দার্জিলিং, 4 মে: এবার সিপিএম-কংগ্রেসের দেখানো পথেই পাহাড়ে এগোচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আর কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি)। সমতলে যেমন বারবার সমঝোতার পথে হেঁটেছে বাম-কংগ্রেস, সেই মতোই জোট করেই পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করতে চাইছে মোর্চা এবং কেপিপি ৷ পাশাপাশি জোটে আদিবাসী সংগঠনগুলিকে সামিল করা হবে বলেও জানিয়েছে দুই শিবির ৷ এখানেই শেষ নয়, মোর্চা এক ধাপ এগিয়ে স্পষ্টতই জানিয়েছে, পাহাড়ে অনীত থাপা এবং তৃণমূল বিরোধী সব দলের সঙ্গেই হাত মেলাতে তারা প্রস্তুত ৷
তবে কি এবার নতুন সমীকরণের উত্থান পাহাড়-সহ তরাই ডুয়ার্সের রাজনীতিতে? জোট নাকি আসন সমঝোতার পথে যাচ্ছে ওই দুই রাজনৈতিক দল ! একের পর এক ভোটে হার, জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন, আন্দোলন বিমুখ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং কেপিপি কি পাহাড়ে ফের একবার নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে চাইছে জোট করে ? এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে দুই শিবিরের নেতাদের চালচলনে ৷ রাজনৈতিকমহলের দাবি, সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপরই 24-এর লোকসভা ভোট। আর এই দুই নির্বাচনের আগে নিজেদের অস্তিত্ব বাচাঁতে নতুন পন্থা অবলম্বন করছে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও অতুল রায়ের কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি। জানা গিয়েছে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে এবার জোট বাঁধতে চলেছে কামতাপুর প্রোগেসিভ পার্টি (কেপিপি)। শুধু তাই নয়, এবার সেই জোটে আদিবাসী সংগঠনগুলিকেও সামিল করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে ওই দুই শিবির।
ইতিমধ্যে প্রথম দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক সেরেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও কেপিপি নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং, রোশন গিরিরাও। অন্যদিকে কেপিপি'র তরফে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি অমিত রায়, সহ-সভাপতি বুধারু রায়-সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার কেপিপি'র সম্পাদক অমিত রায় বলেন, "আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছি। এবার নির্বাচনে আমরা একসঙ্গেই লড়াই করব তা একরকম চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তবে কীভাবে আসন সমঝোতা হবে তা আগামীদিনে আলোচনা করে দেখা হবে।" তিনি আরও বলেন, "এরপর আমরা আদিবাসীদের নিয়ে বৈঠক করব। আমাদের লক্ষ্য রাজবংশী, গোর্খা ও আদিবাসী তিনটি জাতি একসঙ্গে নির্বাচনে লড়াই করবে।"
অন্যদিকে, বৈঠকে উত্তরবঙ্গের পৃথক রাজ্য নিয়েও দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। তবে, রাজ্যে ভোটের আগে কোনও দলই আন্দোলনের পথে নামছে না বলেও জানান কেপিপি নেতা। এদিন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য পাহাড় তরাই আর ডুয়ার্সের উন্নয়ন। আর আমরা পাহাড়ে অনীত থাপা ও তৃণমূল বিরোধী সব দলের সঙ্গে জোট করতে রাজি আছি।" মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে হার। পরে জিটিএ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পাহাড়ে প্রায় অস্তিত্ব হারানোর পথে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তাই অস্তিত্ব বাঁচাতে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বিমল-রোশনরা। এই কারণে তারা অনীত ও তৃণমূল বিরোধী যে কোনও দলের সঙ্গে জোট করতে তারা প্রস্তুত।
অন্যদিকে, তাদের সঙ্গে জোটে সায় দিয়েছে অজয় এডওয়ার্ডয়ের হামরো পার্টিও। তবে তরাই ও ডুয়ার্সে তাদের ক্ষমতা কম থাকায় এবার তারা কেপিপি'র শরণাপন্ন হয়েছে। তরাই-ডুয়ার্স ও চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় কেপিপি ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সঙ্গে জোট করতে চায় মোর্চা এবং হামরো পার্টি। সম্প্রতি ফাঁসিদেওয়া ব্লকের কদমতলায় এ বিষয়ে গোপন বৈঠকও সেরেছে কেপিপি ও মোর্চা ৷ আলোচনা হয়েছে, তরাই ও ডুয়ার্সে যার যেখানে সংগঠন শক্তিশালী তারা সেখানে প্রার্থী দেবে। বাকিরা সেই প্রার্থীকে সমর্থন করবে। চলতি মাসেই হামরো পার্টি, মোর্চা, কেপিপি ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সঙ্গে শালুগাড়ায় বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ছুটি কাটাতে টাইগার হিল যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? মাথায় রাখুন নয়া নির্দেশিকাগুলি...