শিলিগুড়ি, 1 ডিসেম্বর: লাম্পি ভাইরাসের (Lumpy Virus) সংক্রমণে গবাদি পশুর মৃত্যু মহামারির আকার ধারণ করেছে (Siliguri news)। গোটা দেশের একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও লাম্পি ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ঘুম উড়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের । তবে শীতকালে কিছুটা হলেও সংক্রমণ নিচের দিকে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন পশু বিশেষজ্ঞরা (Cattle dies in Lumpy Virus)। কিন্তু ওই ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে নির্দিষ্ট কোনও ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে । তবে ওই ভাইরাসে সংক্রমণ গবাদি পশু থেকে বন্যপ্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে প্রশাসনের ।
কেন্দ্রীয় সমীক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত লাম্পি ভাইরাস গবাদি পশুর ক্ষেত্রে মহামারির আকার ধারণ করে । দেশের 15টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের 253টি জেলার প্রায় 21.5 লক্ষ গবাদিপশু লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত ৷ মৃত্যু হয়েছে 1 লক্ষ 11 হাজার 564টি গরুর । অগস্ট মাসে ওই ভাইরাস 165টি জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়েছিল । বিপজ্জনক রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি ও বিহার রয়েছে । যদিও প্রায় 21 লক্ষ লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গবাদিপশুর মধ্যে 13 লক্ষ 21 হাজার প্রাণীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে । ওই ভাইরাসের সংক্রমণের সিংহভাগই রয়েছে রাজস্থানে । চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এখনও পর্যন্ত ওই ভাইরাসে সংক্রমণের ফলে 523টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে । রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ওই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা 4 হাজার 267টি গবাদি পশু ।
পশু স্বাস্থ্য চিকিৎসা সূত্রে জানা গিয়েছে, লাম্পি ভাইরাস মূলত গরু, মহিষ জাতীয় গবাদি প্রাণীকে আক্রমণ করে থাকে । মশা, মাছি বা রক্ত শোষণ করা পোকা ওই রোগের ভাইরাসের বাহকের কাজ করে । রোগে আক্রান্ত হলে প্রাণীর গায়ে বড় বড় ফোসকা পরে এবং পরে তা ফেটে গিয়ে পুঁজ-রক্ত বের হয় । যার ফলে প্রাণীর জ্বর আসে, সারা গায়ে ব্যাথা অনুভব হয় । দুধ উৎপাদন ক্ষমতা শূন্য হয়ে যায় । বড় গবাদি পশু কিছুদিন বাঁচলেও বাছুরের মৃত্যু হয় । কোনও কোনও সময় গর্ভবতী প্রাণীর শিশুর মৃত্যু ঘটে । সেই ক্ষেত্রে আক্রান্ত প্রাণীটিকে দ্রুত আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা ।
আরও পড়ুন: 48500 বছরের পুরনো জম্বি ভাইরাসের হদিশ রাশিয়ায়, ফের প্যানডেমিকের আশঙ্কা
প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের শিলিগুড়ির সহকারী অধিকর্তা দিলীপ পাত্র বলেন, "রাজ্যে ওই ভাইরাসের প্রকোপ যথেষ্ট রয়েছে । তবে উত্তরবঙ্গে কিছুটা কম । গোটা দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে । আর এই ভাইরাসের ফলে আক্রান্ত গবাদি পশু থেকে বন্যপ্রাণীরও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে ।"
পশু চিকিৎসক ও ভেটেরিনারি অফিসার হিমাদ্রিশেখর রায় বলেন, "কোনও প্রাণী ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত আইসোলেশনে রাখতে হবে যাতে অন্য কোনও প্রাণী আর সংক্রমিত না হয় ।" আরেক ভেটেরিনারি অফিসার বাপন আরশ বলেন, "এই ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষেধক নেই । তবে মৃত্যুর হারও এই রোগে অনেকটা কম ।"