শিলিগুড়ি, 5 মার্চ: আসছে বসন্ত উৎসব বা দোল। রঙের উৎসবে মেতে উঠবে দেশ। তবে রং নিয়ে বরাবরই দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয় মানুষদের। কিন্তু রং যদি হয় ভেষজ। কারণ গত কয়েক বছরে বাড়ছে ভেষজ রঙের চাহিদা। কিন্তু ধরুন দোলের রং যদি তৈরি হয় অন্য সামগ্রী দিয়ে। যেমন ধরুন পালং শাক থেকে সবুজ, গাজর দিয়ে কমলা, গাঁদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে হলুদ (Herbal Abir Made with Vegetables) । শুনে অবাক হচ্ছেন! না আশ্চর্যের কিছুই নেই। এমনই জিনিস দিয়ে দোলের আবির তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন শিলিগুড়ির মহিলারা।
অনেকেরই রাসায়নিক রঙে ভয়। পাছে ত্বকে যদি কোনও সংক্রমণ হয়। ফলে অনেকেই দোলের দিন নিজেকে সকলের থেকে আড়ালে রাখেন। যে কারণেই বেড়েছে ভেষজ আবিরের চাহিদা। সেই আবির বিক্রি করে নিজেদের স্বনির্ভর করছেন তাঁরা। চাহিদাও দারুণ। তাঁদের আবির তৈরির কথা শুনে 50 কেজি সেই ভেষজ আবিরের অর্ডার দিয়েছেন খোদ বিএসএসএফের ডিজি। সেই আবির আবার পাড়ি দিচ্ছে ভিন জেলাতেও। 100 গ্রাম আবিরের দাম মাত্র 70 টাকা। আর এক কেজি নিলে থাকছে বিশেষ ছাড়। তা হল এক কেজি আবিরের দাম 300 টাকা ৷
ফুল, শাক-পাতা, বিট, গাজরের মতো সবজি দিয়ে আবির বানিয়ে তাঁক লাগিয়ে দিচ্ছেন মহিলারা। আর তাতে স্বনির্ভর হচ্ছেন তাঁরা। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন নরেশ মোড় এলাকার মহিলারা তৈরি করছেন এই ভেষজ আবির। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনিক ফাউন্ডেশন টিম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ৷ শুধু শিলিগুড়ি নয়, শহর সংলগ্ন আরও বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের স্বনির্ভর করতে এরকম প্রশিক্ষণ তাঁরা দিয়ে চলেছেন। গাঁদা ফুল, পালং শাক, হলুদ, বিট ইত্যাদি ভেষজ শাকসবজি, ফুল দিয়ে সেগুলিকে পিষে তার থেকে রস বের করে সেটিকে কর্নফ্লাওয়ার এবং তেলকাম পাউডার দিয়ে মিশিয়ে ওই ভেষজ আবির বাড়িতেই তৈরি করার প্রশিক্ষণ তাঁরা দেন ৷
আরও পড়ুন: দোলের আগে ভেষজ আবির তৈরিতে ব্যস্ত স্বর্নিভর গোষ্ঠীর মহিলারা, দেখছেন আয়ের মুখও
তারপর সেগুলিকে রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করছেন ৷ এই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য অর্পিতা সিংহ বলেন, "এই ধরনের আবির ব্যবহারে চামড়া, চোখ বা শরীরে কোনওরকম ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। পাড়ার 8 থেকে 10 জন মহিলা মিলে গড়ে তুলেছেন এই গোষ্ঠী। তাঁরা নিজেরা মিলে এই আবির তৈরি করছেন। এই আবির তৈরি হওয়ার পর সেগুলি বিক্রির জন্য নিজের এলাকা তো বটেই, সেই ভেষজ আবির এবার পৌঁছে যাবে ইসলামপুর, বিধাননগর, জলপাইগুড়ি, ও কোচবিহারের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ৷"
পুষ্পা যাদব বলেন, "ভেষজ আবিরের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ৷ আমাদের আবিরের গুণগত মানও যথেষ্ট ভালো ৷ ফলে আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ডার আসতে শুরু করেছে। এবার 100 গ্রাম থেকে 1 কেজি পর্যন্ত প্যাকেট করা হবে ৷ আমরা এই সমস্ত আবিরগুলি মাটির তৈরি হাঁড়িতে, মাটির তৈরি গ্লাসে করে বিক্রি করি।" মিষ্টু সাহা বলেন, "যে আমরা তো ঘরের কাজকর্মই করি, এই আবির যদি ঘরে বসেই বানাতে পারি এবং সেটা বাজারজাত করা হয় তাহলে সেখান থেকে আমাদের দু'টো পয়সাও রোজগার হবে এবং আমরা স্বনির্ভর হয়ে উঠব।"