরোদচন্দ্র বল নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । পুলিশ সূত্রে খবর, অশোকচন্দ্র মেহের ও দিলেশ্বর সম্পর্কে দুই ভাই । ওড়িশার সম্বলপুরে একটি মোবাইলের দোকান চালায় তারা । ওই দোকান থেকেই এক লাখ টাকা দিয়ে বিনা নথিতে সিম কার্ড কেনে অশোক মাঝি । তা 4 লাখ টাকার বিনিমিয়ে সনাতন কেরি ও ক্ষীরোদচন্দ্র বলকে দিয়ে দেয় । পুলিশ জানাচ্ছে, ওই সিমকার্ড শিলিগুড়িতে অ্যাক্টিভ ছিল । ডাকাতির দিন তা শিলিগুড়ির বর্ধমান রোড এলাকায় ছিল । পরে তার অবস্থান ছিল ওড়িশায় ৷ এই পাঁচজন বাগডোগরায় বাড়িভাড়া নিয়েছিল বলেও জানিয়েছে পুলিশ ৷
স্পেশাল টিমের সদস্যরা এখনও সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত নন ৷ তবে প্রাথমিকভাবে কিছু প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে ৷ অনুমান, ধৃতদের সঙ্গে ওড়িশার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করা পিপলস লিবারেশন আর্মির যোগাযোগ ছিল । রেইকি করে ডাকাতি করা, পরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা নিয়ে পালানো, সবেতেই দক্ষতার ছাপ রয়েছে ৷ এর পিছনে বড় কোনও সংগঠনের পাকা মাথা থাকতে পারে বলে মনো করা হচ্ছে । মাওবাদী সংগঠনের বিস্তারে অর্থ জোগাড় করতে ছক কষে এই ডাকাতি কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
ডাকাতির ঘটনার পর একমাস অতিক্রান্ত ৷ এখনও এক ছটাক সোনাও উদ্ধার হয়নি । পুলিশের অনুমান, সম্বলপুরের সনাতন কেরি ও জাজপুরের ক্ষীরোদচন্দ্র বলের সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির যোগাযোগ রয়েছে । তবে এই দুজন পিপলস লিবারেশন আর্মির সেকেন্ডারি ফোর্স হিসেবেই কাজ করেন । মূলত রসদ ও তহবিল জোগানোই এদের কাজ । 12 জনের দল এই ডাকাতিতে জড়িত ছিল ৷ এই তথ্য উঠে এসেছে জিজ্ঞাসাবাদে ৷ ধৃতদের জেরার পাশাপাশি ওড়িশা পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সঙ্গেও তথ্য বিনিময় করা হচ্ছে । পুরো ঘটনায় নজর রাখছে রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)।
এই বিষয়ে পুলিশের এক কর্তা জানান, "এখনই মাওবাদী তত্ত্ব নিশ্চিত নয় । আমরা আরও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখছি । তবে সিম জোগানের কাজে এরা জড়িত ছিল। পাশাপাশি দলের পাণ্ডার খোঁজও জারি থাকবে । প্রয়োজনে ফের ওড়িশায় যাবে পুলিশের বিশেষ দল । ধৃতদের জেরা করতে আসছেন CID কর্তারাও ।"
ধৃতদের গতকাল শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হলে 14 দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । তবে দলের পাণ্ডা এখনও অধরা ৷ তাহলে কি সত্যিই যোগ রয়েছে মাওবাদী সংগঠনের ? সংগঠনের বিস্তারের জন্যই কি বিপুল পরিমাণ গয়না লুট করা হয়েছে? জিজ্ঞাসাবাদ চলছে ৷