শিলিগুড়ি, 22 ফেব্রুয়ারি : লক্ষ্য গ্রামের মহিলাদের সচেতন করা । সঙ্গে গরিব বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া । যা পূরণে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাঙ্ক ও পুরোনো বইয়ের লাইব্রেরি তৈরি করে ফেলেছেন খড়গপুর IIT-র প্রাক্তনী । এতেই শেষ নয় । সেই সব বই ও ন্যাপকিন বিলি করতে নিজেদের কাজের সময় বাদে বাকি সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান গবেষক অনির্বাণ নন্দী ও তাঁর স্ত্রী পৌলমী চাকি নন্দী ।
এমন ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে 2017 সালে । তারপর তাঁরা তৈরি করেন একটি ওয়েবসাইট । যেখানে সকলকে আবেদন জানান স্যানিটারি ন্যাপকিন ও পুরোনো বই স্বেচ্ছায় জমা দেওয়ার জন্য । আর তাঁদের সঙ্গে কেউ এই কাজে যোগ দিতে চাইলে তিনিও এই ওয়েবসাইটে আবেদন জানাতে পারেন । আর সেই থেকেই শুরু যাত্রা ।
শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় থাকেন অনির্বাণ নন্দী। এই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানান, গবেষণার কাজে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখেছেন ঋতুমতী হয়ে মেয়েরা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় । বইয়ের অভাবে পড়তে পারে না বহু ছাত্র । 2017 সালে মাথায় ভাবনা আসে এদের জন্য কিছু একটা করার । একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানেই শহরের বাসিন্দাদের আবেদন জানান তাঁরা । আবেদন ছিল বাড়িতে পুরনো বই থাকলে অথবা কেউ স্যানিটারি ন্যাপকিন স্বেচ্ছায় দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে যোগ দিতে চাইলে তাদেরও স্বাগত । তারপর বহু মানুষ এগিয়ে এসে তাদের পাশে দাঁড়ান । তাঁর কথায়, কেউ 10টা ন্যাপকিন দেন, কেউ আবার একটা বই দিতে চান । আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের নাম, ঠিকানা আর কি দেবেন এবং কত পরিমাণে দেবেন জানালেই হল । আমরাই গিয়ে সংগ্রহ করে আনি । তারপর গ্রামে গ্রামে সেসব বিলি হয় এক্কেবারে বিনামূল্যে ।
তাঁরা কি শিলিগুড়ির প্যাডম্যান? প্রশ্ন শুনে লাজুক হেসে তাঁরা বলেন, ''গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করা, সচেতন করাতেই আমাদের আনন্দ । তাই সারা মাস ধরে যে দাতারা ন্যাপকিন দিতে চান । তাঁদের কাছ থেকে সেসব নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়াই । একই সাথে সেসময়ে মহিলাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য কী কী বই প্রয়োজন তার তালিকাও সংগ্রহ করে আনি । চাহিদার বইগুলো নতুন বা পুরোনো, কারও কাছে থাকলে তারা তা দিতে চান কি না জানতে চেয়ে ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দি । মিলেও যায় অনেকসময় । এভাবেই এগিয়ে চলছি আমরা । ''
প্রথম প্রথম লোকের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন চেয়ে আবদার করে বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়েছে অনির্বাণ ও পৌলমীদের । নতুন নতুন গ্রামে গিয়ে যুবতি ও মহিলাদের কাছে টেনে এনে ন্যাপকিন হাতে তুলে দিতে কম কাঠখড় পোয়াতে হয়নি । কিন্তু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আশেপাশের কয়েকশো গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে এখন নিত্য যোগাযোগ গড়ে উঠেছে পৌলমিদের । এই দম্পতি জানিয়েছে, সুষ্ঠভাবে কাজ সারতে আমরা দু'জন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী আমাদের সাথে এসেছেন । সবাই মিলে খুলে ফেলা হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । গ্রাম ও শহরের মহিলাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে ও দুস্থ ছেলেমেয়েদের জন্যে পুরানো বই এর লাইব্রেরি গ্রামে গ্রামে ছুটছেন অনির্বাণ পৌলমিরা ।