ETV Bharat / state

সাতটি নদীর জল নিয়ে এসে পুজো হয় শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়িতে

author img

By

Published : Sep 2, 2020, 10:08 PM IST

Updated : Oct 3, 2020, 12:51 PM IST

100 বছরের পুরানো পুজো ৷ কিন্তু ওপার বাংলা ছেড়ে চলে আসার পর বন্ধ হয়ে গেছিল ৷ 2015 সালে ফের নতুন উদ্যমে শতাব্দী প্রাচীন রীতি মেনে পুজো চালু করেন শিলিগুড়ি নিবাসী বর্তমান উত্তরসূরি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী ৷

Durga puja of chakraborty bari in siliguri deshbandhu para
শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়ির পুজো

শিলিগুড়ি, 2 সেপ্টেম্বর : শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজো ৷ এপার বাংলায় বয়স মাত্র 6 বছর হলেও, সব মিলিয়ে 100 বছরেরও পুরানো এই পুজো ৷ ওপার বাংলায় বেশ ধুমধামের সঙ্গেই উমা আরাধনায় মাততেন পরিবারের পূর্বপুরুষরা ৷

চক্রবর্তীদের আদি বাড়ি ওপার বাংলার ঢাকার বিক্রমপুর সংলগ্ন বাঘড়া এলাকায় ৷ দেশভাগের সময় ভিটেমাটি ছেড়ে এপারে চলে আসেন পরিবারের পূর্বপুরুষরা ৷ প্রথমে হুগলি, পরে শিলিগুড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ৷ মাঝখানে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর ৷ নানা কারণে বন্ধ ছিল পুজো ৷

2015 সালে ফের নতুন উদ্যমে পুজো শুরু করেন শিলিগুড়ি নিবাসী পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী ৷ পেশায় আইনজীবী, পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৷ এলাকায় পরিবেশপ্রেমী হিসেবেও যথেষ্ট নাম-ডাক আছে তাঁর ৷ জানান, শতাব্দী প্রাচীন রীতি মেনেই দুর্গাপুজোর সমস্ত আয়োজন করা হয় ৷ প্রথা মেনে ডাকের সাজের একচালা প্রতিমার পুজো করা হয় । বলেন, "100 বছরেরও আগে বাংলাদেশের বাঘড়া গ্রামে এই পুজো হত ৷ আমার এক ঠাকুরদার বাবার ডায়েরি থেকে পুজোর বিষয়টি জানতে পারি ৷ সেখানে সবিস্তারে পুরোটা রয়েছে ৷ বাঘড়া গ্রামে নাকি ত্রিশ ফুট উঁচু নাটমন্দির ছিল ৷ সেখানে পুজো হত ৷ চারদিন ধরে গ্রামের মানুষ একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতেন ৷ সেই সময় পুজোয় মোষ বলি পর্যন্ত দেওয়া হত ৷ সেই পুজোটাই দেশবন্ধু পাড়ার বাড়িতে আমরা 6 বছর ধরে করছি ৷" এখনকার পুজোয় পুরানো সেই রীতিনীতি সবটাই মানার চেষ্টা করা হয় বলে জানান দীপজ্যোতিবাবু ৷ বলেন, "গঙ্গা, মানস, তিস্তা এরকম সাতটা নদীর জল নিয়ে এসে পুজো করা হয় ৷ " দীপজ্যোতিবাবুর স্ত্রী শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "আমাদের পুজো মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় ৷ আগামনীর গান, নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা হয় ৷ আমরা কিছুটা রামকৃষ্ণ মিশনের নিয়ম অনুসরণ করে পুজো করি ৷ শুধু কুমারী পুজো করি না ৷ "

বাড়ির পুজো, কিন্তু পাড়ার সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোয় অংশগ্রহণ করেন বলে জানান চক্রবর্তী দম্পতি ৷ চারদিন বাড়ির পুজো নয়, মনে হয় বারোয়ারি পুজো, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "পুজোয় শামিল হতে বাংলাদেশ থেকে আত্মীয়রা আসেন ৷ এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পরিবারের যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও আসেন ৷ এখন এটা আর শুধু বাড়ির পুজো নেই ৷ সর্বজনীন পুজো হয়ে গেছে ৷ পুজোর চারদিনই ভোগের প্রসাদ নিতে কয়েক'শো মানুষ আসেন ৷ হয়ত তার মধ্যে নিমন্ত্রিত অতিথি থাকেন 20 শতাংশ ৷ বাকি যাঁরা আসেন তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসেন ৷ আর এটাই আমার বিরাট পাওনা ৷ " শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "পঞ্চমী থেকে দশমী কীভাবে কাটে আমরা টের পাই না ৷ সকাল 5 টা থেকে শুরু হয় ব্যস্ততা ৷ রাত 12টা কখনও 1 টা পর্যন্তও চলে ৷ আমরা একা পুজোর কাজ করি না, পাড়ার সবাই আসেন ৷ পুজোর কাজে হাত লাগান ৷ "

ফি বছর পুজোয় থাকে কোনও না কোনও থিম ৷ থাকে সামাজিক বার্তাও ৷ কখনো প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতার বার্তা, কখনওবা পরিবেশ দূষণ নিয়ে ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "বাড়ির পুজোর কোনও থিম হয় বলে আমার জানা নেই ৷ তবে গতবার আমাদের পুজোর থিম ছিল 'প্লাস্টিক বর্জন করুন' ৷ এই সংক্রান্ত পোস্টার প্যান্ডেল ও পাড়ায় সাঁটিয়ে ছিলাম ৷ পাশাপাশি কয়েক'শো গাছের চারাও বিতরণ করেছিলাম ৷ "

শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজো

এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে পুজো হবে কি না তা নিয়ে শুরুতে সংশয় ছিল ৷ তবে শ্রাবণী চক্রবর্তী জানান, আড়ম্বর না হলেও রীতি মেনে পুজো হবে ৷ ঘট পুজো নাকি মূর্তি পুজো সে নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি চক্রবর্তী দম্পতি ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "পুজো হবে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত প্রতিমার অর্ডার দেওয়া হয়নি ৷ কারণ, প্রতিমার অর্ডার দিলে বিসর্জনের একটা ব্যাপার থাকে ৷ বিসর্জনে ভিড় হয় ৷ কিন্তু এবছর কোরোনা গাইডলাইন মেনে সেই বিষয়টি কীভাবে হবে সেটা বুঝতে পারছি না ৷ তাই এখনও ঠিক করিনি যে ঘট পুজোই করব নাকি মূর্তি পুজো ৷ আগামী 7 থেকে 8 দিনের মধ্যে এটা নিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব ৷ " তবে ঘট বা মূর্তি পুজো যাই হোক না কেন কোরোনা সংক্রান্ত সরকারি গাইডলাইন মেনেই হবে ৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানান দীপজ্যোতিবাবু ৷ শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "মন খারাপ লাগছে ঠিকই ৷ তবে পুজো হবে ৷ নিয়ম সবই পালন করা হবে ৷ শুধু আড়ম্বর হবে না ৷ "

শিলিগুড়ি, 2 সেপ্টেম্বর : শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজো ৷ এপার বাংলায় বয়স মাত্র 6 বছর হলেও, সব মিলিয়ে 100 বছরেরও পুরানো এই পুজো ৷ ওপার বাংলায় বেশ ধুমধামের সঙ্গেই উমা আরাধনায় মাততেন পরিবারের পূর্বপুরুষরা ৷

চক্রবর্তীদের আদি বাড়ি ওপার বাংলার ঢাকার বিক্রমপুর সংলগ্ন বাঘড়া এলাকায় ৷ দেশভাগের সময় ভিটেমাটি ছেড়ে এপারে চলে আসেন পরিবারের পূর্বপুরুষরা ৷ প্রথমে হুগলি, পরে শিলিগুড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ৷ মাঝখানে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর ৷ নানা কারণে বন্ধ ছিল পুজো ৷

2015 সালে ফের নতুন উদ্যমে পুজো শুরু করেন শিলিগুড়ি নিবাসী পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী ৷ পেশায় আইনজীবী, পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৷ এলাকায় পরিবেশপ্রেমী হিসেবেও যথেষ্ট নাম-ডাক আছে তাঁর ৷ জানান, শতাব্দী প্রাচীন রীতি মেনেই দুর্গাপুজোর সমস্ত আয়োজন করা হয় ৷ প্রথা মেনে ডাকের সাজের একচালা প্রতিমার পুজো করা হয় । বলেন, "100 বছরেরও আগে বাংলাদেশের বাঘড়া গ্রামে এই পুজো হত ৷ আমার এক ঠাকুরদার বাবার ডায়েরি থেকে পুজোর বিষয়টি জানতে পারি ৷ সেখানে সবিস্তারে পুরোটা রয়েছে ৷ বাঘড়া গ্রামে নাকি ত্রিশ ফুট উঁচু নাটমন্দির ছিল ৷ সেখানে পুজো হত ৷ চারদিন ধরে গ্রামের মানুষ একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতেন ৷ সেই সময় পুজোয় মোষ বলি পর্যন্ত দেওয়া হত ৷ সেই পুজোটাই দেশবন্ধু পাড়ার বাড়িতে আমরা 6 বছর ধরে করছি ৷" এখনকার পুজোয় পুরানো সেই রীতিনীতি সবটাই মানার চেষ্টা করা হয় বলে জানান দীপজ্যোতিবাবু ৷ বলেন, "গঙ্গা, মানস, তিস্তা এরকম সাতটা নদীর জল নিয়ে এসে পুজো করা হয় ৷ " দীপজ্যোতিবাবুর স্ত্রী শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "আমাদের পুজো মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় ৷ আগামনীর গান, নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা হয় ৷ আমরা কিছুটা রামকৃষ্ণ মিশনের নিয়ম অনুসরণ করে পুজো করি ৷ শুধু কুমারী পুজো করি না ৷ "

বাড়ির পুজো, কিন্তু পাড়ার সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোয় অংশগ্রহণ করেন বলে জানান চক্রবর্তী দম্পতি ৷ চারদিন বাড়ির পুজো নয়, মনে হয় বারোয়ারি পুজো, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "পুজোয় শামিল হতে বাংলাদেশ থেকে আত্মীয়রা আসেন ৷ এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পরিবারের যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও আসেন ৷ এখন এটা আর শুধু বাড়ির পুজো নেই ৷ সর্বজনীন পুজো হয়ে গেছে ৷ পুজোর চারদিনই ভোগের প্রসাদ নিতে কয়েক'শো মানুষ আসেন ৷ হয়ত তার মধ্যে নিমন্ত্রিত অতিথি থাকেন 20 শতাংশ ৷ বাকি যাঁরা আসেন তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসেন ৷ আর এটাই আমার বিরাট পাওনা ৷ " শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "পঞ্চমী থেকে দশমী কীভাবে কাটে আমরা টের পাই না ৷ সকাল 5 টা থেকে শুরু হয় ব্যস্ততা ৷ রাত 12টা কখনও 1 টা পর্যন্তও চলে ৷ আমরা একা পুজোর কাজ করি না, পাড়ার সবাই আসেন ৷ পুজোর কাজে হাত লাগান ৷ "

ফি বছর পুজোয় থাকে কোনও না কোনও থিম ৷ থাকে সামাজিক বার্তাও ৷ কখনো প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতার বার্তা, কখনওবা পরিবেশ দূষণ নিয়ে ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "বাড়ির পুজোর কোনও থিম হয় বলে আমার জানা নেই ৷ তবে গতবার আমাদের পুজোর থিম ছিল 'প্লাস্টিক বর্জন করুন' ৷ এই সংক্রান্ত পোস্টার প্যান্ডেল ও পাড়ায় সাঁটিয়ে ছিলাম ৷ পাশাপাশি কয়েক'শো গাছের চারাও বিতরণ করেছিলাম ৷ "

শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজো

এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে পুজো হবে কি না তা নিয়ে শুরুতে সংশয় ছিল ৷ তবে শ্রাবণী চক্রবর্তী জানান, আড়ম্বর না হলেও রীতি মেনে পুজো হবে ৷ ঘট পুজো নাকি মূর্তি পুজো সে নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি চক্রবর্তী দম্পতি ৷ দীপজ্যোতিবাবু বলেন, "পুজো হবে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত প্রতিমার অর্ডার দেওয়া হয়নি ৷ কারণ, প্রতিমার অর্ডার দিলে বিসর্জনের একটা ব্যাপার থাকে ৷ বিসর্জনে ভিড় হয় ৷ কিন্তু এবছর কোরোনা গাইডলাইন মেনে সেই বিষয়টি কীভাবে হবে সেটা বুঝতে পারছি না ৷ তাই এখনও ঠিক করিনি যে ঘট পুজোই করব নাকি মূর্তি পুজো ৷ আগামী 7 থেকে 8 দিনের মধ্যে এটা নিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব ৷ " তবে ঘট বা মূর্তি পুজো যাই হোক না কেন কোরোনা সংক্রান্ত সরকারি গাইডলাইন মেনেই হবে ৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানান দীপজ্যোতিবাবু ৷ শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, "মন খারাপ লাগছে ঠিকই ৷ তবে পুজো হবে ৷ নিয়ম সবই পালন করা হবে ৷ শুধু আড়ম্বর হবে না ৷ "

Last Updated : Oct 3, 2020, 12:51 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.