কার্শিয়াং, 27 অক্টোবর : পাহাড়ের উন্নয়নে এবার অনিত-রোশনদের কোর্টেই বল ঠেলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার কার্শিয়াংয়ের টাউনহলে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক আয়োজিত হয় । বৈঠকে পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সুপ্রিমো অনিত থাপা এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ।
বৈঠকে পাহাড়ের উন্নয়নে ওই দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গড়ে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে পাহাড়ে উন্নয়নের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । আমি যা বলি, তাই করি । প্রাক্তন বিধায়ক অমর সিংহ রাই, অনিত থাপা, রোশন গিরি এবং গৌতম দেবকে নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করা হবে । ওই কমিটি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমাকে পাহাড়ের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে ।"
রাজ্যে ঘাসফুল শিবির ক্ষমতায় এলেও পাহাড় দখল করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস । লোকসভা নির্বাচনে পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের ক্ষমতা হাতে ধরে রেখেছে গেরুয়া শিবির । সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, "এই যে একটা রাজনৈতিক দল প্রতিবার পাহাড়ে আসে । কোনও কাজ করে না । খালি অশান্তির সৃষ্টি করে । আর নির্বাচনে একটা করে সাংসদ জিতে নিয়ে চলে যায় । আর বিভেদের রাজনীতি করে চলছে । কিন্তু আমি রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে উন্নয়নমূলক রাজনীতি করতে চাই ।"
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: "পাহাড়ে আমরা সবাই এক", প্রশাসনিক বৈঠকে প্রকাশ্যে শান্তা ছেত্রীকে ধমক মুখ্যমন্ত্রীর
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রোশন গিরি বলেন, "পাহাড়ের উন্নয়নে এখন একসঙ্গে কাজ করব ।" তিনি জানান, 2001-এর পর থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়নি ৷ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে ৷ রোশন গিরি বলেন, "এখন আমরা দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চাইছি ৷ যাতে প্রত্যন্ত গ্রামে দুঃস্থ মানুষরা পঞ্চায়েতের সুবিধে পেতে পারে ৷" চা বাগান ও সিনকোনা প্ল্যান্টেশনের শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন পাহাড়ের অন্যতম নেতা ৷ রাজনীতি মতাদর্শ ভিন্ন হলেও তরাই-ডুয়ার্সে উন্নয়নের স্বার্থে অনিত থাপার সঙ্গে কাজ করতে রাজি তিনি ৷ জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী সাবঅর্ডিনেট সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড গড়ে 4 হাজারের বেশি শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে ৷ স্কুল সার্ভিস কমিশন বানিয়ে সেখানে নিয়োগ, কলেজ সার্ভিস কমিশন বানিয়ে সেখানে লেকচারার পদে নিয়োগের কথা জানিয়েছেন তিনি ৷ কালিম্পং আর শিলিগুড়ির বিকল্প একটি জাতীয় সড়ক তৈরির প্রস্তাবও রোশন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন ৷
আরেক নেতা অনিত থাপাও একই ভাবে পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করতে মত দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের বিষয়ে খুবই সদর্থক চিন্তাভাবনা করেন ৷ আমরাও স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান চাইছি ৷ এটা পাহাড়ের ভবিষ্যতের কথা, তাই সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ৷" পাহাড়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে তবে রিপোর্ট তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন অনিত ৷ তিনি বলেন, "আমরা যা চাইছি, তা পাচ্ছি না ৷ আর সবাই ঘোরাচ্ছে ৷ আমরা বাস্তববাদী নেতা ৷ যা পাওয়া যাবে, তাই চাইব আমরা ৷" তিনি জানান পাহাড়ে বহু ছেলেমেয়ে রোজগার চাই ৷ দার্জিলিংয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়, জলের সমস্যা রয়েছে তাই রিজার্ভার দরকার ৷ জমির পাট্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের বাবা, দাদু এখানে থাকতেন ৷ কিন্তু জমির পাট্টা নেই ৷ আমরা জমির পাট্টা চাই ৷" 1986 থেকে আজ পর্যন্ত না-পাওয়া দাবিগুলোর ফলে আজ দার্জিলিং শেষ হয়ে গিয়েছে বলে আক্ষেপ করেন পাহাড়ের অন্যতম প্রধান নেতা ৷